২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইউরোপ পড়ি দিতে সাগর পাড়ে সিলেটের শতাধিক তরুণ

লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে নির্যাতনের গল্প শুনালেন সিলেটের যুবক

ইউরোপ পড়ি দিতে সাগর পাড়ে সিলেটের শতাধিক তরুণ - নয়া দিগন্ত

প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সর্বত্র পরিচিত সিলেট। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়েক লাখ সিলেটী বসবাস করছেন। এদের সিংহভাগই বিদেশে গেছেন বৈধ পথে। তবে অবৈধ পথে পা বাড়ানোর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর সিলেটের হাজারো তরুণ-যুবক ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান।

দুর্গম যাত্রা পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে পা রাখতে পারলেও বেশিরভাগের স্বপ্নই দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না মানবপাচার চক্রের লাগাম। প্রতিনিয়তই এ চক্রের ভিকটিম হচ্ছেন কেউ না কেউ। সুন্দর জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমিয়ে কখনো হতে হচ্ছে লাশ আবার কখনো জিম্মি হওয়াসহ সইতে হচ্ছে অমানবিক অত্যাচার। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও থেমে নেই অবৈধ এ কার্যক্রম।

ত্রিপোলির ক্যাম্পে অবস্থানরত একটি সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপের দেশ ইতালি ও গ্রিসে পাচারের অপেক্ষায় লিবিয়ার ত্রিপোলির জাওয়ারা সাগর পাড়ের আশপাশের এলাকার ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজারের মতো বাংলাদেশীকে জড়ো করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় শতাধিক তরুণ ও যুবক সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার রয়েছে। দালালচক্রের সাথে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তিতে ঢাকা থেকে তাদেরকে প্রথমে দেশ দুবাই নেয়া হয়। সেখান থেকে সময় সুযোগ মতো নেয়া হয় লিবিয়ার ত্রিপোলির জাওয়ারা সাগর পাড়ে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে তাদেরকে কাঠের নৌকায় তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া চলে।

সম্প্রতি স্বপ্নের দেশ ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে লিবিয়ার সীমান্তবর্তী জাওয়ারা সাগর পাড়ে কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়েন শতাধিক বাংলাদেশী। তাদেরকে আইওএম’র সহায়তায় নেয়া হয় লিবিয়ার ত্রিপোলির ডিটেনশন ক্যাম্পে। সেখান থেকেই সাড়ে ৩ লাখ টাকার চুক্তিতে মুক্তি মেলে সিলেটের বিয়ানীবাজারের এক যুবকের। তিনি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নয়া দিগন্তকে জানান, বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় পাচার হওয়া এসব বাংলাদেশীর সর্বশেষ অবস্থানের কথা জানিয়ে লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইউরোপের ভয়ঙ্কর মানবপাচারের বেশকিছু চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, লিবিয়ায় আসার পর ধরা পড়ে অনেক বাংলাদেশী বর্তমানে এদেশীয় (লিবিয়ায়) দালালদের হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। টাকা না দেয়ার কারণে অনেকের মুক্তি মিলছে না। দফায় দফায় তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ফোন করে টাকা চাচ্ছে তারা। এর জন্য দ্রুত তদন্ত করে প্রথমেই বাংলাদেশের দালালদের গ্রেফতার করা দরকার। পাশাপাশি বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসও যেন আটকদের উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ নেয়। নতুবা এই মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যদের হাতে বাংলাদেশের আরো অনেক মানুষ নিঃশেষ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমি লিবিয়ার সাগর পাড়ের আশপাশের ক্যাম্পগুলোতে যে চিত্র দেখেছি সেই হিসাবে ১৫ হাজারের মতো বাংলাদেশীকে জড়ো করা হয়েছে। এদের সাথে ঘানা, আফ্রিকা ও সুদানসহ অন্য রাষ্ট্রেরও নাগরিক রয়েছে।

সাগর পাড় থেকে ক্যাম্পের দূরত্ব কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ১০-১৫ মিনিটের হাঁটার পথ হবে। সেখানকার লোকজন সবসময় সশস্ত্র অবস্থায় থাকে। মনে হয় প্রশাসনের সাথে তাদের একটা চুক্তি আছে। তা না হলে কিভাবে এতো লোক সেখানে জড়ো করে তারা?

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার মতো কেউ যেন ভুল না করেন সেজন্য আমি এসব তথ্য প্রকাশ করেছি।

বাংলাদেশী দালালের মধ্যস্থতায় লিবিয়ার গুলসেল ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় মুক্তি পাওয়া আরো এক সিলেটী যুবক নাম আব্দুছ সামাদ জুনেদ।

তিনি জেলের বর্ণনা দিয়ে জালালাবাদকে বলেন, আমি দেড় মাস ছিলাম ডিটেনশন ক্যাম্পে। এই সময়ে ক্যাম্পে সকালের নাশতা ঠিকমতো দিতো না তারা। ২৪ ঘণ্টায় দুইবেলা খাবার দিতো। তাও অল্প। পানি দিতো না। টয়লেটের ট্যাব থেকে আমাদের পানি খেতে হতো। মোবাইল নিয়ে কারো ভেতরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমি কৌশল করে মোবাইল নিয়ে সেখান থেকে দু’টি ছবি তুলেছিলাম।

তিনি বলেন, ক্যাম্পে এক রুমে যেখানে থাকার কথা ৫০ জনের সেখানে থাকতে দিচ্ছে ৩০০-৪০০ জনকে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি অন্যায়। আমি সাড়ে তিন লাখ টাকায় মুক্তি পেয়েছি। তবে দেখেছি ক্যাম্পে এমনো বাংলাদেশী আছেন, যারা এক বছরেও তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলতে পারেননি। আত্মীয়-স্বজন মনে করেছে, তার লোক মনে হয় মারা গেছে নতুবা সাগরে ভেসে গেছে।

বাংলাদেশ থেকে কিভাবে লিবিয়ায় গেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে ঢাকার এক দালালের চুক্তি হয়েছে ৯ লাখ টাকায় সে আমাকে ইউরোপে ঢুকিয়ে দেবে। এর জন্য প্রথমে দালাল কোনো টাকা নেবে না। যাওয়ার পর আমার আত্মীয় টাকা পরিশোধ করবে এই শর্তে আমি রাজি হয়ে যাই। রামপুরা আবুল হোটেলের পাশের একটি অফিস থেকে শাহিন নামের এক ব্যক্তি আমার দুবাই পর্যন্ত যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, টিকিট ভিসা ও সাথে এয়ারপোর্ট পার হওয়ার জন্য ৫০০ ডলার সাথে দিয়ে দেয়। ঢাকার বিমানবন্দর কন্ট্রাক্ট থাকায় বেশি জেরা করা হয়নি। পরে দুবাই পৌঁছে ৩ দিন থাকার পর বেনগাজির ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয় আমাদের। এর আগে চুক্তি মোতাবেক ৫ লাখ টাকা আমার পরিবারের কাছ থেকে নেয়া হয়। আর ওই ফ্লাইটে সবাই ছিলো বাংলাদেশী।

সামাদ আরো বলেন, বেনগাজি থেকে সড়কপথে কয়েক শ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার শেষ সীমানা জাওয়ারা সাগরপাড় সংলগ্ন সীমান্তের ক্যাম্পে। গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর সাগরপাড়ের আশপাশে ক্যাম্প থেকে এক দিন কাঠের নৌকায় তুলে দেয়া হয় আমাদের। নৌকায় উঠানোর আগেই চুক্তি অনুযায়ী ৮ লাখের বাকি ৩ লাখ টাকা নিয়ে নেয় বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, নৌকা ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই লিবিয়ান কোস্টগার্ডের সদস্যরা এসে আমাদেরকে ধরে ফেলে। তুলে দেয়া হয় পরে আইওএমের হাতে।

তিনি বলেন, দূতাবাস থেকে যেসব কর্মকর্তা মাসে এক-দুবার ত্রিপোলির ক্যাম্পে ভিজিট করতে যান তারা সঠিকভাবে খোঁজ নিলে কিন্তু অনেকের কষ্ট কম হতো। অন্তত খাবারের যে কষ্ট তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মুসা মো: শরীফুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ দালাল ইউরোপে পাঠানোর নামে মানবপাচারে সক্রিয়। চক্রের মূল হোতারা দেশের বাইরে বসেই কাজ করেন। এমন দালালচক্রের হাত থেকে এখন পর্যন্ত র‌্যাব ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করেছে। ইতোমধ্যে সিলেট বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতারও করেছে র‌্যাব।


আরো সংবাদ



premium cement
থামছে না পুঁজিবাজারে পতন বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোট শুরু: নাগাল্যান্ডে ভোটার উপস্থিতি প্রায় শূন্য কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির হাল ধরার কেউ নেই : ওবায়দুল কাদের পাবনায় ভারতীয় চিনি বোঝাই ১২টি ট্রাকসহ ২৩ জন আটক স্বচ্ছতার সাথে সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী মিয়ানমার বিজিপির আরো ১৩ সদস্য পালিয়ে এলো বাংলাদেশে শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে ২ ভাইকে হত্যা ইরানে ইসরাইলি হামলার খবরে বাড়ল তেল সোনার দাম যতই বাধা আসুক ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাবো : ডা: শফিকুর রহমান

সকল