১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বর্ষা এলেই মনে হয় ‘২২ সালের সেই ভয়ঙ্কর বন্যা, তাই ঈদের দিনটি নিয়ে ভয় বেশি ছিল

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়কই এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। কোনো কোনো সড়কে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়িয়া পানির স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি ঢুকেছে মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে। মানুষের বসতঘরে পানি ঢোকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। আবার কেউ কেউ যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে।

সোমবার সকাল থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, “বর্ষা এলেই চোখে ভাসে ‘২০২২ সালের ওই ভয়ঙ্কর বন্যা, তাই ঈদের দিনটি নিয়েই ছিল ভয় বেশি। মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দের চেয়ে আত্নরক্ষার চিন্তাই কাজ করছে বেশি।”

তিনি জানান, বোগলাবাজার ও লক্ষিপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা সদর পর্যন্ত সবকয়টি চলাচলের রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথায় হাঁটু, কোথাওবা তার চেয়ে বেশি পানি। কোথাও কোথাও পানির স্রোতে রাস্তায় ভেঙে যাওয়ায় সেখানে নৌকায় যাতায়াত করেছেন লোকজন।

লক্ষিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ওমরগনি বলেন, চলতি বন্যায় লক্ষিপুর ইউনিয়নের চলাচলের রাস্তা ও বসতঘরের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঈদের আগের দিনেই রাস্তাঘাট ভেঙে বসতঘরে পানি ডুকে সবকিছু ভাসিয়ে ঈদ আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। এখানো পানি বেশি। দোকানপাটে পানি ঢোকায় সেগুলো বন্ধ। রাত থেকে পানি স্থির ধরে আছে।

একইভাবে উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন, উপজেলা সদর, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও, মান্নারগাঁও, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে ও নদী ভাঙ্গনে অনেকে বসতঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এসব এলাকায় অনেক দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে।

দোহালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজসেবক নুর হোসেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বৃষ্টি হচ্ছে কয়েক দিন থেকেই। কিন্তু ঈদের দিন রাত থেকে পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর তীর বসত-বাড়িতে পানি ঢুকতে থাকে। বিভিন্ন সড়ক ও অনেক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। বন্যায় দূর্গত মানুষরা বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।’

দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) শামিমুল ইসলাম শামিম বলেন, ‘এলাকার সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে মানুষ আশ্রয় নেয়ার জন্য।’

নরসিংপুর ইউনিয়নের মন্তাজনগর এলাকার বাসিন্দা আমরু মিয়া বলেন, ‘সোমবার রাত থেকে ঘরে পানি। মঙ্গলবার সকালে ঘর তলিয়ে গেছে। কোনোরকম চেষ্টা করে পরিবারের সদস্য ও শেষ সম্বল গরুগুলো নিয়ে আত্নীয়ের বাড়িতে এসেছি। না জানি মাথা গুজার থাই বসতঘরটি কেমন আছে।’

নরসিংপুর ইউনিয়নের নাছিমপুর বাজারের ব্যবসায়ী আলী হুসেন বলেন, ‘বাজারের সবগুলো দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। এতে সমস্যায় পড়েছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রচুর। ঈদের দিন ঈদ আনন্দে ভুলে গিয়ে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের বেঁচে থাকার সম্বল দোকানের মালামাল রক্ষা করতে কাজ করেছেন। তবুও অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।’

আরেক ব্যবসায়ী আল আমিন হোসেন বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে পানি দ্রুত বাড়তে থাকে। এরপর পানি দোকানে ঢুকে। কোনো জিনিস সরাতে পারেননি, সব নষ্ট হয়ে গেছে।’

সরেজমিনে উপজেলার সদর, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ও মানুষের বসতঘরে পানি দেখা গেছে।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, ‘এলাকার বেশকয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি। গতকাল বুধবার থেকে লোকজন এলাকার স্কুল ও মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।’

এ দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দোয়ারাবাজার উপজেলায় বৃষ্টিপাত কম হলেও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে টানা বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি তেমনটা কমার সুযোগ পায়নি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মামুন হাওলাদার দুপুরে বলেন, ‘সুনামগঞ্জে গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানি কিছুটা কমলেও, উজানে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি বেড়েছে। যদি উজানে বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘উপজেলার সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।’


আরো সংবাদ



premium cement