ভারতে পদপিষ্ট হয়ে এত লোকের প্রাণহানি কেন ঘটল, যা বলছেন আহতরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ জুলাই ২০২৪, ২৩:৫০
ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাথরাস জেলায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে ১১৬ জন নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রতি ভানপুর গ্রামে, যেখানে ‘ভোলে বাবা’ নামে এক ধর্মপ্রচারক একটি ‘সৎসঙ্গের’ আয়োজন করেছিলেন।
যারা নিহত বা অচেতন তাদের ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে সিকান্দারা রাও ট্রমা সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল।
এক প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, ‘সৎসঙ্গের’ পর ভক্তরা যখন অনুষ্ঠানস্থল ছাড়তে শুরু করেন, তখনই পদপিষ্ট হন তিনি।
সিকান্দ্রা রাও থানার এসএইচও আশিস কুমার জানান, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের সরকার জানায়, অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
আলিগড় রেঞ্জের ইন্সপেক্টর জেনারেল শলভ মাথুর জানান, ‘ভোলে বাবা নামে এক ধর্মপ্রচারক এই সৎসঙ্গের আয়োজন করেছিলেন।’
ওই কর্মকর্তা জানান, একটি বন্ধ তাঁবুর ভেতরে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা। শেষ হতেই তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন তারা। তখনই পদপিষ্ট হন।
তিনি বলেন, ‘এটা ছিল ধর্মপ্রচারক ভোলে বাবার সৎসঙ্গ সভা।’
মঙ্গলবার বিকেলে এটাহ ও হাথরস জেলার সীমান্তবর্তী ওই স্থানে জমায়েত হওয়ার জন্য সাময়িক অনুমতি দেয়া হয়। এটি তাঁবুর একটি বদ্ধ ঘেরা জায়গা ছিল এবং প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে অস্বস্তি হয়েছিল এবং যারা জড়ো হয়েছিল তারা এখানে সেখানে দৌড়াদৌড়ি করেছিল, যার ফলে পদপিষ্ট হয়।
এটাহ জেলা হাসপাতালে ভর্তি কিশোরী জ্যোতি জানান, লোকজন তড়িঘড়ি করে চত্বর ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পদপিষ্ট হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে প্রচুর লোক জড়ো হয়েছিল। সৎসঙ্গ শেষ হতেই সকলে তাড়াহুড়ো করে এনক্লোজার ছেড়ে চলে গেল। বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না এবং প্রত্যেকে একে অপরের ওপর পড়ে গিয়েছিল এবং পদপিষ্ট হয়েছিল। আমি যখন বের হওয়ার চেষ্টা করি, তখন বাইরে মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকায় বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন।
এদিকে, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বিজেপি নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার খবর পাওয়ার সময় আমরা লোকসভার ভেতরে ছিলাম। প্রশ্ন উঠছে, এত মানুষ মারা গেছে... সরকার কী করছিল? এত বড় আকারে জমায়েত হওয়া মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের উচিত নিহতদের পরিবারকে সহায়তা করা। আমরা আশাবাদী, সরকার আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।’
উল্লেখ্য, নয়া দিল্লি থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে হাথরসের একটি গ্রামে হিন্দু দেবতা শিব পূজার জন্য জড়ো হয়েছিল সবাই। এর আগে, ২০১৬ সালে হিন্দু নববর্ষ উপলক্ষে একটি মন্দিরে আতশবাজি প্রদর্শনের কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১১২ জন মারা যান। তারও আগে ২০১৩ সালে ভারতের মধ্য প্রদেশের একটি মন্দিরের কাছের সেতুতে পদপিষ্ট হয়ে আরো ১১৫ জনের মৃত্যু হয়।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস ও বিবিসি