২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তাহিরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি লাখো মানুষ

তাহিরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি - ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের লাখো মানুষ। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র।

রোববার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৯৫ মিলিমিটার। আর সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা ১৯০ মিলিমিটার।

এদিকে জেলার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কে সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০টি গ্রামে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন।

উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো হলো বালিজুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণকূল, আনোয়ারপুর, পাতারি, তিওর জালাল, লোহাচুরা, বড়খলা, মাহতাবপুর বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া, ঘাগটিয়া, পাঠানপাড়া, গড়কাটি উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনীলাইন, রাজাই, শান্তিপুর, চানপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পুরান খালাস, সাদেরখলা, চতুর্ভজ, কাউকান্দি, জামলাবাজ তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জামালগড়, চিকসা, গোবিন্দশ্রী, গাজীপুর, টাকাটুকিয়া দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মারালা, নোয়ানগর, রাজধরপুর, পৈন্ডপ, নোয়াগাঁও, সন্তোষপুর, ইকরামপুর, পাঠাবুকা, লামাগাঁও, দুমাল, ভবানীপুর, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বাগলী, দুদের আউটা, ইন্দ্রপুর, মন্দিয়াতাসহ ৫০টি গ্রাম।

বালিজুড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য দক্ষিণকূল গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া জানান, পাহাড়ী ঢলের পানির তোড়ে দক্ষিণকূল গ্রামের সব রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। গ্রামের কোনো পরিবারেই রান্নাবান্নার কাজ করতে পারছে না। তারা শুকনো খাবার সংগ্রহ করে চাহিদা মেটাচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, আমরা উপজেলা দুর্যোগ কমিটির জরুরি সভা করেছি। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাহিরপুরের গ্রামীণ অবকাঠামো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠছে। শুকনো খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত চলছে। আমরা শুকনো খাবার নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেবো।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করতে সরকারের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান জানান, সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টির সাথে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ী ঢল নামছে। এ কারণে নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। উজানে চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এ কারণে পানি আরো বাড়বে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের জন্য ৪১০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ প্রায় ৩০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলার বন্যায় প্রায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারদের ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement