২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘অস্বাভাবিক মাথা মোটা রোগে’ আক্রান্ত শিশু উৎসকে বাঁচাতে সহযোগিতা প্রয়োজন

‘অস্বাভাবিক মাথা মোটা রোগে’ আক্রান্ত শিশু উৎসকে বাঁচাতে সহযোগিতা প্রয়োজন - নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের শ্যামরচর গ্রামে হতদরিদ্র পিতা-মাতার ১৩ বছরের উৎস নামের শিশুর মাথা মোটা রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। শ্যামার চরের অরুণ দে ও অর্পণা রানী দে’র এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় উৎস দে। তার জন্মের পর থেকে নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে এখন মৃত্যুর পথযাত্রী।

২০০৩ সালে যখন তার বয়স তিন বছর তখন কোমড়ের পাশে একটি টিউমার দেখা দেয়। তখনই অরুণ দে তার একমাত্র ছেলেটিকে সুস্থ করে তুলতে সহায় সম্বল বিক্রি করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে তার টিউমার অপারেশন করানো হয়। এরপর থেকেই ঐ শিশুরটি মাথা মোটা হতে থাকে। চারটি শিশুর মাথার চেয়েও অনেক বড় এই শিশুটির মাথা। ২০১৬ সালে এই অভাব অনটনের সংসারে অরুণ দে’র একমাত্র শেষ সম্বল ৪ শতক বসতভিটার জায়গাটুকু ও বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান। তখন ডাক্তাররা শিশুটির পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে তার কোমড়ের অপরেশনটা ভুল ছিল বলেই ছেলেটির মাথায় পানি জমে মাথা মোটা হওয়া শুরু করেছে। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যেমে তাকে বাঁচাতে হলে ভারতের মাদ্রাজে নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা খোলা নেই। শিশুটির চিকিৎসা করাতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। প্রায় তিন বছরে অর্থের সংকটের কারণে ও ছেলেটির চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়ে উঠেনি। অরুণের পাঁচ সদস্যের এই পরিবারের মাথা গোজার স্থানটুকু বিক্রি করে দেয়ায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নিজ ঘরে বসেই স্বর্ণের জোড়াাতলির কাজ করে দিনে কিছু টাকা রোজগার করতে পারলে পেটে ভাত জোটে। অন্যথায় তাদেরকে অনাহারে অর্ধহারে জীবনযাপন করতে হয়। ফলে একমাত্র ছেলে সন্তানটির চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে না পারায় হতাশ শিশুটির পরিবার। দিন যতই যাচ্ছে শিশুটির মাথা বড় হতে যাওয়ায় তার বেঁচে থাকা নিয়ে শংঙ্কায় তার বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা পেলে তাদের একমাত্র ছেলে বেচেঁ যাবে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন প্রত্যাশার কথাই জানান অরুণ দে ও তার স্ত্রী অর্পণা রানী দে।

Untitled-2

এ ব্যাপারে চরনারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন কুমার দাস তালুকদার বলেন, এই উৎস দের কোমড়ে অপারেশনের পর থেকে মাথায় পানি জমে দিন দিন মাথা অস্বাভাবিকবাবে মোটা হতে থাকে। ইতিমধ্যে তার পিতা অরুণ দে ছেলের চিকিৎসা করতে সিলেট এবং ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা ইউনিয়নবাসী যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি শিশুটির চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের মাদ্রাজে যেতে হবে। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। অরুণ দের পক্ষে এত টাকা জোগান দেয়া কোনভাবেই সম্ভব না। যার নুন আনতে পানতা ফুরায়। তাই সরকারের উচ্চ মহলের সুদৃষ্টি পেলে শিশুটি নতুন জীবন পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ ব্যপারে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস বলেন, এটা জন্মগত ত্রুটির কারণে এই অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, মস্তিস্কের ভেতরে যে ব্রেইনটি থাকে সেটি ক্লোজের উপর ভাসমান থাকে যেটাকে সি এস এফ বলা হয়। যখনই এই সি এস এফ রেগুলেশনের মধ্যে ক্রুটি থাকে তখন সি এস এফ-এর রেগুলেশনে যথাযথভাবে ক্রুটি থাকে একুয়ার্ড হতে পারে জন্মগত ও হতে পারে। ফলে এ কারণেই মাথায় পানি জমে মাথাটা বড় হতে থাকে আর ব্রেইনটা ছোট হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এই শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যায়। তিনি ঢাকা নিরোসাইন্স ইনস্টিটিউটে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন।

সমাজের বিত্তবানদের পাশাপাশি সরকার প্রধানের কাছে এই শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিবেন এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।


আরো সংবাদ



premium cement