২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইন্টার্ন ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ওসমানী মেডিকেল কলেজ

ইন্টার্ন ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ওসমানী মেডিকেল কলেজ - ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রশাসনের সাথে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা। পরে তারা হাসপাতাল প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

এদিকে দাবি আদায়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট ডাকলেও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেছে। গত শনিবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ এক চিকিৎসককে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ এনে পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে এ দুটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচিত বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: ইয়াসিন খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে হওয়া মামলার বাদি হয়েছেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: হানিফ। অভিযোগে একজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচিত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। দুই ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে হওয়া মামলার বাদি কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুর রশীদ। ওই মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচিত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ গেটের পাশে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র নাইমুর রহমান ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথ। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আহত ছাত্রদের সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে সোমবার রাতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। সেইসাথে হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় তারা। এদিকে দুই ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরাও সোমবার রাতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। অবশ্য দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে হামলার ঘটনায় জড়িত দু’জনকে আটকের পর জানানো হয়, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাসেবা চালু রাখবেন।

এদিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজের সম্মেলনকক্ষে হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠকে বসেছেন। এতে উপস্থিত রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো: মঈনুল হক, মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ প্রমুখ। বৈঠকে কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে প্রশাসনের কর্তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা হামলাকারী সকলকে প্রেফতারের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বৈঠক থেকে চলে আসেন। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিউর রহমান বলেন, হামলাকারী সকল আসামি গ্রেফতার এবং শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাব। সেবা দিতে এসে আমরা হামলা ও হয়রানির শিকার হতে রাজি নই।

এদিকে দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত হাসান সানি। তিনি বলেন, শনিবার হাসপাতালে শিক্ষানবিশ এক চিকিৎসকের সাথে রোগীর স্বজন পরিচয়ে কয়েকজন তরুণ বিতণ্ডা করেন। ওই সময় ওই চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে ওই তরুণদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। এর জেরে সোমবার রাতে দুই ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের সব দাবির সাথে একমত। তাদের দাবি পুরণে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে সব দাবি পুরণে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা তাদের কাছে এই সময়টুকু চেয়েছি। এখনো আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement