২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লাভজনক কবুতর পালনে আগ্রহী শায়েস্তাগঞ্জের যুবকরা!

লাভজনক কবুতর পালনে আগ্রহী শায়েস্তাগঞ্জের যুবকরা! - ছবি : সংগৃহীত

‘বাক বাকুম পায়রা, মাথায় দিয়ে টায়রা’ এক সময় দৃষ্টিনন্দন পায়রার ছড়া কবিতা লেখা হতো। শখের বশে অনেকেই পায়রা লালন পালন করতে দেখা যেত। কালের বিবর্তনে পায়রা বা কবুতর এখন আর শখের পোষা পাখি নয়। কবুতর এখন ব্যবসা বা স্বাবলম্বী হওয়ার উপকরণে পরিণত হয়েছে।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত নুরপুর ইউনিয়নের সুরাবই গ্রামের সুমন মিয়া নামে জনৈক ব্যক্তি শখের বশে কবুতর পালন শুরু করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ কবুতর পালন প্রকল্পটি লাভজনক হওয়ায় এতে স্বাবলম্বী হয়েছেন সুমন মিয়া। সুমন মিয়ার এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে শায়েস্তাগঞ্জের অনেক বেকার যুবক সুখের স্বপ্ন দেখছেন।

বাড়ির আঙিনা বা বাসার ছাদে এই কবুতর লালন পালন করা হচ্ছে। এতে আয় যেমন হচ্ছে তেমনি বেকারত্ব ঘুচাচ্ছে যুবকদের। এমন সম্ভাবনাময় প্রকল্পে বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালনে উৎসাহী হয়ে ওঠছেন স্থানীয় যুবকরা। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের সুরাবই গ্রামের কাজী বাড়ির সুমন মিয়া গত ৩ বছর ধরে বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন শখের কবুতরের খামার। বাসার ছাদে তারের জালির বেড়া ও উপরে টিন দিয়ে তিনি খামার নির্মাণ করেছেন। সুমন মিয়ার খামারে তিনটি স্তরে আলাদা আলাদা করে কবুতর রাখা হয়েছে। সাদা, কালো কিংবা গোলাপি রঙের কবুতর দেখলে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। কিছু কবুতর আবার তিনি আলমিরার মতো সাজিয়ে রেখেছেন।

সুমন মিয়া ১০ জোড়া কবুতর দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার খামারে ৫০ জোড়া কবুতর রয়েছে। এর মাঝে রেডস চেগার, সবজি রেসার, নাসকি রেসার, মিলি রেসার, কালো বাগদাদী, হোয়াইট বাগদাদী, কালো ময়না ওমা ও গ্রিজেল রেসার জাতীয় কবুতর রয়েছে। ক্রেতাদের কাছে এসব বাহারী নামের কবুতরের বেশ চাহিদাও রয়েছে।

এ বিষয়ে সুমন মিয়া জানান, এসব কবুতরের জন্য তিনি ৬৫ টাকা কেজি দরে মিশ্র খাবার কিনে নিয়ে আসেন। প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা তার খাবারের পেছনে ব্যয় হয়। তিনি নিজেই খামারের পরিচর্যা ও দেখভাল করে থাকেন।

সুমন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, এ পর্যন্ত তার ৩৪টি কবুতর মারা গেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ঠাণ্ডা লেগে রাণীক্ষেত রোগে মারা যায়। পরে তিনি ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে সব কবুতরের শরীরে পুশ করেছেন। তার ইচ্ছা খামার আরো বড় করবেন।

একই গ্রামের সৈয়দ মারুফ আহমেদ। তিনি বাসার পাশে আলাদা রুমে গত কয়েক বছর ধরে কবুতর পালন করে আসছেন। তার খামারে ১০ থেকে ১২ জোড়া কবুতর রয়েছে। মাসুক ভাণ্ডারি নামে আরেক সৌখিন ব্যক্তি বেশ কয়েক বছর ধরে শখের বসে কবুতরের খামার দিয়েছিলেন। ব্যস্ততার কারণে তিনি সময় দিতে না পারায় খামারের কবুতর বিক্রি করার জন্য ক্রেতা খুঁজছেন। তার খামারে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জোড়া কবুতর রয়েছে।

খামারীদের দেয়া তথ্য মতে- ঠিকমত খাদ্য ও পরিচর্যা পেলে কোনো কোনো কবুতর দুই-তিন মাস পরপরই বাচ্চা দেয়। আর প্রতি জোড়া কবুতর ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। যে কারণে শুধু বেকার যুবকরাই নয়, কবুতর পালনে এগিয়ে এসেছেন জেলার অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নিজেদের বাসা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে খাঁচা তৈরি করে পালন করছেন দেশী-বিদেশী নানা জাতের কবুতর।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রমাপদ দে জানান, এখন অনেক যুবকই নিজ উদ্যোগে কবুতর পালনে এগিয়ে আসছেন। বেকার যুব সমাজকে কবুতর পালনে এগিয়ে আসতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া কবুতর পালনে শ্রম ও খরচ কম। তাই এ পেশায় যুবকরা বেশি ঝুঁকছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে আমরা কবুতরের জন্য কৃমির ওষুধ, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে প্রদান করবো।’ এছাড়া যেকোনো পরার্মশের জন্য তিনি খামারীদেরকে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement