২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জের হাসপাতালে রোগী নেই, ফার্মেসিতে বেড়েছে ওষুধ বেচাকেনা

ফার্মেসির কর্মচারী ও মালিকরাই এখন ডাক্তার। তারা ওষুধ বেচাকেনা করছে দ্বিগুণ দামে - ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ভয়ে, আবার কেউ কেউ ভাইরাস পজেটিভ অসম্মানজনক মনে করে হাসপাতালে না যাওয়ায় সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার প্রতিটি হাসপাতাল ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীর সংখ্যা কমেছে। রোগী কম থাকলেও স্থানীয় হাট বাজারের ফার্মেসিগুলোতে নাম সর্বস্ব ডাক্তারের ওষুধ বিক্রির পরিমান বেড়েছে। করোনা আতঙ্কে ফার্মেসী ও হোমিওপ্যাথ ওষুধ ব্যবহারে আগ্রহ বেড়েছে রোগীদের। এতে করে ভুয়া ডাক্তার ও শিক্ষাগত যোগ্যতাহীন, ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন, ফার্মাসিস্ট প্রশিক্ষণ ছাড়া দোকান মালিক ও কর্মচারীদের ব্যবসা জমজমাট।

করোনাভাইরাসের শুরুতেই হাসপাতালে রোগী আসা বা ভর্তি হওয়া এবং বন্যা ও বন্যা পরবর্তী ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, জ্বর, দুর্বলতা, শরীর ব্যাথা ও মাথা ব্যাথায় করোনা সংক্রমণ আতঙ্কে হাসপাতালে বা স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না সাধারণ রোগীরা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় বন্যা পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি ও চর্মরোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। এবার এসব রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে খুবই কম। সাধারণ রোগে আক্রান্ত রোগীরা হাট-বাজারের বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে ওষুধ এবং হোমিওপ্যাথ ওষুধ ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। করোনা সংক্রমণের শুরুতেই জেলা শহরসহ হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন ফার্মেসিতে ও সাধারণ রোগের ওষুধ নিতে ভিড় দেখা গেছে। কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি, দুর্বলতা, শরীর ব্যাথা ও মাথা ব্যাথায় আক্রান্ত রোগী, বয়স্ক বা শিশুরা হোমিওপ্যাথ ও ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিতে দেখা গেছে।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ের শ্রীপুর বাজার, নতুন বাজার, বাগলী বাজারসহ উপজেলার প্রতিটি বাজারের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিতে আসা লোকজন জানান, ‘হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ছিলাম। রাতে জ্বর উঠেছিল, সাথে সর্দি ও কাশি আছে। তাই ওষুধ কিনতে এসছি আর সব মিলিয়ে ১০০ টাকার ওষুধ কিনেছি ফার্মেসি থেকে। আমিসহ সবাই এভাবেই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে খাই আর কমেও যায়। হাসপাতাল গিয়ে ডাক্তার দেখালে বলবে এই টেস্ট, সেই টেস্ট করার জন্য। এতে টাকা ও সময় নষ্ট হবে। আর এখন তো করোনা পরিস্থিতি। পরীক্ষা করার পর বলবে করোনা। আমি দিনমজুর মানুষ এতো ঝামেলায় যেতে চাই না।’

নতুন বাজারের শ্রমিক আশিক মিয়া বলেন, ‘জ্বরে ভুগছি ডাক্তার দেখাতে গেলেই পরীক্ষা আবার পরীক্ষা করালে ডাক্তার বলবে করোনা। তাই জামেলা এড়াতেই এখন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিতে এসেছি। ৬০-৮০ টাকার ওষুধেই ভালো হয়ে যাবো। আগেও ভাল হয়েছি। ফার্মেসির মালিক ও কর্মচারীদের দেয়া ওষুধেই ভাল। ডাক্তারের ধারে কাছে গেলেই বলবে করোনা। আসলে আমাদের এলাকায় করোনা নেই।’

নতুন বাজারের একজন ফার্মেসী ব্যবসায়ী জানান, সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সাধারণ রোগ হলে হাসপাতাল ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র না গিয়ে রোগীরা আমাদের ফার্মেসিতে আসে। আর করোনাভাইরাসের আগে আমার ফার্মেসিতে ৩-৪ হাজার টাকার ওষুধ বিক্রি করতাম। এখন বিক্রি দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

এভাবে ওষুধ বিক্রি করা সঠিক না- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কোনো সমস্যা হয় না। তাই আমরাও বিক্রি করছি যুগ যুগ ধরে। ওষুধ খেয়ে ভালো হচ্ছে তো সবাই।’

জেলার হালির হাওর পাড়ের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, সর্দি-জ্বর হলে শহর থেকে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিয়ে আসি। এই ওষুধে আমি ভালো ফলাফল পাই। করোনা সময়ে শহরে গেলেও চেম্বারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যায় না করোনার আতঙ্কে। সবাই সবার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ব্যস্ত। এই কারণে ফার্মেসির কর্মচারী ও মালিকরাই এখন ডাক্তার। তারা ওষুধ বেচাকেনা করছে দ্বিগুণ দামে। আর আমার মত অনেকেই ওষুধ নিয়ে খাচ্ছে।

ডাঃ সুমন চন্দ্র বর্মন জানান, মনে রাখতে হবে ফার্মেসিতে ওষুধের ব্যবসা যারা করেন তারা কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাধারণ রোগের ওষুধ দিলে ডোজ, ওষুধের পাওয়ার, খাবারের সঠিক নিয়ম, বয়স সবকিছু বুঝে শুনে ওষুধ লিখে দেন। রোগের কথা বলে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিলে ভালো ফলাফল আশা করা যায় না। যদিও এই ওষুধ খেয়ে অল্পদিনের জন্য রোগ কমে যায়। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাধারণ রোগের ওষুধ খাওয়া নিরাপদ। আর সাধারণ রোগ থেকেও জটিল রোগের লক্ষণ পাওয়া যেতে পারে- এমন ধারণা থেকে অন্যান্য পরীক্ষা করানোর কথা বলেন।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। আমরা সব সময় আগত রোগীদের গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।


আরো সংবাদ



premium cement