২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেধাবী মেয়ে তাসনিমের মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার গল্প

মেধাবী মেয়ে তাসনিমের মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার গল্প - ছবি : নয়া দিগন্ত

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন সাদা এপ্রোন গায়ে জড়িয়ে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে কঠোর মনোবল আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে নিজেকে তৈরি করে সেই স্বপ্নের সিড়ির প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে উঠতে পেরেছে। জাতীয় মেধানুসারে ৩১২তম স্থান অধিকার করে চান্স পেয়েছে রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে। বলছি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার পাঁচ নম্বর কালাপুর ইউনিয়নের সিরাজনগর গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ওয়াহিদুজ্জামান (ফুলন) ও সালমা খাতুনের মেধাবী মেয়ে তাসনিম ইবনাতের কথা।

জানা যায়, বেসরকারি এনজিও সংস্থায় চাকরিজীবী বাবার দুই ছেলে-মেয়ে’র মধ্যে তাসনিম বড়। অত্যন্ত মেধাবী তাসনিম ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ছিল গভীর মনোযোগী। প্রাইমারির প্রতিটি ক্লাসে ফাস্ট গার্ল হিসেবে স্থান দখল করে রাখতো। মাধ্যমিক ও কলেজের প্রতিটি ক্লাসে রয়েছে সেরা পাঁচ এর মধ্যে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছে এবং পেয়েছে অন্তত ১০ থেকে ১২টি পুরস্কার।

বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আয়োজিত ২০১৯ সালের সৃজনশীল মেধার অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি ও সম্মাননা গ্রহণ করে তাসনিম। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি এমপি’র কাছ থেকে সে এ পুরস্কার গ্রহণ করে। এটি ছিল তার জীবনের স্বরণীয় প্রাপ্তি।

এ ছাড়া সে সিলেট বিভাগের সেরা মেধাবী নির্বাচিত হয়, উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত, রেটিনা স্টার এবং উন্মেষ মেডি অ্যাডভান্স এক্সপেরিয়েন্স পরীক্ষায় সিলেট বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে একই বছরে।

এ ছাড়া ২০২০ সালে বাংলাদেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াডে সিলেট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়াসহ রয়েছে আরো অনেক প্রাপ্তি।

শনিবার দুপুরে নয়া দিগন্তের সাথে কথা হয় তাসনিম ইবনাতের। সে জানায়, কাকিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস ও বৃত্তি পেয়ে পিএসসি’তে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়। এরপর শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস ও বৃত্তি পায়। বিদ্যালয়ে সকল প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠান, গার্লস গাইড সবকিছুতেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। তারপর ভর্তি হয় শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজে।

তাসনিম জানায়, স্কুল ও কলেজের দূরের ছাত্রী ছিল সে। আধাঘণ্টা মাটির রাস্তায় পায়ে হেঁটে আরো আধাঘণ্টা গাড়িতে চড়ে শহরে আসতে হতো তাকে। কলেজের স্যার-ম্যামসহ সবাই তাকে খুব ভালোবাসতো। প্রাইমারি স্কুলের জুনিয়ররা তাকে আদর করে জামি আপু বলে ডাকতো। আর কলেজে যাওয়ার পর সবাই তাসনিমকে এত বেশি ভালোবেসেছে যে, এত দূর থেকে কষ্ট করে কলেজে গেলেও স্যার-ম্যাম আর বান্ধবীদের ভালোবাসায় কোনো কষ্টই মনে হতো না তার।

তাসনিম বলেন, ‘বই পড়তে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস ও বিজ্ঞানভিত্তিক বই পড়ি। আমার অবসরগুলো বই পড়েই কাটে। পাঠ্যবইয়ের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হচ্ছে গণিত। স্যাররা বোর্ডে প্রশ্ন লেখার সাথে সাথে আমার অঙ্ক করা শেষ হয়ে যেত। স্যাররা আমাকে সবসময় মোটিভেট করতেন। যুব রেড ক্রিসেন্ট শ্রীমঙ্গল কলেজ শাখার সদস্য হয়ে মানুষকে রক্তদানে উৎসাহিত করতেও কাজ করেছি আমি। স্কুল ও কলেজ জীবনে ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ল’ইয়ার, প্রোগ্রামার, ম্যাথমেটিশিয়ান আরো কত কিছু হওয়ার কথা মাথায় এলেও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সব সময় দেখতাম। আমি সবার কাছে দোয়া প্রার্থী যেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।’

বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে তাসনিম বলেন, ‘যতটুকু পড়লে আমার পড়া সম্পন্ন হতো ততটুকুই আমি পড়তাম, সময় ধরে কখনো পড়িনি। তবে আমার দৈনন্দিন পড়া কখনো জমিয়ে রাখতাম না। লেখাপড়ার জন্য কখনো মা-বাবা আমাকে চাপাচাপি করেননি। বরং আমার আম্মু-আব্বু বলতেন এত পড়তে হবে না। মেডিক্যালে না হলে আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কোনো চাপ নেয়ার দরকার নেই। রেজাল্টের আগের দিন রাতেও তারা আমাকে বুঝিয়ে বলেছেন অন্য কোথাও পড়াবেন সমস্যা নেই। তারা আমাকে সবসময় সাপোর্ট করতেন।’

কলেজ লাইফেই অ্যাডমিশনের রুট গড়ে নেয়া উচিত জানিয়ে তাসনিম বলেন, ‘আমার সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী এবং আমার বাবা-মা আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। উনাদের দোয়া ও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যেন মহান আল্লাহর ইচ্ছায় একজন ভালো ডাক্তার হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে মানুষের সেবা ও পেশাদারী দায়িত্ব পালন করতে পারি।’


আরো সংবাদ



premium cement