অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি : বাংলা
গল্প : অতিথির স্মৃতি- মো: জাকীর হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা বিভাগ), বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বনানী, ঢাকা
- ২৮ মে ২০২৩, ০০:০৫
সুপ্রিয় অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা বিষয়ের ‘গল্প : অতিথির স্মৃতি’ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো।
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :
মাহী সকাল থেকেই কাঁদছে। বাবা কারণ জানতে চাইলে সে আরো জোরে কাঁদতে লাগল। মা বললেন, ‘ওর রানু খালার বাড়ি থেকে আনা কালো বিড়ালটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ বাবা বললেন,‘তাতে কী! আর একটি এনে দেব।’ মাহী কাঁদতে কাঁদতেই বলল,‘আমার মিনিকে তো আর এনে দিতে পারবে না,ও তো আর মিনির মতো আমার গা ঘেঁষে বসবে না, আমার পায়ের কাছে বসে চোখ বন্ধ করবে না। আমার মিনি তো একটাই।’
ক) লেখকের কাছে অতিথি যেন গোপনে কী নালিশ জানাতে চায়? ১
খ) ‘কি ক্লান্তই না মেয়েটির চোখের চাহনি।’-ব্যাখ্যা করো। ২
গ) মাহী চরিত্রে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ) “চেতনা এক হলেও মাহী ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দুই মেরুর মানুষ”-উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো। ৪
উত্তর : ক. অতিথিকে চাকরেরা যে খাবার দেয়নি লেখকের কাছে তাই অতিথি যেন গোপনে নালিশ জানাতে চায়।
খ. উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক দেওঘরের দরিদ্র পরিবারের একটি রোগাক্রান্ত মেয়ের চিত্র তুলে ধরেেেছন।
চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন। বিকেলে গেটের বাইরে পথের ধারে বসে তিনি একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে দেখলেন। তার সঙ্গে ছোট ছোট তিনটি ছেলেমেয়ে। মেয়েটির বয়স চব্বিশ-পঁচিশ হবে। কিন্তু তার দেহ যেমন শীর্ণ, তেমনি পাণ্ডুর কোথাও যেন এতটুকু রক্ত নেই; শক্তি নেই নিজের দেহটাকে এতটুকুু টানবার। এ দৃশ্য দেখেই লেখকের আক্ষেপ, কি ক্লান্তই না মেয়েটির চোখের চাহনি।
গ. উদ্দীপকের মাহী চরিত্রে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের পশুপ্রীতির দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বেড়াতে যাওয়ার পর তার সঙ্গী হয় একটি কুকুর। যখনই লেখকের বেড়াতে যাওয়ার সময় হয়, তখনই বাড়ির উঠানে এসে সে বসে থাকে। লেখক চাকরদের তাকে খাবার দিতে বলে। এমনকি কুকুরকে ছেড়ে যেতে হবে ভেবে বাড়ি যাওয়ার আগ্রহও লেখক হারিয়ে ফেলেন। এভাবে মানবেতর একটি প্রাণীর সাথে একটি অসুস্থ মানুষের কয়েক দিনের পরিচয়ে গড়ে ওঠা একটা মমত্বের সম্পর্কই এ গল্পের মূল বিষয়।
উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পের এ পশুপ্রেমই ফুটে উঠেছে। মাহী তার রানু খালার বাড়ি থেকে আনা কালো বিড়ালটাকে খুঁজে না পেয়ে কান্নাকাটি করে। তার বাবা অন্য একটি বিড়াল এনে দিতে চাইলে ঐ বিড়ালের বিকল্প অন্য কোনো বিড়াল হতে পারে না বলে মাহী জানায়। অর্থাৎ ঐ বিড়ালটির সাথে মাহীর একটা আত্মিক সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। ঠিক এমনই দৃশ্য লক্ষ করা যায় ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে। সেখানে লেখক দেওঘরে কুকুরটির প্রতি একটা প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কাজেই মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিক দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি উদ্দীপকের মাহীর চরিত্রে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
ঘ. চেতনা এক হলেও মাহী ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দুই মেরুর মানুষ-উক্তিটি যথার্থ।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বেড়াতে যাওয়ার পর তার সঙ্গী হয় একটি কুকুর। যখনই লেখকের বেড়াতে যাওয়ার সময় হয়, তখনই বাড়ির উঠানে এসে সে বসে থাকে। লেখক চাকরদের তাকে খাবার দিতে বলে। এমনকি কুকুরকে ছেড়ে যেতে হবে ভেবে বাড়ি যাওয়ার আগ্রহও লেখক হারিয়ে ফেলেন। এভাবে মানবেতর একটি প্রাণীর সাথে একটি অসুস্থ মানুষের কয়েক দিনের পরিচয়ে গড়ে ওঠা একটা মমত্বের সম্পর্কই এ গল্পের মূল বিষয়।
উদ্দীপকেও অতিথির স্মৃতি গল্পের মতো পশুপ্রেম লক্ষ করা য়ায়। সে কারণে মাহীর সাথে মিনির গভীর সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। মাহী তার হারিয়ে যাওয়া বিড়ালের জন্য কাঁদে। কারণ তার সঙ্গে কালো বিড়ালের যে সম্পর্ক তা অন্য কোনো বিড়ালের সাথে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মিনি তার গা ঘেঁষে বসে, পায়ের কাছে বসে চোখ বন্ধ করে। মিনিকে ছাড়া মাহী কিছু ভাবতে পারে না। তেমনি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাথে কুকুরের একটা গভীর সম্পর্কের চিত্র ফুটে উঠেছে। লেখক ও কুকুরের মধ্যে একটা স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যার কারণে লেখক বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন। তবে চেতনায় মিল থাকলেও মাহী ও লেখক দুই মেরুতে অবস্থানরত। মাহী বয়সে কিশোর, লেখক প্রৌঢ়। তা ছাড়া, মাহী শখ করে পোষার জন্য বিড়ালটিকে এনেছিল, কিন্তু লেখক শখের বসে কুকুরটিকে আনেনি। মাহী মিনিকে তার সঙ্গী হিসেবে দেখে, আর লেখক একটা মানবেতর প্রাণী হিসেবে কুকুরটির প্রতি মমতায় সিক্ত হয়েছে।
সুতরাং বলা যায় যে, চেতনা এক হলেও মাহী ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দুই মেরুর মানুষ-উক্তিটি অত্যন্ত যৌক্তিক।