সাজার বদলে ৪৯ শিশুকে দেয়া হলো বই, থাকবে মা-বাবার জিম্মায়
- তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ
- ২০ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৫৭
সুনামগঞ্জে ৪৯ শিশুর ভবিষ্যৎ বাঁচাতে আদালত যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। বিভিন্ন অভিযোগে পৃথক ৩৫টি মামলার ৪৯ শিশুর মামলার রায়ে তাদের মা-বাবার জিম্মায় থাকার আদেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: জাকির হোসেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: জাকির হোসেন বুধবার দুপুরে আসামি, আইনজীবী ও তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ওই সব মামলায় ব্যতিক্রমী এই রায় ঘোষণা করেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী এসব মামলায় তাদের প্রত্যেকের কম-বেশি সাজা হওয়ার কথা ছিল। শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে তাদের নিয়মিত হাজিরা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে সকল মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত। বিচারকের এ সিদ্ধান্তে একদিকে যেমন মা-বাবার দুশ্চিন্তার অবসান হয়েছে অপরদিকে তারা তাদের আদরের সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ৪৯টি শিশু এখন নিজ বাড়িতে তাদের মা-বাবার জিম্মায় থাকবে। কিন্তু এই সময়কালে তাদের ১০টি শর্ত পালন করতে হবে। শর্ত পালনের বিষয়টি জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো: শফিউর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে থাকবে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, ৩৫ শিশু অপরাধ মামলায় একসাথে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন আদালত।
আদালত বলেছে, প্রবেশনের সময় অপরাধে জড়িত শিশুদের বাবা-মায়ের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা ও বাবা মায়ের সেবা যত্ন করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মানা ও ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে হবে। প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগাবে ও পরিচর্যা করবে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ ও মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সাথে নিজেকে জড়ানো যাবে না।
শিশুদের নিয়ে এমন রায় দেয়ার সময় আদালত উল্লেখ করেন, এই রায়ের ফলে ছোটখাট অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে এবং শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেয়েছে। মা-বাবা তাদের আদরের সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেয়েছে।
মামলা সূত্রে আরো জানা যায়, প্রবেশনে দেয়া এসব শিশু সাধারণ মামলা ও মারামারি মামলার আসামি ছিল। জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো: শফিউর রহমান জানান, প্রবেশনকালে এই শিশুরা শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সেটির তত্ত্বাবধায়ন করা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে এসব শর্ত পালনে তাদের সহযোগিতা করা ও পাশে থাকা। তিন মাস পর পর আদালতে ওই বিষয়ে আমাকে প্রতিবেদন দিতে হবে। সবার শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: জাকির হোসেনের লেখা ১০০ মনীষীর জীবনী বই ওই ৪৯ শিশুর হাতে তুলে দেয়। এই রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে ওই শিশুদের স্বজনদের উৎফুল্ল ও আনন্দ মুখরিত হয়ে ওঠে।