২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শায়েস্তাগঞ্জে মাঠ ভরা সোনালী ধানে কৃষকের মুখে হাসি

‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার’ মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে - ছবি : নয়া দিগন্ত

এখন অগ্রহায়ণ মাস। গ্রাম বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্য অনুযায়ী ধান কাটা উৎসব চলছে। এ সময় কৃষকরা মাঠের পাকা ধান কেটে গোলা ভরে রাখে। এছাড়া চোখে পড়ে দিগন্ত বিস্তৃত সোনালি ধান ক্ষেত। এই চোখ জুড়ানো ধান দেখে কৃষাণ-কৃষাণীর চোখে মুখে হাসির ঝিলিক বয়ে যায়। এবার ভালো ফলনে ভরবে গোলা, চলবে নবান্ন উৎসব।

উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ভরে আছে রোপা আমন ধানে। সেই সাথে হাসিতে দুলছে যেন কৃষকদের স্বপ্ন। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশে ভালো শীত পড়েছে, এরই মাঝে ধান কাটা চলছে পুরোদমে। এবার শায়েস্তাগঞ্জে আমন ধানের বেশ ভালো ফলন হয়েছে, তাই কৃষকরা প্রাণভরা হাসি নিয়েই ধান কাটছেন। শায়েস্তাগঞ্জে এবার ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট থাকলে ও ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার’ মেশিন দিয়ে ধান কাটতে পারায় শ্রমিকের অভাব টের পাচ্ছেন না কৃষকরা।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ও ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নে হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা হচ্ছে। ফলে জমি থেকেই ধান আলাদা করে ঘরে নিয়ে ফিরছেন, কৃষকরা। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কাটার জন্য প্রতি একর ধান কাটার ১৭ শ’ টাকা খরচ দিতে হচ্ছে। তবে যাদের গরু আছে তারা শ্রমিক দিয়েই ধান কাটাচ্ছেন, যাতে ধানের খড় বেশি পাওয়া যায়, যা গরুর জন্য বেশ ভালো খাবার।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু এলাকায় কৃষক পাকা ধান কেটে আঁটি বেঁধে কিংবা কাঁধে ভার বয়ে নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন, আবার অনেকেই ধান সিদ্ধ দিচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে রাত জেগে ধান সিদ্ধ দিচ্ছেন কৃষাণীরা, দিনে একদিকে ধান রৌদ্রে শুকাচ্ছেন, অন্যদিকে ধানের খড় ও রোদে শুকাচ্ছেন। রোদে শুকানো ধান কেউ কেউ গোলায় তুলে রাখছেন। কেউ প্রয়োজনে ধান বাজারে বিক্রি করছেন। সবকিছু মিলিয়ে বিভিন্ন ব্যস্ততায় দিন পার করছেন উপজেলার কৃষিকাজের সাথে জড়িত সকল পরিবার।

মাঠে কয়েকজন কৃষক জানান, সময় মতো বৃষ্টি ও জমিতে সার দিতে পারায় ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এবার ধানের দামও বাজারে ভালো থাকায় কৃষকরা সঠিক দামে বিক্রি করতে পারছেন ধান। উপজেলার সুতাং বাজারে হালকা শুকনা আমন ধান ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে, চিকন ধান প্রতি মণ ১ হাজার ৯ শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার সুরাবই গ্রামের বাসিন্দা বাদল খান জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের ফলন ভালো হয়েছে, প্রতি একরে ১২ থেকে ১৩ মণ ধান ফলন হয়েছে, আর বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এবার লাভবান হবেন। তবে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সুরাবই অঞ্চলে বেশকিছু জমির ধান বন্য শুকরের উপদ্রবে নষ্ট হয়েছে, পরবর্তীতে গ্রামবাসী মিলে পাহারা দিয়ে সেই ধান কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছেন সেই সব জমির সবগুলো ধান কাটা শেষ হয়েছে।

হারভেস্টার মেশিন চালক মো: ছোটন মিয়া জানান, তারা এক দিনে ৫০ থেকে ১০০ একর জমির ধান কাটতে পারেন, তবে একসাথে পুরো মাঠের ধান না পাকায় তুলনামূলক কম ধান কাটতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত ধর জানান, এবার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় আমন ধানের আবাদ হয়েছে প্রায় ২৬ শ’ হেক্টর আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার টন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। এবার শায়েস্তাগঞ্জে বেশ কিছু কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন কাজ করছে। আমাদের নিজস্ব ৬টি আর বাইরের প্রায় ১৩টি মেশিন ধান কাটার কাজ করছে।

তিনি আরো জানান, খাদ্য বিভাগের ধান কেনা এ সপ্তাহেই শুরু হওয়ার কথা, আমরা কৃষক তালিকা খাদ্য বিভাগের কাছে দিয়েছি। খাদ্য বিভাগ এখন লটারির আয়োজন করে ধান কেনা শুরু করবে।


আরো সংবাদ



premium cement