১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘মি টু’ আন্দোলন ও রেহানা মরিয়ম নূর

‘মি টু’ আন্দোলন ও রেহানা মরিয়ম নূর -

কানে রেহানা মরিয়ম নূর চলচ্চিত্রের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হওয়ার পর থেকেই নানা আড্ডায় বারবার উঠে এসেছে একটা বিষয়। রেহানা চরিত্র বাংলাদেশে কেমন বিতর্ক তৈরি করবে? সাদ কী ভাবছেন?

দীর্ঘ দিন ধরেই যৌন নির্যাতন বিষয়টি যেকোনো সমাজেই একটি অপরাধের বদলে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয়ে এসেছে। ‘সামাজিক মূল্যবোধ’ ভিন্ন হলেও কী বাংলাদেশ, কী অ্যামেরিকা, কী ইউরোপ, সব জায়গায় সমানভাবেই এই বিষয়টিকে ‘সমাজ' নির্যাতনের শিকারদের অনেকটা চুপ থাকতে বাধ্যই করেছে।

২০১৭ সালে অ্যামেরিকায় ‘মি টু’ নামে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধে৷ অনেকের মতো হলিউড সুপার স্টাররাও ‘মি টু’, অর্থাৎ ‘আমিও’ বলে নিজের নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাকে সামনে নিয়ে এসে অন্যদেরও সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷

সরাসরি এই ‘মি টু’ আন্দোলনের সঙ্গে পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রের কোনো সংযোগ নেই৷ তবে দুটোর বিষয়বস্তুই নারীদের ওপর নির্যাতন নিয়ে এই ‘চুপ চুপ’ পরিবেশ।

৭ জুলাই প্রিমিয়ারের পর থেকে যেখানেই আড্ডায় যোগ দিচ্ছি, রেহানা ও তার আশপাশের চরিত্রদের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে৷ এমনকি নির্মাতা সাদকে নিয়েও৷

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর কলাকুশলীদের নিয়ে শুক্রবার প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ৷

কিছু প্রশ্ন উঠেছে৷ যেমন, রেহানা প্রায় সারাক্ষণ এত রাগী রাগী কেন! মেয়েরা কি সবসময়ই এমন হয়? পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে বা অন্য কোনো নিয়ম বহির্ভূত সুবিধা পেতে কোনো শিক্ষার্থী যদি শিক্ষকের কক্ষে যায় এবং সেখানে নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে সেটা কার দোষ?

এই প্রশ্নগুলো এমনিতেই আমাদের সমাজে সবসময় রয়েছে৷ যেকোনো নির্যাতনের ঘটনাতেই অপরাধের ঘটনা ছাপিয়ে আগে মেয়েটি কেমন, তার চরিত্র, পোশাক, চলাফেরা ইত্যাদি সবকিছু আতশকাঁচের নিচে খুঁটিয়ে দেখা হয়৷ সাদও কি সেই ফাঁদে পা দিলেন?

সাদের মনের খবর জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে সাক্ষাৎকার দিতে এসে মুখে তিনি যা বললেন তা হলো, ‘আমি কিছু প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছি, ভাবনাটা তৈরি করতে চেয়েছি৷’

প্রশ্নগুলো তুলতে নির্মাতা যে সফল হয়েছেন, ফ্রান্সের কান শহরের যেকোনো রেস্টুরেন্টে আড্ডায় বসলেই বোঝা যাচ্ছে৷

তবে ‘মি টু’ আন্দোলনের পর নারী নির্যাতন ইস্যুতে পশ্চিমা সমাজের অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানের কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে৷ কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, রেহানা যেভাবে বিচার চাওয়ার জন্য অন্য চরিত্রকে জোর করছেন, নিজে মিথ্যা অভিযোগ করছেন, এগুলো ভিন্ন ভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন বিতর্ক তৈরি করবে৷

এই ব্যাপারে সাদের মন্তব্য, ‘আমি আসলে দর্শকের প্রতিক্রিয়া ভেবে সিনেমাটি তৈরি করিনি৷ আমার ব্যক্তিগত জীবনে যেসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি, রেহানার চোখ দিয়ে সেগুলোই ফুটিয়ে তুলেছি৷’

সিনেমা না দেখেই কেবল ট্রেইলার-পোস্টার-রিভিউ পড়েই বাংলাদেশে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে গেছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সেই তর্কযুদ্ধের আঁচ কান থেকেও টের পাওয়া যাচ্ছে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement