১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে জমি, দুশ্চিন্তায় আমন চাষীরা

সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে জমি, দুশ্চিন্তায় আমন চাষীরা - নয়া দিগন্ত

গত কয়েক দিনের টানা অবিরাম বর্ষণ আর ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানিতে সুনামগঞ্জে চতুর্থ বারের মতো হাওর ও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় রোববার পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ঘোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বাড়লেও বন্যার সম্ভাবনা আপাদত নেই। পানি বৃদ্ধির ফলে আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।

এছাড়া জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার সাথে জেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টিতে জেলার প্রায় দুই হাজার হেক্টরের উপরে আমন জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এদিকে বন্যার কারণে বর্ষার শেষ মওসুমে অসময়ের বৃষ্টিতে বেশিরভাগ আমন জমি আবার পানিতে ডুবে গেছে। প্রায় সপ্তাহ খানেক লাগাতার বৃষ্টি থাকায় রোপা আমন ধানের ক্ষেত পঁচে যাচ্ছে। কয়েক হাজার আমন চাষী বিপাকে পড়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ৬০ হেক্টর আমন জমি ডুবেছে দাবি করলেও আমন চাষীরা বলেছেন, ডুবে যাওয়া জমির পরিমাণ এর চেয়ে বহু বেশি।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরপর তিন বন্যার কারণে এ বছর প্রায় একমাস বিলম্ব হয়েছে আমন চাষের। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিলম্বিত সময় শেষ হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৮১ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। প্রথম বন্যায় সরকারি হিসেবে ৫৯ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর চেয়ে দ্বিগুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরে আরো দুই বন্যায় বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার কারণে প্রায় একমাস নিমজ্জিত ছিল আমন ক্ষেত। ফলে যথাসময়ে ধান লাগাতে না পারায় বিলম্ব হয় আমন চাষ। কোনমতে টানা বৃষ্টির মধ্যে আমনচাষ শেষ করতে পারলেও রুদ্র প্রকৃতির কারণে স্বস্তিতে ছিলেন না চাষীরা।

এরমধ্যে প্রায় প্রতিদিনই গুড়ি গুড়ি ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর তিনদিন টানা ভারি বৃষ্টিপাতে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে বিভিন্ন উপজেলায় সদ্য রোপণ করা আমনক্ষেত ডুবে যায়। কাঁচা ধান ডুবে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। সরকারি হিসেবে ওইসময়ে ৬০ হেক্টর জমির আমন ধান নিমজ্জিত হয়েছে বলা হলেও কৃষকরা জানিয়েছেন নিমজ্জিত ক্ষেতের পরিমাণ প্রায় হাজার হেক্টর হবে। ওইসব জমিগুলো সদ্য রোপণ করার সাথে সাথে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতি হয়েছে।

তাছাড়া ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা প্রখর রোদের কারণে নিমজ্জিত ওইসব ক্ষেত দ্রুত ভেসে গিয়ে শুকিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ধানের চারা। যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। অনেক কৃষকের ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের, সদর উপজেলার গৌরারং, রঙ্গারচর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ, ধনপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের চাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, জেলার ১১ উপজেলায়ই এবার আমনের চাষাবাদ হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল-১১ হাজার ৬০০ হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ১৪ হাজার ৫৬০, বিশ্বম্ভরপুরে ৮ হাজার ৭০০, জগন্নাথপুরে নয় হাজার ৪৫৮, জামালগঞ্জে তিন হাজার ৯৫০, তাহিরপুরে ছয় হাজার ১০০, ধর্মপাশায় ৫৩৪, ছাতকে ১৩ হাজার ১০০, দিরাইয়ে দুই হাজার ৭১৫ ও শাল্লায় চার হাজার ৭০ হেক্টর। সব মিলিয়ে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৩৮৭ হেক্টর। কৃষি বিভাগের দাবি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হেক্টর বেশি চাষাবাদ হয়েছে অর্থাৎ ৮১ হাজার ৩৯৫ হেক্টর আমন চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিপাতে আবারও শঙ্খার মধ্যে পড়েছেন আমন চাষীরা।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, তিন বার বন্যার কারণে চলতি সুনামগঞ্জে আমনচাষ প্রায় একমাস পিছিয়ে গেছে। এই কারণে এই বছর ফলন কিছুটা কমবে। সাপ্তাহ ব্যাপী টানা বৃষ্টির কারণে এখন কিছু জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে কৃষকের কিছুটা ক্ষতি হবে।

সুনামগঞ্জ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানান, সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ শহরের পাশের ষোলঘর অংশে পানি সাধারণ বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান বন্যার পানি বাড়তে থাকায় জেলার ১১টি উপজেলার নির্বাহী অফিসারদের নিয়ে জরুরী মিটিং করা হয়েছে এবং ত্রানসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। যে ২ এলাকা প্লাবিত হবে তাৎক্ষণিক বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement