২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শায়েস্তাগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও গাছিরা

শায়েস্তাগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও গাছিরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে ধীরে-ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। ফলে একইসাথে হারিয়ে যাচ্ছে ‘গাছি’ নামের শিল্পীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, সময়ের সাথে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে শীতকালীন ঐতিহ্য রসনা বিলাসী খেজুরের রস ও এর তৈরি নানা পদের পিঠা। এখন মেলে না পল্লীকবি কবি জসীম উদ্দীনের কালজয়ী 'মামার বাড়ি’ কবিতার পঙক্তি “পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ”।

এলাকাবাসী জানান, মধুমাস জৈষ্ঠ্যের মতো পৌষ-মাঘ মাসেও রসনা তৃপ্তির জন্য মধু পাওয়া যায়। তা হচ্ছে মধুবৃক্ষের রস, অর্থাৎ খেজুরের রস। এ অঞ্চলে একটি গ্রাম্য প্রবাদ আছে ‘মাটির হাড়ি কাঠের গাই, গলা কেটে দুধ খাই’। গাছসহ খেজুরের রস বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে কালান্তরে চলে যাচ্ছে ওইসব প্রবাদ বাক্যও।

জানা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদে একসময় অনেক খেজুর গাছ থাকলেও তা এখন হারাতে বসেছে। ঐতিহ্যগতভাবে শীতের ভোরে একগ্লাস খেজুরের রস পান করতে ইচ্ছা জাগে রসনা বিলাসীদের। গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের বাহক এই মধুবৃক্ষ তুলনামূলকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।

গ্রামে মাঠের ধারে মেঠো পথের কিনারে অথবা ঘরের কোনে খেজুর গাছ দাঁড়িয়ে থাকতে এখন আর চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে এই খেজুরগাছ বর্তমানে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, যে হারে খেজুরগাছ নিধন করা হচ্ছে, সে তুলনায় রোপণ করা হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে দু'একটি খেজুরগাছ দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। শীত মৌসুমের সকালে খেজুরের তাজা রস ও রসে ডুবানো পিঠার স্বাদ আর মৌ-মৌ গন্ধ এখন পাওয়া যায় না।

উপজেলার খোয়াই নদী সংলগ্ন সুদিয়াখলা গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে গাছি কুদ্দুস মিয়া জানান, এলাকায় খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় এই এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল, প্রচুর রসও পাওয়া যেত। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে পেশাদার গাছিরা অন্য পেশায় চলে গেছেন। শীত মৌসুমের শুরুতে গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছের রস আহরণের কাজে পেশাদার গাছিদের আর দেখা যায় না।

তিনি বলেন, খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় গাছিদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতেন এবং তাতে সংসার চালিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করা যেত। এখন গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে, তা বেশি বয়সের হওয়ায় তাতে তেমন রস পাওয়া যায় না।

দাউদনগর গ্রামের রস প্রেমিক বাবুল বলেন, এখন শীত মৌসুমের ভোরে এক গ্লাস তাজা খেজুরের রস খেতে কে না চায়। তবে খেজুরের রস তেমন পাওয়া না গেলেও খেজুরের রসে তৈরি পাটালী গুড়, ঝোলা গুড়, মরিচা গুড় ইত্যাদি এখনো পাওয়া যাচ্ছে।

এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, খেজুর গাছের সঠিক পরিচর্যার পাশাপাশি নতুন করে খেজুরগাছ রোপণ করা জরুরি। খেজুর গাছ এবং এর রস ঐতিহ্যগতভাবে বাংলার সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। পুষ্টিগুণ এবং মিষ্টতায় এর জুড়ি মেলা ভার। খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় বাংলার পিঠা উৎসবের অনুসঙ্গ। বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। পতিত জমিতে এবং রাস্তার দু'পাশে খেজুর গাছ লাগানো যেতে পারে। এতে পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নান্দনিক ছন্দ ছড়াবে।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শুকান্ত ধর জানান, আপাতত আমাদের এলাকায় তালগাছ নিয়ে একটি প্রকল্প আছে। তাই খেজুর গাছ নিয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। ভবিষৎতে কিছু একটা হতে পারে বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে

সকল