২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভাই আমারে কিছু দিবানি, চাল দিবা না টেহা দিবা

ভাই আমারে কিছু দিবানি, চাল দিবা না টেহা দিবা - ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের হাওরে বন্যায় যেদিকে চোখ যায় সে দিকেই শুধু জল-তরঙ্গের খেলা। হাওরের দ্বীপ সাদৃশ বিছিন্ন গ্রামের বানভাসি মানুষ ট্রলার নৌকা দেখলেই ত্রাণের জন্য ছুঠে আসেন। তারা মনে করেন তাদের জন্য কেউ খাবার নিয়ে এসেছেন। ৭ থেকে ৮ দিনের সৃষ্ট বন্যায় লাখো মানুষের চুলায় বসেনি হাড়ি-পাতিল। তাদের কাছে থাকা যৎ সামান্য শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের। সরকারি বরাদ্দে যে পরিমান ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে তা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। এখনো অনেক পল্লী গ্রাম রয়েছে যেখানে মানুষ ত্রাণ পায়নি।

সুনামগঞ্জের হাওরের পল্লী গ্রাম চান্দেনগর গ্রামের ৩০ উর্ধ্ব তিন সন্তানের জননী শেফালী বেগম বলেন, ভাই আমরে কিছু দিবানি। চাল দিবা না টেহা (টাকা) দিবা। আমরাতো বহু সময় খাড়া হইয়া তোমরার ট্রলার দেখতাছি। ভাবতাছি তোমরা মনে হয় আমরার লাগি কিছু খাওন লইয়া আইতাছো। দিনে কোনো কোনো সময় এক বেলা, দুই বেলা, আধা পেট করেও খাওন পাইনা। বাচ্ছারার কান্দন সইতা ফারিনা, বুকের দুধ দিয়াও চুপ করাইতে পারি না। এ ভাবেই জীর্নশীর্ণ হয়ে কাতর অবস্থায় চাউল, খাবাব বা কিছু টাকার আকুতি জানিয়েছিলেন অসহায় এই মহিলা।

তার মতো সামিনা বেগম তিনি তার সন্তানকে সান্ত্বনা দিয়ে ব্রেড খেতে দিয়ে টিপ-টিপ করে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে পেটের ক্ষুধার না বলা কষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে তার মতো জুরমত বিবি, মাফিয়া বেগম, সুলতানা বেগম, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল হকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ ট্রলার নৌকার শব্দ শুনে ত্রাণের আশায় দীর্ঘক্ষণ বসা ছিলেন নদীর ঘাটে। তারা জানান, ট্রলার নৌকার শব্দ শুনতে পেলেই তারা মনে করেন ত্রাণ নিয়ে আসছেন কেউ। এ কারণেই সবাই জড়ো হন এক সাথে ত্রাণ পেতে।

দুই দফা বন্যায় জেলা শহরে কিছুটা পানি কমলেও হাওরের গ্রামে গ্রামে পানি ওঠার কারণে তাদের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই-শাল্লা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ জেলার হাওর পাড়ের বাসিন্ধারা ত্রাণের জন্য নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যায় তাদের ঘরে ও উঠানে কোথায়ও হাটু, কোমড় পানি প্রবেশ করার কারণে অনেকেই আজ চরম দূর্ভোগে দিন পার করছেন। এখন বাঁচার তাগিদে যে কারো কাছে হাত পাততে দ্বিধাবোধ করেন না তারা। এভাবেই চলছে হাওরের পল্লী গ্রামের বন্যার্ত মানুষের দিনকাল।

হাওরের জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের উদয়পুর, নাজিম নগর, শ্রীমন্তপুর, জসমন্তপুর, মিলনপুরসহ বেশ ক’টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার্ত অনেক পরিবারে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয়, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ নানাবিদ সঙ্কটে ঋণগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে এখন হাহাকার বিরাজ করছে। এই বিপর্যয়ের ঘূর্ণিপাকে পড়ে বানভাসি পরিবারের আর্তনাদ ও কান্না থামছে না। বানভাসি বিভিন্ন গ্রামের লোকজন এখন একবেলা, আধাবেলা ও অনেক পরিবারের সদস্যদের কোনো রকম শুকনো খাবার খেয়ে অভুক্ত থেকে দিন পার করছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের চেয়ে একবোরেই নগণ্য। যৎ সামান্য ত্রাণ তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। এমন পরিবারও রয়েছে এখনো কোনো ত্রাণ পায়নি।

বোরো ধান চাষ করে যাদের গোলায় বারো মাস ধান থাকতো, গোয়াল ভরা গরু আর হাওরের পানিতে মাছ থাকতো, আজ সেই গোলার ধান ভিজে অনেক পরিবারের মাথায় হাত দিয়েছেন। সপ্তাহ ব্যাপী ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় হাওরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সদৃশ্য গ্রামগুলোর অসংখ্য মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশপাশের উচু স্থানে থাকা অত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। কর্মজীবী মানুষেরা এখন কর্মহীন হয়ে চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে ও হাওরে পানিবন্ধি অসংখ্য পরিবার ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। নারী-শিশু, বয়ষ্ক মানুষ, গরু, ছাগল, হাস-মুরগীসহ গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে সব চেয়ে বেশি শঙ্কিত তারা।


আরো সংবাদ



premium cement
সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি

সকল