২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তুহিন হত্যার ঘটনায় গোটা এলাকা শোকে স্তব্ধ আর ক্ষোভে উত্তাল

- ছবি : সংগৃহীত

বর্বরোচিতভাবে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে হত্যার ঘটনায় শোকে স্তব্ধ আর ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা। খুনিদের পাশবিকতা হার মানিয়েছে বর্বরতাকে।

খুনিদের ধিক্কার জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমে মন্তব্য করছেন অনেকেই। খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। সবার একটাই প্রশ্ন গ্রামে বিরোধ রয়েছে বড়দের মধ্যে, শিশু বাচ্ছার কি অপরাধ?

এরসাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পেছনে কি রহস্য রয়েছে জানতে চান এলাকাবাসী। বুধবার সরজমিন কাজাউড়া তুহিনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ জবানবন্দি দেয়া তুহিনের চাচা নাছিরের ঘরে তালা ঝুলছে।

নিহত তুহিনের ঘরের দরজা খোলা থাকলে সখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাশের ঘরে চাচা আব্দুল মোছাব্বিরের (ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার) ঘরে রয়েছেন তার সদ্য সন্তান প্রসবকরা স্ত্রী জরিনা বেগম ও তার মা। অন্য চাচাদের ঘরেও কেউ নেই। বাড়ীতে নেই কোন পুরুষ সদস্য।

সদ্য সন্তান প্রসবকরা চাচি জরিনা বেগম বলেন, নবজাতক সন্তানের কারণে রাতের অধিকাংশ সময় আমাকে নির্ঘুম থাকতে হয়। ঐ রাতে তুহিনদের ঘরে সুরগোল শোনে বাচ্ছার বাবা (স্বামী আব্দুল মোছাব্বির) কে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। পরিবারের সবাই কান্নাকাটি করে তুহিনকে খুঁজতে থাকেন। তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের লোকজন জড়িত তিনি বিশ্বাস করেননা।

নিহত তুহিনের মামা নুরুজ্জামানের মোবাইলে ফোন দিয়ে তুহিনের মায়ের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, তার মা অসুস্থ্য কথা বলতে পারছেননা।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কাজাউড়া গ্রামের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। একপক্ষের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার মিয়া, অপরপক্ষে নিহত তুহিনের স্বজনরা। গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও সরকারী ডোবা লিজ দেওয়াকে কেন্দ্র করে একাধিক হত্যা মামলাসহ ১০-১২টি মামলা রয়েছে। ২০০১ সালের জুন মাসে রাতের আধারে খুন হয় পাশের মধুপুর গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে মুজিবুর রহমান।

পরদিন সকালে কেজাউড়া গ্রামের পাশে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মুজিবের পিতা আনোয়ার মিয়া ও নিহত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরসহ ১৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলা থেকে আনোয়ার মিয়ার ভাতিজা এলাইছ মিয়া তার ভগ্নিপতি কনরুল ও আব্দুল বাছির ছাড়া সবাইকে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি দেয়া হয়।

২০১০ সালে আনোয়ার মিয়ার পক্ষের জবর আলী নামক ব্যক্তি মারা গেলে এলাইছ মিয়াসহ ৪ জনকে আসামী করে জবর আলীর স্ত্রী আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে ময়না তদন্তে হত্যার আলামত না পাওয়ায় আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে পুলিশ আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখল করে।

২০১৫ সালে গ্রামের পঞ্চায়েতি ডোবা ইজারা প্রদান নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব বিষয়াদিকে সামাজিকভাবে সমাধানের জন্য এলাকার পঞ্চায়েতের লোকজন চেষ্টা চালায়। এরইমধ্যে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর সন্ধায় স্বামী গিয়াস উদ্দিনের সাথে বাবার বাড়ী আসার পথে পশ্চিম পাড়া মসজিদের পাশে নিলুফা ও তার স্বামীর উপর হামলা চালায় আনোয়ার মিয়ার পক্ষের লোকজন। এতে নিলুফা ও তার স্বামী গুরুতর আহত হয়। এর দুদিনপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী হামপাতালে মৃত্যু বরণ করে।
এ ঘটনায় নিলুফার বাবা জবর আলী বাদী হয়ে আনোয়ার মিয়াসহ ১৬ জনকে আসামী করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আনোয়ার মিয়াসহ আসামী সবাই জেল খেটে জামিনে রয়েছেন। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি এ মামলটি আপোস মিমাংসার জন্য চেষ্টা চালান এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা।

এরই মধ্যে তুহিন হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে অন্য একটি কোম্পানির চেক ডিজনার মামলায় এক বছর সাজাভোগ করে বাড়ী ফিরেন আনোয়ার মিয়া। এলাকাবাসী মনে করছেন তুহিন হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে গ্রামের দীর্ঘদিনের বিরোধ নিস্পত্তির বিষয়টি ভেস্তে গেল। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, কারা এমনটি করছে, কি তাদের উদ্দেশ্য?
তারা মনে করছেন, গ্রামে কোন্দল রাখতেই বার বার এমন ঘটনার জন্ম দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কাজাউড়া গ্রামের আব্দুল বাছিরের ছেলে তুহিন মিয়া (৫) কে রাতের আধারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গলাকেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা তার লাশটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে লিঙ্গ কেটে নিয়ে গেছে, দুটি কান কেটে একটি রাস্তায় ফেলে যায়।

এ ঘটনায় ঐদিনই তুহিনের পিতা আব্দুল বাছিরসহ চার চাচা, এক চাচি, চাচাতো বোন ও ১ চাচাতো ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। রাতে তুহিনের মা অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামী করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পরদিন তুহিনের চাচা নাছির ও চাচাতো ভাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করার পর বাবা আব্দুল বাছির, চাচা জমসেদ মিয়া ও আব্দুল মোছাব্বির মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। এদের ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু তাহের মোল্লা।

আদালত ৩ জনকে ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। বর্তমানে তারা রিমান্ডে দিরাই থানায় রয়েছে। নিহত তুহিনের পরিবারের প্রতিপক্ষ আনোয়ার মিয়ার বক্তব্য নেয়ার জন্য তার বাড়ীতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজন জানান, তিনি অসুস্থ চিকিৎসার জন্য দিরাই গেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল