২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সেই প্রবাসী নারীর লন্ডন যাওয়ার ব্যবস্থা করল বিমান কর্তৃপক্ষ

সেই প্রবাসী নারীর লন্ডন যাওয়ার ব্যবস্থা করল বিমান কর্তৃপক্ষ - ছবি : সংগৃহীত

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নারী জামিলা চৌধুরীকে রেখে বিমান চলে যায়। এ ঘটনায় সর্বত্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বিমানবন্দরের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার রাতে তার বাসায় গিয়ে ৪ আগস্ট তাকে লন্ডন পাঠানোর টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নারীর সাথে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার তৈরি করে।

গত ২৮ জুলাই সিলেট থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাইটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১-এর যাত্রী ছিলেন ভুক্তভোগী প্রবাসী জামিলা চৌধুরী। কিন্তু তিনি ওই দিন যুক্তরাজ্য যেতে পারেননি ওসমানী বিমানবন্দরের কতিপয় কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক ও অন্যায় আচরণের জন্য।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জামিলা চৌধুরীর বাসায় যান ওসমানী বিমানবন্দরের একটি প্রতিনিধি দল। বাসায় গিয়ে তাকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সান্ত্বনা দেন এবং আগামী ৪ আগস্ট যুক্তরাজ্য যাওয়ার জন্য টিকেটের ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। সেই সাথে তদন্তসাপেক্ষে দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেয় প্রতিনিধি দল।

জানা যায়, গত বুধবার জামিলা চৌধুরী নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টারে পৌঁছালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তার কাছে লোকেটর ফর্ম চান। তখন নিজ মোবাইলে লোকেটর ফর্মটি দেখালেও প্রিন্ট কপি চান এক কর্মকর্তা। এখান থেকেই মূলত ঘটনার শুরু।

এরপর ফর্ম প্রিন্টের বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ওজনের জন্য নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন বলে অভিযোগ জামিলা চৌধুরীর।

জামিলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার লাগেজে অতিরিক্ত মালামালের কারণে আমার কাছে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন তারা। আমি তা দিতে অপারগতা জানাই এবং বলি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেবার জন্য। কিন্তু ওই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার উপর পাসপোর্ট ছুঁড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তাকেও অনেক অনুরোধ করি, কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করেনি।’ এসময় জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরে নিজের অভিযোগ জানাতে চাইলেও তার অভিযোগ কেউ গ্রহণ করেনি।

বিমানবন্দরে থাকা অবস্থায় নিজের মোবাইলে কয়েকটি ভিডিও করেন মিসেস চৌধুরী। একটি ভিডিওতে দেখা যায় কর্তব্যরত বিমান কর্মকর্তা বলছেন ‘আমাদের মধ্যে হিউমিনিটি (মানবতাবোধ) নেই। আপনি ম্যানেজারের কাছে যান, আমরা আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারব না।’ আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাহায্য চাইতে গেলে এক কর্মকর্তা লাগেজ বেল্টের উপর দিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছেন।

তবে বিমান কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফ্লাইট ধরতে না পারার কারণ হিসেবে বলছেন, অতিরিক্ত ওজনের লাগেজের কথা।

সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত বলেন, ওই যাত্রীর সাথে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি মালামাল বেশি ছিল। প্রতি কেজি ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসেবে এক লাখ টাকার ওপরে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন তখন কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে।

বিমান বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রতি কেজি অতিরিক্ত ওজনের জন্য ১০ পাউন্ড ফি উল্লেখ থাকার কথা বললে তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে কী আছে জানি না, তবে আমাদের এটাই ধার্য করা আছে এবং তা নিয়মমাফিকই নেয়া হচ্ছে।’

ওমর হায়াত আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাউন্টার বন্ধ করতে হয়। কিন্তু ওই যাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লাগেজের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই তাকে রেখেই বিমান ছাড়তে হয়েছে।
সূত্র : ইউএনবি

 


আরো সংবাদ



premium cement