২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সম্ভ্রম হারিয়েও আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে : ধর্ষণের শিকার ২ তরুণীর

সম্ভ্রম হারিয়েও আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে : ধর্ষণের শিকার ২ তরুণীর - ছবি : নয়া দিগন্ত

সিলেট নগরের পাঠানটুলায় একটি হোটেলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী জানিয়েছেন, পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচারপ্রার্থী হওয়ায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নানা চাপের মুখে এখন অনেকটা আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে তাদের।

সোমবার বেলা ২টায় সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মামলার মাত্র দু’আসামি- তানিয়া ও রাহিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে, মূল হোতা জুবেলসহ অন্য আসামিরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আসামিরা মামলা আপোষ করার জন্য আমাদের দু’জনকে বিভিন্ন মাধ্যমে অবিরত চাপ দিচ্ছে।’

তারা আরো বলেন, ‘এতো বড় ঘটানার পরও আসামিরা থেমে নেই। আমাদের মোবাইলফোন তাদের হাতে থাকায়, ফোনে থাকা ব্যক্তিগত কিছু ভিডিও এবং ছবি এডিট করে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা জুড়ে দিয়ে, সেগুলোর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হলে আমাদের মৃত্যু ছাড়া সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। কারণ, সাধারণ মানুষ কোনটা এডিট আর কোনটা রিয়েল ভিডিও সেটি বুঝতে পারবেন না।’

তাদের মোবাইলফোন উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। তারা বলেন, ‘সব আসামি গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তারা আমাদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকারও যাতে কেড়ে নিতে না পারে সে ব্যবস্থা করুন।’

পাশবিক নির্যাতনের শিকার দুই তরুণী নিজেদের মামলায় এজহারনামীয় দু’আসামির সংশ্লিষ্টতা নেই বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ‘আমরা মামলায় সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার আলী আকবরের ছেলে যুবলীগ নেতা রানা আহমদ শিপলু ওরফে শিবলু ও সুনামগঞ্জ সদর থানার হরিনাপাট গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাগঠনিক সম্পাতক নাবিল রাজা চৌধুরীর নাম উল্লেখ করেছিলাম। পরে পুলিশ যখন আমাদেরকে নাবিল-শিপলুসহ অভিযুক্তদের ছবি দেখায় তখন নাবিল-শিপলু সেদিন আমাদের নির্যাতন করেনি বলে নিশ্চিত হই।’

কি কারণে তাদের আসামি করা হয়েছিল জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘অভিযুক্ত আসামিদের মুখে তাদের দুজনের নাম শুনেছি। তাই, মামলায় তাদের নাম দিয়েছি। কিন্তু পরে ছবি দেখার পর নিশ্চিত হই ওই দিন নাবিল-শিপলু আমাদের ওপর কোনো প্রকার নির্যাতন করেননি।’

তারা আরো বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ওপর যারা সত্যিই নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরই বিচার হোক। নিরপরাধ কোনো লোক যাতে এ ঘটনায় ফেঁসে না যায় সে বিষয়ে আপনাদের মাধ্যমে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে তারা বলেন, ‘২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানিয়া ফোন করে বলেন, তার ভাইয়ের জন্য এবি পজেটিভ রক্ত প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ মিল থাকায় আমরা দু‘জন তৎক্ষণিক রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে তানিয়াকে দেখতে পেয়ে রক্ত দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাদের বলেন, রক্ত দেয়ার আগে তার এক কাজিনের সাথে দেখা করা প্রয়োজন। প্রয়োজন শেষ করে তারা আমাদের নিয়ে হাসপাতালে যাবেন।’

এ কথা বলে তানিয়া আমাদেরকে নিয়ে রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশে ‘গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলে’র চতুর্থ তলায় নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর তানিয়ার এক সহযোগী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোহাইমিন রহমান রাহি আমাদের দু'জনকে ৩০৩ নম্বর ও ৩০১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান।

ওই সময় সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার গোবিগন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত তহুর আলীর ছেলে জুবেল ও সুজন নামের একজনসহ আরো ছয় থেক সাতজন যুবক আমাদেরকে আলাদা দু’টি কক্ষে আটকে রেখে পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন শুরু করেন। এর আগেই আমাদের সাথে থাকা মোবাইলফোন ও টাকাসহ জরুরি জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন তারা। আমরা ওই সময় ওদের কাউকে না চিনলেও তারা পরস্পর একে অপরকে নাম ধরে ডাকায় এবং পরে পুলিশ আমাদেরকে ছবি দেখানোর পর আমরা আসামিদের নাম-পরিচয় জানতে পারি।

তারা আরো বলেন, ‘রাহি ও জুবেলের কথামতো সিলেটের বিভিন্ন লোকজনকে ফাঁসাতে আমাদেরকে ব্যবহার করে টাকা আদায় করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। সেদিন তারা হোটেলে আমাদেরকে এমন প্রস্তাবও দিয়েছিল। তারা আরো বলেছে- তাদের কথামতো না চললে আমাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলবে। আমাদের নিয়ে জোরপূর্বক করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তারা আরো জানান, ‘একটি বিভীষিকাময় রাত শেষে পরদিন দুপুরে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি এ মর্মে আমাদের (রিয়া ও চম্পা) কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক কথা মোবাইলফোনে রেকর্ড করে। এরপর দুপুর ১টার দিকে তারা আমাদের হোটেল থেকে বের করে দেয় এবং আমাদের মোবাইলফোনসহ সাথে থাকা সব জিনিসপত্র রেখে দেয়।‘

এ সময় জুবেল ও তানিয়া বলে- তাদের কথামতো চললে তিনদিন পর মোবাইলসহ সবকিছু ফিরিয়ে দেবে।

দুই তরুণী বলেন, ‘আমরা সেদিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় এবং শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় দ্রুত ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করি। পরে আমরা (রিয়া ও চম্পা) জালালাবাদ থানায় গিয়ে পৃথক মামলা করি।’


আরো সংবাদ



premium cement
আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে

সকল