২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঘাস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহকারী ইসমাইলের জীবনকথা

ইসমাইলের পেশা গবাদি পশুর খাদ্য-ঘাস আর জগাধান বিক্রি করা। - ছবি : নয়া দিগন্ত

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মনু কূলের গ্রাম একামধু। সেই গ্রামেই ছিল ইসমাইল মিয়ার বসবাস। এক সময় তার সবই ছিলো। সাজানো গুছানো বাড়িঘর। সুখ-শান্তির সংসার। ক্ষেত-খামারের আয়-রোজগারেই জীবন চলতো তার। কিন্তু অব্যাহত নদী ভাঙ্গন তার সবকিছু কেড়ে নিয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কয়েক বছরেই নিঃস্ব হয়ে যান। সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন।

পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে আসেন একই ইউনিয়নের দক্ষিণটেংরা গ্রামে। এখানে একটি ভাড়া বাড়িতে বউ বাচ্চা নিয়েই এখন বসবাস করছেন। সংসার চালাতে জীবিকার সন্ধান করেন তিনি। অবশেষে গবাদি পশুর খাদ্য ঘাস আর জগাধান বিক্রি করেই চলে তার জীবন। অনেকে নানাভাবে নানা পেশায় জীবন চালালেও তার পেশা গবাদি পশুর খাদ্য-ঘাস আর জগাধান বিক্রি করা।

শরতের এক দুপুরে দেখা মিলে ইসমাইলের। তিনি রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজার শহীদ সুর্দশন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে গবাদি পশুর এসব খাবার বিক্রি করছিলেন। এ সময় তার সাথে কথা হলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন জীবন আর জীবিকার কথা।

প্রতিদিন গবাদি পশুর এসব খাদ্য হাওর থেকে কিনে নিয়ে আসেন। একেক আঁটি ধানগাছ ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। মাঝে কিছু ভালো দাম পাচ্ছিলেন। তবে তার দেখাদেখি আরো কয়েকজন এ পেশায় এগিয়ে আসায় দাম পড়ে গেছে। এখন প্রতি আঁটি ১০ টাকাতেই বিক্রি করতে হয়।

জগাধানের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, চাষিরা হাওরে এসব ধান চাষ করে। এ পর্যন্ত তিনবার এ ধান কাঁটা হয়েছে। আবারো ধানের গোড়া থেকে পাতা গজাবে। আবারো বিক্রি হবে। এ জগাধান বারো মাসই কিনতে পাওয়া যায়। তবে হাওরের ঘাসে রয়েছে অনেক কদর। পৌষ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত মিলে এসব ঘাস।

জানা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু গো-খামারি এক সময় তার কাছ থেকে নিয়মিত ঘাস কিনে নিতেন। এতে একটু লাভ বেশি ছিলো কষ্টও ছিলো কম। সম্প্রতি এসব খামারিরা না আসাতে সারাদিন বসেই কাঁটাতে হয়। তবে প্রতিদিন দুই থেকে তিন শ’ আঁটি বিক্রি হয়ে থাকে।

তিনি জানান, গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ ছাড়াও এর অনেক ব্যয় রয়েছে। তারপরও দিন শেষে চার-পাঁচ শ’ টাকা আয় হয়। আর এ দিয়েই কোনোমতে পরিবারের চার সদস্যের মুখের খাবার জোগাচ্ছেন তিনি। এ ঘাস বিক্রির টাকার আয় দিয়ে তিনি দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে এক ছেলে- শরীফ। আর ছোট ছেলে আরফিন পড়ছে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। করোনার এ ভীতিকর জীবনে ইসমাইল মিয়ার এখন একটাই স্বপ্ন- সুস্থভাবে বেঁচে থাকা।


আরো সংবাদ



premium cement