১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বানের পানি বাড়ায় শঙ্কিত মানুষ

সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত - ছবি : নয়া দিগন্ত

টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়তে থাকায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জেলা শহরের কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করলেও জেলার ছাতক দোয়ারাবাজার, তাহিরপর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লাসহ ১১টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। অনেক পরিবার নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। পানি বাড়ার কারণে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের উজ্বলপুর নামক স্থানে সড়ক ভেঙ্গে জেলা সদরের সাথে উপজেলাবাসীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, দিরাই-শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর ও ছাতক-দোয়ারার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে জেলা শহরের আশপাশের দুই শতাধিকের উপরে অসহায় পরিবার সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে আশ্রয় নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করেছেন। ইতোমধ্যে জেলার সব কয়টি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, নতুনপাড়া, বড়পাড়া সাহেববাড়ি ঘাট, ষোলঘর হাজিপাড়া,জামতলাসহ অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়ি রাস্তাঘাটের পানি কিছুটা নামতে শুরু করলেও অধিকাংশ বাসাবাড়ি এখনো পানির নিচে রয়েছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, উপজেলা সদরের আশপাশ ও হাওর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বন্যায় ‘কোথাও বুক পানি, কোথাও কোমর সমান পানি হয়েছে। অধিকাংশ বন্যার্তদের ঘরে চাউল নাই, গ্যাসের চুলাও ডুবে গেছে। চুলা মেরামত করার মানুষ পাচ্ছেন না অনেকেই। লাকড়ি না থাকায় বহু পরিবার শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। এ সব ঘরে বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে রীতি মতো বিপাকে পড়েছেন বানবাসীরা।

জামালগঞ্জ লামা পাড়ার বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ‘অত ফানি অইছে মনে অয় ভাসাইয়া নিয়া যাই। বাচ্চাকাচ্চা নিয়া কোনো রখম খাইয়া না খাই দিন পার করতাছি আর আল্লারে ডাকতাছি।

মোঃ আবুল আজাদ জানান, তেলিয়া পয়েন্টে তার বাসায় তিন দিন ধরে হাটু পানি। তিনি ও তার স্ত্রী অসুস্থ। তাই বাচ্চাদের নিয়ে করুণ অবস্থার মধ্যে আছেন। তিনি না পাড়ছেন কাউকে বলতে, না পাড়ছেন লাইনে দাঁড়াতে। চুলা বন্ধ থাকায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পাড় করছেন।

এ দিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কোটি টাকার বেশি মাছের পোনা ভেসে গেছে। এছাড়াও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে অনেক। যা এখনো হিসাবের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে বেশি মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জানা যায়, গত বছর পাহাড়ি ঢলে ৬৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার ৩৪.৬৫ মে. টন মাছ এবং ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫ শত টাকার ২১ লাখ ৯৫ হাজার মাছের পোনা ভেসে যায়। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিলো ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৬০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ১৫.২১ হেক্টর আয়তনের ১১৭টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। ৪০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ২০.৩৭৫ মে. মাছ এবং ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১৪ লাখ মাছের পোনা ভেসে গিয়েছিল। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ টাকার। দোয়ারাবাজার উপজেলায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছিলো ৭ লাখ টাকার। ৫.০৫ হেক্টর আয়তনের ৩১টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ লাখ টাকার ১ মে.টন মাছ এবং ৪ লাখ টাকার ৭ লাখ মাছের পোনা। জামালগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় মৎস্য চাষীরাও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জামলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্ত বিশ্বজিত দেব বলেন, বন্যার্তদের মাঝে সরকারী ত্রাণ প্রদান চলমান রয়েছে। মৎস্য চাষীদের খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে তাদের জন্য প্রযোজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, ‘আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় মৎস্য চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমি ইতোমধ্যেই অনেক এলাকায় খোঁজ নিয়ে তাদের সরকারিভাবে সহযোগীতা করার চেষ্টা করছি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, বৃষ্টিপাতের পরিমান অনেকটা কম থাকায় বিভিন্ন জায়গাতে পানি কমতে শুরু করেছে।

তিনি জানান, জেলায় ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ১৪৮টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা দাড়িঁয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে ৪১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৯ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাহী অফিসারের নিকট পাঠানো হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের অব্যাহত সহায়তা চলমান রয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় (জামালগঞ্জ-তাহিরপুর-ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে) সরে জমিন পরিদর্শন করে বন্যার্তদের খোঁজখবর নিচ্ছি। যেখানে সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে সেখানে স্থানী প্রশাসন ও এলাকাবাসীকে নিয়ে আপাতত সমস্যার সমাধান করেছি। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ সব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক

সকল