২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীমঙ্গলে স্বেচ্ছাশ্রমে হাইল হাওরে ধান কাটার উৎসব

শ্রীমঙ্গলে স্বেচ্ছাশ্রমে হাইল হাওরে ধান কাটার উৎসব - ছবি : নয়া দিগন্ত

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলামের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে হাইল হাওরে ধান কাটার উৎসব পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার কালাপুরর ইউনিয়নের হাইল হাওরের পাড়ের বরুণা গ্রামে এই ধান কাটা হয়। এতে সরকারি কর্মকর্তা, ছাত্র, শিক্ষক, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে হাইল হাওরে কৃষকের বোরো ধান কেটে দেন।

চলতি সপ্তাহে সিলেট অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলমা বুধবার উপজেলা প্রশাসন শ্রীমঙ্গলের ফেসবুক আইডি ও পেইজে স্বেচ্ছাশ্রমে হাওরে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি পোস্ট করেন। ফেসবুকে তার এ পোস্ট প্রচুর সাড়া পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ দিন বিভিন্ন পেশার ১২৮ জন মানুষ সক্রিয়ভাবে ধান কাটা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন এবং বরুণা গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়ার ৭৫ শতাংশ ও জসিম উদ্দিনের ৪৫ শতাংশ জমির ধান কেটে দেন। ধান কাটায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মাঝে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের ১৯ জন কর্মকর্তা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক ও দফতরি, ৩০ জন ছাত্রলীগ কর্মী, সবুজবাগ ম্যারাথন গ্রুপের ১২ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় চা সংসদের ৯ জন, উদ্দীপ্ত তারুণ্য সংগঠনের সাতজন অংশগ্রহণ করেন।

অংশগ্রহণকারী এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বলেন, উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেইজ দেখে আমরা ইউএনও স্যারের সাথে যোগাযোগ করি। কৃষকের ধান কেটে দিতে পারায় আমাদের খুব খুশি লাগছে।

কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: একরামুল কবির বলেন, ইউএনও স্যারের আহ্বানে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষক পরিবারের সদস্যরা এই কাজে অংশগ্রহণ করে কৃষক পরিবারের উপকার করতে পারায় মনে খুব আনন্দ লাগছে।

কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, দুর্যোগের পূর্বাভাস জেনে তিনি খুব চিন্তায় ছিলেন। তার জমির ধান কেটে দেয়ায় তিনি এখন চিন্তামুক্ত।

কৃষক রুবেল মিয়া জানান, তিনি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছিলেন না। এই ধান কাটাতে তার পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতো। এখন তার টাকাও বাঁচলো এবং টেনশন মুক্ত হলো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, এবছর উপজেলায় ৯ হাজার ৬৫২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমি হাওরের নিম্নাঞ্চলে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আর ২০ শতাংশ ধান কেটে ফেলতে পারলে আমাদের কোনো প্রাকৃতিক ঝুঁকি থাকবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা আবহাওয়া অফিস থেকে তথ্য পেলাম সিলেট অঞ্চলে বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে হাওর অঞ্চলে বন্যা হতে পারে। ইতোমধ্যে হাওর অঞ্চলে ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। যদি বন্যা হয় তাহলে সব ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে কৃষকদের যেমন ক্ষতি হবে, ঠিক তেমনি আমাদেরও ক্ষতি হবে। কারণ এই ধান থেকে চাল হয়েই আমাদের আহার হয়। মূলত এজন্যই আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার উদ্যোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, কোনো ফটোসেশনের জন্য কেউ আজ ভালো কাজে সামিল হননি। কৃষকদের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য সবাই মিলে কৃষকের বোরো ধান কেটে দিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement