২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দী, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ

সুনামগঞ্জে বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দী, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ - ছবি : নয়া দিগন্ত

গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়তে থাকায় সুনামগঞ্জের লাখো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। জেলায় ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ও ১৪৮টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১১০টি। কিন্ত বেসরকারি হিসেব মতে লাখো মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। জেলা শহরসহ ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লাসহ সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শহরের ষোলঘর পয়েন্টস্থ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকালের চেয়ে রোববার দুপুর পর্যন্ত ২৪ সেন্টিমিটার বেশি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ছাতক সুনামগঞ্জ ও সিলেটের রাস্তা পানির নীতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে সবচেয়ে বেশি বুঝিতে রয়েছে জেলার ছাতক উপজেলা। এখানে ছাতকের সুরমা নদীতে বিপদসীমার ১৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই উপজেলায় ইতোমধ্যে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, নতুনপাড়া, বড়পাড়া সাহেববাড়ি ঘাট, ষোলঘর হাজিপাড়া, জামতলাসহ অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়ি রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল নেই বলইে চলে। ফলে মানুষজন চরম বিপাকে পড়ে খাদ্য সংকটে ভূগছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলা শহরের সাথে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের উজ্জলপুরের উত্তরে মূল সড়ক ভেঙে জেলা সদরের সাথে জামালগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও সারা দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দিরাই শাল্লা ও ছাতক উপজেলার সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে ১১টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ৩ হাজার ৭৬৫ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ১৮৮ হেক্টর বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পাউবো বর্তৃপক্ষ।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব জানান, উপজেলা জরুরি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যায় প্লাাবিত সকল এলাকায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য উপজেলার সকল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে দেয়া সকল নির্দেশনা মোতাবেক কাজ ও তদারকি করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যেভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে তাতে বন্যার আশংঙ্কা থেকে জেলার প্রতিটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং বন্যায় কত হাজার পরিবার ঘরবন্দি হয়েছেন তাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখনো জানা না গেলে ও প্রায় লাখ মানুষ পানিবন্দি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে জেলায় রোপা আমন, সবজি ক্ষেত ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ও জানা যায়।

জেলা প্রশাসন জেলায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৪১০ টন চাল ও নগদ ২৯ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের হাতে পৌছে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সহিবুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে জেলা শহরসহ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যেভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে তাতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানায়, এই বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন জায়গাতে বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এজন্য জেলায় ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ও ১৪৮টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১১০টি। জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে ৪১০ টন চাল ও নগদ ২৯ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাহী অফিসারের নিকট পাঠানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কারো করোনা উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা স্থানে রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক সরবরাহ করাসহ চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটি মিটিং করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement