২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সালতামামি

বছরজুড়ে ই-কমার্সের বিকিকিনি বেড়েছে

-

২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনেক খাত ক্ষতির মুখে পড়লেও ই-কমার্স খাতে ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মানার কারণে প্রথাগত ব্যবসায়িক খাতসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকাশ লাভ করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা। বছরজুড়ে আলোচিত পাঁচ ই-কমার্স নিয়ে লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার

ইভ্যালি
সিইও মোহাম্মদ রাসেল
ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে দেশীয় ই-কমার্স স্টার্টআপ ‘ইভ্যালি’। প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোহাম্মদ রাসেল জানিয়েছেন গত বছরের সফলতা, চ্যালেঞ্জ এবং নতুন বছরের পরিকল্পনার গল্প।
মোহাম্মদ রাসেলের মতে, ২০২০ সালে দেশে ও বিদেশে ই-কমার্সের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। মূলত আগামী পাঁচ বছরে এই খাত যতটুকু বিকাশ করত তার অনেকখানি এই এক বছরেই হয়েছে। করোনার সময়ে শুধু ইভ্যালি না বরং প্রতিটি ই-কমার্সই শুরুর দিকে যে সঙ্কটে পড়েছে সেটি হচ্ছে পণ্য বা বিক্রেতার জোগান না থাকা। অনেক বিক্রেতাই পণ্য জোগাড় করতে না পেরে আমাদের মার্কেট প্লেসে দিতে পারেনি। আবার অনেক উৎপাদক নিয়মিতভাবে তাদের পণ্য উৎপাদন করতে পারেনি। আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর সাপ্লাই বড় ধরনের বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এসব সঙ্কটগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে অনেক অফলাইন ব্যবসায়ী অনলাইনে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম চালু করেছেন। আমাদের ইভ্যালির পক্ষ থেকে ‘এক্সপ্রেস শপ’ চালু করার পর অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সেই সাথে বাড়তি কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। বছরের শুরুতে প্রায় ১৫০ জন কর্মী থাকা ইভ্যালি এখন প্রায় সাড়ে ৮০০ সদস্যের পরিবার।
নতুন বছরে ই-কমার্স খাত সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আরো মিশে থাকুক এমনটাই চাই।

দারাজ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সৈয়দ মোস্তাহিদল হক
২০১৮ সালে আলিবাবার মতো গ্লোবাল ই-কমার্স জায়ান্ট বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশে ইনভেস্ট করেছিল কারণ তারা দেখতে পেয়েছিল এ দেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা। দেশের বাজারে ২০২০ সালে ই-কমার্সের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়েছেন দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদল হক।
২০২০ সালে করোনার প্রভাব থাকা সত্ত্বেও দারাজের নতুন গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে যখন পুরো দেশে লকডাউন শুরু হলো, তখন দারাজের সেলাররাও সবাই লকডাউনে চলে যায়। যার ফলে পণ্যের প্রাপ্যতা কমে যায়। অর্ডারের সংখ্যা ১৭% কমে যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য সরবরাহ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যও কিছুটা সময় নেয় দারাজ। উদ্যোক্তা ও বিক্রেতাদের জন্য দারাজ গত বছর শুরু করে সেলার মৈত্রী প্রোগ্রাম। যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে দারাজে সেলার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন হয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি।
২০২১ সালে দারাজ লজিস্টিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং নিয়ে কাজ করবে, যাতে করে আরো দ্রুত ডেলিভারি করা যায়। এছাড়াও কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স, সেলার এডুকেশন এবং কাস্টমার অ্যাওয়্যারনেস বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করবে দারাজ। দারাজে বর্তমানে কর্মী সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। ২০২১ সালে অতিরিক্ত ৩০০০ ডিরেক্ট কর্মী নিয়োগ দেবে দারাজ। জানুয়ারির শুরুতেই বাংলাদেশের সব জেলায় (৬৪ জেলায়) দারাজের হাব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রিয়শপ
সিইও আশিকুল আলম খান
মানুষ এখন অনেক বেশি ডিজিটালি কানেক্টেড। বর্তমানে ইন্টারনেট কানেক্টেড মানুষের বয়সের পরিধিটাও অনেক বেড়েছে। যা ই-কমার্সের জন্য অনেক বড় একটি সুযোগ। সব মিলিয়ে ২০২০ সাল ই-বিজনেসের জন্য একটি আশীর্বাদ।
প্রিয়শপ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশিকুল আলম খান জানান, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ৬৬ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমানে এর পরিমাণ ১১০ মিলিয়নের বেশি।
করোনাকালীন সময়ে প্রিয়শপ সঙ্কট ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আশিকুল জানান, প্রিয়শপ মূলত রুরাল ই-কমার্স নিয়ে কাজ করে এবং ছোট ব্যবসায়ীদের অনলাইনে নিয়ে আসার কাজ করে। করোনাকালীন সময়ে এই দিকে একটি বেশ ভালো সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কারণ এখন সবাই ডিজিটালাইজ হতে যাচ্ছে। ফলে আমরা কম ইফোর্ট দিয়ে বেশি আউটপুট পাচ্ছি। সঙ্কটের কথা বললে করোনাকালীন সময়ে ইম্পোর্ট বন্ধ ছিল, তখন বাইরের পণ্যগুলোর বেশ চাহিদা থাকলে জোগান অনেক কম ছিল।
নতুন বছরের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে গ্রাহকের সুবিধার্থে আমরা ইনভেন্টরি লিডস মডেল নিয়ে কাজ করছি যাতে করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রাহক সেবা পেতে পারে। মূলত আমরা একই দিনে ডেলিভারির লক্ষ্যে আগাচ্ছি।
নতুন বছরে ই-কমার্স খাতে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে আমাদের সবাইকে একটি স্ট্যাডার্ড মেনটেইন করার পাশাপাশি কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সে জোর দিতে হবে অনেক বেশি।

ধামাকা শপিং
সিওও সিরাজুল ইসলাম রানা
ই-কমার্স খাতে ২০২০ সালের শেষ দিকে আকর্ষণীয় অফার আর দুশ্চিন্তাহীন কেনাকাটার সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে যাত্রা করেছে ই-কমার্স প্লাটফর্ম ধামাকা শপিং ডটকম। প্রতিষ্ঠানটি সিওও সিরাজুল ইসলাম রানা বলেন, দেশীয় ই-কমার্সে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে ধামাকা। ডেলিভারির ধারণাটিকে আরো দ্রুত এবং সহজতর করতে ধামাকা প্রাইম শপ থেকে ডিসকাউন্ট মূল্যে অর্ডার দিয়ে সাথে সাথেই দোকান থেকে পণ্য বুঝে নিতে পারছেন গ্রাহক। এছাড়াও দোকান থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে না চাইলে, সেইম ডে হোম ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। গ্রাহকের নিকটস্থ প্রাইম শপ থেকে পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় গ্রোসারি, এক্সেসরিজ, মোবাইল, ইলেকট্রনিকসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। স্টোর পিক-আপ অথবা হোম ডেলিভারি, যে কোনো উপায়েই পণ্য কেনার সুযোগ থাকছে ধামাকা প্রাইম শপে। হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে নিজ এলাকায় পণ্য পাচ্ছেন একই দিনে। নিজ এরিয়া বাদে অন্য এরিয়াতে অর্ডার করলে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় থাকছে ৩-৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারি সুবিধা। সহজ কথায় ধামাকা শপিংয়ে একই সাথে অনলাইনে এবং অফলাইনে ডিসকাউন্টে পণ্য কেনার সুযোগ আছে।
আমরা আশা করছি গ্রাহকদের জন্য নতুন একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারব। প্রতিনিয়তই প্রাইম শপে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ব্র্যান্ড এবং স্টোর। মোবাইল, ল্যাপটপ, গ্যাজেট, গ্রোসারি, লাইফস্টাইলসহ নানা ক্যাটাগরির বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে রিটেইল প্রাইম শপে।
কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কার মধ্যেও ধামাকার লক্ষ্য গ্রাহকের পছন্দের পণ্য সঠিক সময়ে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেয়া। আমরা স্টক কনফার্ম করেই অর্ডার নিচ্ছি। ফলে গ্রাহকের কাছে ৭ দিনেই ডেলিভারি দেয়া সম্ভব।
নতুন বছরে ধামাকা প্রাইম শপের সার্ভিস দেশব্যাপী প্রসার করার পরিকল্পনা রয়েছে। ডেলিভারি টাইমলাইন ঠিক রাখার জন্য ধামাকা নতুন বছরে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ৭৮০০ স্কয়ার ফিটের অয়ার হাউজ চালু করবে। এখানে ৩ সিফটে ২৪ ঘন্টা লজিস্টিক টিম কাজ করবে। অচিরেই কল সেন্টারে নতুন জনবল নেয়া হচ্ছে। ফলে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার সার্ভিসের সেবা পাবে গ্রাহক। সব মিলিয়ে ধামাকা ব্যবসায়িক গ্রোথের সাথে সাথে সার্বিক ইকো সিস্টেম ঠিক রাখতে কাজ করছে। সর্বোপরি নতুন বছরে ই-কমার্স হয়ে উঠুক আমাদের অর্থনীতির ধারক, বাহক ও প্রাণশক্তি এবং হাজারো বেকারের স্বপ্নের পথযাত্রী।

চালডাল
প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা, জিয়া আশরাফ
২০২০ সাল যেমন বিপর্যয়ের বছর, তেমনি অনেক কিছু শিক্ষা নেয়ারও বছর। কোভিড-১৯-এর আগের বিশ্ব আর পরের বিশ্বের মিল কোনো দিনই হবে না। প্রতিটি নতুন বছর আমরা আর একটু বড় হওয়ার আশা নিয়ে শুরু করি। ২০২০-এর শুরু থেকেই করোনা মহামারীর শঙ্কা ছিল। যদিও আমরা জানতাম না বিপদটা কত বড়।
সবার মিলিত চেষ্টায় ২০২০-এ এসে চালডাল ৩০০ শতাংশ বড় হয়েছে। চালডাল ডটকম-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফের মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার ডেলিভারি ব্যবসার জন্য ২০২০ ছিল একটি সমৃদ্ধির বছর। করোনার পরিস্থিতি সামলাতে আমাদের পরিচালনা পদ্ধতিকে পুনর্গঠন করতে হয়েছে। কর্মীদের দক্ষ করতে হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটা একযোগে চলেছে। কোনো কিছুতেই তাল হারানোর সুযোগ ছিল না।
নতুন বছর চালডাল এবং অনলাইনে বাজারের জন্য একটা দারুণ সুযোগ নিয়ে আসতে যাচ্ছে, এমনই আমাদের বিশ্বাস। করোনাতে ক্রেতাদের আচরণে বদল এসেছে। আমরা প্রতিদিনই বড় হচ্ছি। এ বছর ঢাকার পরে দ্বিতীয় শহর হিসেবে আমরা নারায়ণগঞ্জে কাজ শুরু করেছি। নতুন বছরে আমরা তৃতীয় শহর হিসেবে চট্টগ্রামে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement