বন্যার প্রভাব : মন্তাজনগর স্কুলে শিক্ষক এলেও আসছে না শিক্ষার্থী
- সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
- ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:১৮
বন্যার পানির তোড়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের মন্তাজনগর স্কুলে যাতায়াতের সড়কের দু’টি ব্রিজ ও বেশ কয়েকটি স্থানে ভেঙে গিয়েছে।
এ দিকে, দুই কিলোমিটার সড়কের চারটি স্থানে ভাঙনের কারণে চারটি গ্রামের লোকজন ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখন যোগাযোগ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে, পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্থ উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর-মন্তাজনগর, নছরনগর-নাছিমপুর সড়কে দেখা যায়, ভাঙনের দুই দিকে শিক্ষার্থীসহ মানুষজন দাঁড়িয়ে আছেন। উপচানো পাহাড়ি খরশ্রোতা চেলা নদী থেকে তীব্র বেগে এখনো পানি আসছে সড়ক আর ব্রিজের ভাঙা অংশ দিয়ে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় ভাঙা ব্রিজে দেয়া হয়েছে একটি বাঁশ। এতে প্রাপ্ত বয়স্করা কিছু ভেজা কিছু শুকনো এভাবে পার হলেও শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।
এর আগে, বুধবার সকাল ৯টায় দেখা গেছে ভাঙা ব্রিজে শিক্ষক-শিক্ষিকারা একজন আরেকজনের হাত ধরে পানিতে ভেজা উপেক্ষা করে পার হচ্ছেন। তবে সড়কে উঠার সময় বাধে বিপত্তি। তখন ওপর থেকে একজন পুরুষ এগিয়ে এসে তাদের সহায়তা করেন রাস্তায় উঠতে। আবার স্কুলের নিচ তলায় ও পানিতে ভিজে ওপরে উঠতে হয় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের।
এলাকাবাসী জানায়, দৌলতপুর-মন্তাজনগর, নছরনগর ও সৈদাবাদ এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র কাঁচা এই সড়কটি এবারের বন্যায় দুই দফা চারটি স্থানে ভেঙে গেছে। ভেঙে গেছে দু’টি কালবার্ট ব্রিজ। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে ভাঙন কবলিত অংশের মাটি, ঢালাই ও ইট-সুরকি।
এলাকাবাসী আরো জানায়, এখন এই পথে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীদের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। কেউ নৌকায়, কেউ ভিজে পানি মাড়িয়ে বাজারে যাতায়াত করেন। তবে নৌকা সহজে মিলে না। যাদের প্রয়োজন আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখেন।
এ দিকে, মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, নিচ তলায় বন্যার পানি থই থই অবস্থা। ওপরের তলায় চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা বসে আছেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। স্কুলে ১৭ জুন প্রথম পানি ওঠেছিল। এরপর থেকে এখনো পানিবন্দী রয়েছে স্কুলটি। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রক্ষার জন্য বেঞ্চর ওপর রাখা হয়েছে। স্কুলের মেঝেও স্যাঁতস্যাঁতে।
এ সময় স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নাছিমা বেগম জানান, এই দুর্যোগেও যথা সময়ে শিক্ষকরা স্কুলে এসেছেন। কিন্তু রাস্তা ও ব্রিজটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকরা ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। এখনো চারপাশে পানি থই থই করছে। পুরো এলাকা এখনো পানিবন্দী।
পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আবারো মন্তাজনগর স্কুলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একপাশে নদী আর দু'পাশে হাওড়ে ঘেরা মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান আরো দুই শিক্ষক, এক শিক্ষিকাকে নিয়ে একটি নৌকায় করে স্কুলে রওয়ানা দিয়েছেন।
মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান জানান, ‘পাহাড়ি খরশ্রোতা চেলা নদী লাগোয়া মন্তাজনগর, দৌলতপুর, নছরনগর-সৈদাবাদ সড়কটির বিভিন্ন অংশ পানির তোড়ে ভেসে গেছে। চলাচলের একমাত্র এই সড়কটিতে দুটি কালভার্ট ব্রিজ আছে। ব্রিজ দুটির দু'পাশ ভেঙে যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্কুলের মাঠ ও নিচ তলায় এখনো পানি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোথাও নৌকা, আবার কোথাও পানিতে ভিজে তারপরও ঝুঁকি নিয়ে আমরা স্কুলে এসেছি। তবে বাচ্চাদের পাঠাতে ভয় করছেন অভিভাবকরা। তাই স্কুলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসছে না। আমরা প্রতিদিনই স্কুল শেষে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।’
মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আনছার আলী বলেন, ‘সড়কের ওপর দিয়ে চেলা নদীর বন্যার পানি গড়িয়েছে। অনেক অংশ ভেঙে গেছে। দু'টি ব্রিজ ভেঙে বেশি দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন পায়ে হেটেও চলাচল করার উপযুক্ত নয় সড়কটি। বর্ষাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবারই স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ও থাকে।’
জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কার করে যাতায়াত স্বাভাবিক করার দাবি জানান স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও স্কুল কমিটির সভাপতি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ফয়াজুর রহমান বলেন, ‘এবারের দফায় দফায় বন্যায় মন্তাজনগর স্কুলে যাওয়ার রাস্তার বেশিরভাগ অংশই ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে। স্কুলেরও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। স্কুলে আসার মুখে দু’টি ব্রিজে বড় ভাঙন। দেখলেই ভয় লাগে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই অবস্থায় কিভাবে শিশুরা স্কুলে আসবে। রাস্তা ঠিক করা না হলে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় করবেন।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, মন্তাজনগর স্কুলের সামনে দু’টি কালভার্ট ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না। আমরা এই রিপোর্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আব্দুল হামিদ জানান, মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দু’টি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা