২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কচি হাতে বড় সংসারের হাল

জীবনযুদ্ধে এক অপরাজিত সৈনিক সোহাগ মিয়া - ছবি : নয়া দিগন্ত

সোহাগ মিয়া। বয়স ১০ বছর। তার সময় এখন পড়াশোনা করারা আর মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর। কিন্তু তার কচি হাত দুটিতে এখন শক্ত বোঝা। কাঁধে ছয় সদস্যের মুখে খাবার তোলার ভার।

বেগম সুফিয়া কামালের লেখা, ‘আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা/ তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।’ এ কবিতাংশটি সোহাগের বেলায় বিপরীত রূপে দেখা দিয়েছে। যে বয়সে তার লেখাপড়া আর খেলাধুলা করার কথা, এ বয়সে সে জীবনযুদ্ধে এক অপরাজিত সৈনিক। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই তাকে ভোর বেলা বের হয়ে সারাদিন খাটাখাটনি শেষে বাড়ি ফেরে রাতে। এই করোনা মহামারিকালেও সোহাগের অবসর নেই।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাধীন ৮নং শায়েস্তাগঞ্জ ইউপির মরড়া গ্রামের কবির মিয়ার বড় ছেলে সোহাগ। মা-বাবা, তিনভাই ও এক বোনসহ ছয় সদস্যের পরিবার তাদের। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ার কারণে কিশোর বয়সেই সংসারের গুরু দায়িত্ব পড়েছে তার উপর।

সোহাগ মরড়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর অনিয়মিত ছাত্র। এক বছর থেকে তার বাবা কবির মিয়া অসুস্থতাজনিত কারণে প্রায় পঙ্গু অবস্থায় বাড়িতেই আছেন। পারিবারিক দৈন্যদশার কারণে চিকিৎসা সঙ্কটে দিনাতিপাত করছেন তিনি। তাই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে ছোট্ট সোহাগকে। গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পান বিক্রি করে সে। প্রতিদিন শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার পাইকারি দোকান থেকে পান কিনে। তারপর আশেপাশের গ্রামগুলোতে ঘুরে পান বিক্রি করে। যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্য সামগ্রী কিনে। কিশোর বয়সে পড়াশোনা আর অর্থ উপার্জনের দোটানায় পড়ে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত শিক্ষার্থীর খাতায় নাম উঠেছে সোহাগের।

এ বিষয়ে মরড়া ইউপির ৪নং ওর্য়াড মেম্বার নুর হোসেন বলেন, সোহাগের বাবা এক সময় ব্যবসা করতেন। তিনি বর্তমানে কাজ করতে অক্ষম। আমি সোহাগের পরিবারকে সরকারী বরাদ্দ আসলে সহায়তা করার চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আম্বিয়া খাতুন জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই করোনাকালীন ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা শুরু হবে। আমি সোহাগের পরিবারকে সহায়তা করব এবং ভবিষ্যৎতেও তার পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। শিশু শ্রমিক সোহাগের প্রতি সমাজের বিত্তবানদের সোহাগভরা হাত প্রসারিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।


আরো সংবাদ



premium cement