২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজে ঝুঁকিতে চলাচল ৫০ গ্রামের বাসিন্দাদের

ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজে ঝুঁকিতে চলাচল ৫০ গ্রামের বাসিন্দাদের - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন ৫০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের পাশে দৌলতা নদীর উপর নির্মিত পরিত্যক্ত ব্রিজটি এখন মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এই ব্রিজটি দ্রুত পুন:নির্মানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনা হাওরের জামালগঞ্জ-ফেনারবাঁক সড়কের তেরানগর গ্রামের পাশে দৌলতা নদীর উপর প্রায় ২৩ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল এই ব্রিজটি। যা একযুগ আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি এলাকাবাসী। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, এ ব্রিজটি দিয়ে এ অঞ্চলের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চল, ভীমখালী ইউনিয়নের কিয়দাংশ ও দিরাই উপজেলার ভাটি অঞ্চলের প্রায় ৫০টি গ্রামের হাজার-হাজার মানুষজন চলাচল করে। উপজেলার ভীমখালী ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দৌলতা নদীর ওপর এই ব্রীজটি প্রায় একযুগ আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

গ্রামবাসী জানান, হেমন্তে জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগের বিকল্প কোনো পথ না থাকায় হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০০ সালে এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়। যা ২০০৪ সালে রসে শেষ হয়েছিল। তবে ওই সময় ব্রিজের উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না করায় ব্রিজ দিয়ে মানুষের চলাচল করতে পারেননি। বিকল্প চলাচলের জন্য তারা বাঁশের সাঁকো ও খেয়া নৌকায় পারাপার হয়ে চলাচল করতেন। পরে ২০০৫ সালের শেষের দিকে সংযোগ সড়ক নির্মাণের পর ব্রিজ দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল শুরু হলে দুর্দশা কমে আসে।

অভিযোগ উঠেছিল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজের কারণে নির্মাণের মাত্র কয়েক বছর যেতে না যেতেই রড ঝুলে যায় ও আস্তরণ খসে পড়ে। এ অবস্থায় সেতু দিয়ে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। ফলে২০১৪-১৫ সালেই ব্রিজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি দিয়ে ফেনারবাঁক ইউনিয়নের রাজাপুর, মাতারগাঁও, খোঁজারগাঁও, রাজাবাজ, উজান দৌলতপুর, ভাটি দৌলতপুর, বিনাজুড়া, লালপুর, রসুলপুর, তেঘরিয়া, গঙ্গাধরপুর, ছয়হারা, কামারগাঁও, ইনাতনগর, লক্ষ্মীপুর, কাশীপুর, উদয়পুর, তাজপুর, নাজিমনগর, হঠামারা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া, নুরনগর, আলী নগর, ইসলামপুর, কুচিরগাঁও ও রফিনগর ইউনিয়নের খাগাউড়া, সেচনি, কিত্তাগাঁও, স্বজনপুর, জগন্নাথপুর, কুড়ি, পুরন্দরপুর গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন।

জানা গেছে, এসব গ্রামের মানুষের জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে হেমন্তে শুকনো মৌসুমে সড়ক যোগাযোগে চলাচলের ক্ষেত্রে তেরানগর গ্রামের পাশের এই ব্রিজটি দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। হেমন্তে শুকনো মৌসুমে প্রায় ৭-৮ মাস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা এই ব্রিজের উপর দিয়ে জামালগঞ্জে আসতে হয় এলাকাবাসীর।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে এই ব্রিজে দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হতাহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক লোক। আর চলাচলে শঙ্কিত থেকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো: নজরুল বলেন, সকল তেরানগর ঝুঁকিপুর্ণ ব্রিজে যেকোনো মুহুর্তে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গাড়ি ব্রিজ উঠলে ব্রিজ কাঁপে। এর পরেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।

স্থানীয় বাচ্চু মিয়ার দাবী, জনদুর্ভোগ এড়াতে দ্রুত এ ব্রিজটি নির্মাণ জরুরি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে ঝুঁকিপুর্ণ এই ব্রিজটি নির্মাণের আশ্বাস শুনে আসছি। নির্বাচন এলেই ব্রিজ নির্মাণের জন্য নেতারা ওয়াদা করেন। কিন্তু বর্তমান সরকার পর পর তিন মেয়াদে প্রায় ১৪ বছর দেশ পরিচালনা করছেন। কিন্তু আমাদের কোনো উন্নতি নেই।

এ ব্যাপরে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো: আব্দুল মালেক বলেন, জামালগঞ্জ ফেনারবাঁক সড়কের তেরানগরে দৌলতা নদীতে ব্রিজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য ডিও লেটার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। অনুমোদন হলেই দ্রুত কাজ করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাহবুব আলম মোবাইলফোনে জানান, জামালগঞ্জের তেরানগর ব্রীজ নির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement