২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা বাগান ছেড়ে মহাসড়কে

মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে - ছবি : নয়া দিগন্ত

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মহাসড়কে নেমে এসেছেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা। এ দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে তারা। 

মৌলভীবাজারের ৪টি ভ্যালির ৯২টি চা বাগানে শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করায় বাগানগুলোতে চা-পাতা উত্তোলনসহ সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে।

গতকাল শনিবার সকালে এ ধর্মঘট শুরু করেন তারা। আজ রোববারও তা অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার সকাল ৯টা থেকে জেলার জুড়ি, লংলা, মনু ধলাই, বালিসিরা ৪টি ভ্যালির ৯২টি বাগানের শ্রমিকদের বাগানের পাশের মহাসড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে।

মৌলভীবাজার কুলাউড়া মহা সড়কের পাশের রাজনগর ও মাথিউরা চা বাগানের শ্রমিকরা বেলা একটা পর্যন্ত রাস্তায় অবস্থান নেন। একই সাথে জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জে, জুড়ী ও বড়লেখাসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। এ সময় হাজার হাজার চা শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।

চা বাগানের শ্রমিক নেতারা জানান, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে জীবন চালানো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। ১৯ মাস আগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও মালিক পক্ষ নতুন চুক্তি নবায়নে গরিমসি করছে। চুক্তি নবায়ন ও ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তারা অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট পালনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন।

বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের মূল্য কমে যাওয়ায় বাগান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং ইত্যাদি বিড়ম্বনা নিয়ে চা উৎপাদনে আগের চেয়ে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজনগর, মাথিউরা, ইটা, উত্তর ভাগ ও করিমপুর চা বাগানের শ্রমিকরাও একই দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।

শ্রমিক নেতারা জানান, মৌলভীবাজারের ৪টি ভ্যালির ৯২ বাগানে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।

ইটা চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নাসিম আহমদ বলেন, জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে অল্প মজুরিতে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা।

লংলা ভ্যালির সভাপতি চা-শ্রমিকদের নেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকরা চা শিল্পের নিপুন কারিগর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে তারা ১২০ টাকা মুজুরি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে চাশিল্পকে সজীবতা দিয়ে আসছে। বর্তমান বাজারমূল্যে স্বল্প মজুরিতে জীবন চালানো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক শ্রমিক নেতা পরেশ কালেন্দি বলেন, ধর্মঘটের কারনে চা পাতা উত্তোলন হয়ে গেছে। এতে মালিক পক্ষের ক্ষতি হবে। তারা মজুরি বাড়াতে গরিমসি করছে। চুক্তি নবায়নের ১৯ মাস চলে গেছে। তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাই আমরা অনির্দষ্টকালের ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা দাবি আদায়ের জন্য মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে আরো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

এ নিয়ে বিভিন্ন বাগান ব্যবস্থাপকের সাথে কথা হলে ইটা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক আদিল আহমদকে বলেন, চা উৎপাদনে মালিক পক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন। জ্বালানি তেল বিদ্যুত বিভ্রাটে উৎপাদন খরচ নাগালের বাহিরে চলে গেছে। বিশ্ব বাজারে চায়ের দামও কমে আসছে। এতে বাগান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement