১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২০২১ সালের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি : পর্বসংখ্যা-৪৬

বাংলা প্রবন্ধ : শখের মৃৎশিল্প
-

প্রিয় পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা বিষয়ের ‘প্রবন্ধ : শখের মৃৎশিল্প’ থেকে আরো ২টি প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকর্ম কোনটি? বিবরণ দাও।
উত্তর : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকর্মের মধ্যে মৃৎশিল্প অন্যতম। এটা এ দেশের নিজস্ব শিল্প। নিচে প্রাচীন শিল্পকর্মের পরিচয় তুলে ধরা হলো :
টেপা পুতুল : প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে টেপা পুতুল অন্যতম। বাংলার কুমোররা এঁটেল মাটি দিয়ে হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানের মাধ্যমে টিপে টিপে নানা ধরনের পুতুল তৈরি করে। হাত দিয়ে টিপে এসব পুতুল তৈরি করে বলে এ পুতুলকে টেপা পুতুল বলে।
টেরাকোটা : বাংলার অনেক পুরনো শিল্প এই টেরাকোটা। টেরাকোটা একটা ল্যাটিন শব্দ। ‘টেরা’ শব্দের অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ অর্থ পোড়ানো। পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সব রকমের জিনিসই টেরাকোটা হিসেবে পরিচিত।
শালবন বিহার : কুমিল্লা জেলার ময়নামতির লালমাই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে মাটি খুঁড়ে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন। এখানে অষ্টাদশ শতকের পুরাকীর্তিসহ নানা ধরনের পোড়ামাটির ফলক পাওয়া গেছে।
কান্তজীর মন্দির : ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজা রমানাথ রায় দিনাজপুরে কান্তজীর মন্দির নির্মাণ করেন। এ মন্দিরের গায়ে স্থাপিত অপূর্ব সুন্দর টেরাকোটা বাংলার মাটির শিল্পের প্রাচীন নিদর্শন।
পাহাড়পুর : রাজশাহী জেলার পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন সোমপুর বিহার। এই সোমপুর বিহারের আশপাশের বড় বৌদ্ধ মন্দিরে পাওয়া গেছে অনেক সুন্দর টেরাকোটা, যা অষ্টম শতকের তৈরি।
মহাস্থানগড় : বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড়। এখানে পাওয়া গেছে অনেক পোড়ামাটির ফলক, পাত্র, অলঙ্কার ও মূর্তি।
উয়ারী বটেশ্বর : নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বরে সম্প্রতি পাওয়া গেছে প্রাচীন হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার নিদর্শন। এখানে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক। মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব, মৃৎশিল্পকে সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রশ্ন : মাটির শিল্প কেন আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়?
উত্তর : পৃথিবীর প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। বাঙালি জাতিও তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের নিজস্ব যেসব ঐতিহ্য রয়েছে, তার মধ্যে মৃৎশিল্প অন্যতম। শত শত বছর ধরেই বাংলাদেশের মৃৎশিল্পীরা মেধা, মননশীলতা ও শ্রমের বিনিময়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে পোড়ামাটির ফলক টেরাকোটা, শিলালিপি, কারুকার্যখচিত পাত্র, নকশি ইট ইত্যাদির ব্যবহার হতো, যার প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে শালবন বিহার, ময়নামতি, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের মতো প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক স্থান থেকে। তা ছাড়া, সম্প্রতি নরসিংদী জেলার বটেশ্বরে হাজার হাজার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এগুলোর বেশির ভাগই মাটির তৈরি জিনিসপত্র, যা হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য। এসব ঐতিহাসিক স্থান থেকে প্রাপ্ত মাটির তৈরি জিনিসপত্র সুন্দর ও শৈল্পিক, যা প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানেও মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর সবার কাছে। বড় বড় সরকারি-বেসরকারি ভবনে আজকাল সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নানা রকম নকশা করা মাটির ফলক ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসব মৃৎশিল্প দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। আর সেজন্যই বলা হয় মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement