২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২০১৯ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি সংখ্যা-১৬৪

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অধ্যায় নয় : বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও উন্নয়ন
-

সুপ্রিয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের ‘অধ্যায় নয় : বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও উন্নয়ন’ থেকে একটি নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো।
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও।
আমিনুল ইসলাম সাত ছেলেমেয়ের জনক। তিনি একজন দিনমজুর। তার বড় ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অনার্স করছে। ছেলের খরচ জোগাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। মেজো মেয়েটা সবেমাত্র এইচএসসি পাস করেছে। তাকে আইটি বিষয়ে পড়াবেন বলে ভাবছেন। বাকিদের নিয়ে তিনি রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তাদের গ্রামে একটি বেসরকারি সংস্থার নিকট হতে তার স্ত্রী, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিবার ছোট রাখার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণের সময় তিনি আরো জেনেছেন জনসংখ্যা সবসময় অভিশাপ নয় আশীর্বাদও হতে পারে। কেবল দরকার কৌশল পরিবর্তন।
প্রশ্ন : ক. বর্তমান বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ কী?
প্রশ্ন : খ. জনসংখ্যানীতি বলতে কী বোঝায়?
প্রশ্ন : গ. উদ্দীপকে জনাব আমিনুল ইসলামের দুশ্চিন্তার মূল অন্তরায় কী? এ সমস্যা নিরসনে বেসরকারি সংস্থাগুলো কী কাজ করছে বুঝিয়ে লিখ।
প্রশ্ন : ঘ. উদ্দীপকে জনাব আমিনুল ইসলামের স্ত্রী প্রশিক্ষণের সময় জনসংখ্যা সম্পর্কে যে উক্তিটি জেনেছেন তার যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
উত্তর : ক. বর্তমান বিশ্বে জনশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
উত্তর : খ. দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জনসংখ্যা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাকেই বলা হয় দেশটির জনসংখ্যানীতি। আর এ নীতির লক্ষ্য হলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে দেশের নাগরিকদের জীবনমানের উন্নতি এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
উত্তর : গ. উদ্দীপকে জনাব আমিনুল ইসলামের সমস্যার অন্যতম কারণ হলো তার পরিবারের অধিক সদস্য সংখ্যা। এ কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। ছেলেমেয়েদের চাহিদা পূরণ করতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম হলে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে জনাব আমিনুল ইসলামের এতটা সমস্যায় পড়তে হতো না। তারা যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করত তাহলে তারা আজকে এই সমস্যার মুখোমুখি হতো না। এ সমস্যা (জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে) নিরসনে বেসরকারি সংস্থাগুলো নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা কমিউনিটি পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পরিবার ছোট রাখার জন্য পরামর্শ ও শিক্ষা দেয়। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। বাংলাদেশ সরকার দু’টি সন্তানের পরিবার গড়ার যে জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, বেসরকারি সংস্থাগুলো এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। দেশে বাল্যবিয়ে রোধ ও বিবাহ বিলম্বিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জনসংখা মোকাবেলায় বেসরকারি সংস্থাগুলো নানা উপকরণ তৈরির মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে যাচ্ছে। মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, টিকা দান ও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে প্রশিক্ষিত করে তুলছে। ধর্মীয় নেতারা জনসংখ্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে তাই বেসরকারি সংস্থাগুলো ধর্মীয় কর্মশালার আয়োজন করে।
উত্তর : ঘ. উদ্দীপকে জনাব আমিনুল ইসলামের স্ত্রী প্রশিক্ষণের সময় জেনেছেন জনসংখ্যা সব সময় অভিশাপ নয় আশীর্বাদও হতে পারে। তবে দরকার কৌশল পরিবর্তন। তবে সম্পদ যেখানে সীমিত তেমন একটি দেশের জন্য বিশাল জনসংখ্যা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে সেই বিপুল জনসংখ্যাও জনসম্পদে পরিণত হতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ তাদের বিশাল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করেছে। চীন তাদের বিশাল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে তাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। আগামীর সম্ভাব্য পরাশক্তির দ্বারকে উন্মোচন করেছে। এশিয়ার শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পিছিয়ে নেই আমাদের পাশের দেশ। ভারত ও শ্রীলঙ্কা জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ভারত তাদের জনশক্তিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এমনকি আমেরিকার মতো উন্নত দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ২৩ ভাগ ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির ওপর নির্ভরশীল। আমরাও পারি আমাদের বিশাল জনশক্তিকে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দুর্বল অর্থনীতির চাকাকে সচল করে উন্নতির মূল ধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করাতে। সেই লক্ষ্যেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সরকার বিগত বছরগুলোতে এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। যুবশক্তিকে সম্পদে পরিণত করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার, নারী শিক্ষার প্রসার, কৃষিভিত্তিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার প্রদান ইত্যাদি বিবিধ কর্মসূচি সরকার গ্রহণ করেছে। আমাদের জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে কৌশলগুলো বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয়। আগামী দিনে যার সুফল পাওয়া যাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement