কাশ্মিরে নতুন মোড়, ওমরকে হারিয়ে 'বিচ্ছিন্নতাকামী' রশিদের জয়
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুন ২০২৪, ০৭:৪৯
ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়েছে। প্রথমবারের মতো 'বিচ্ছিন্নতাকামী' এক নেতা ভারতীয় পার্লামেন্টে ঢুকে পড়েছেন। কাশ্মিরের বারামুলা কেন্দ্রে হেভিওয়েট প্রার্থী ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়ে এবার জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী তিহাড় জেলে বন্দী আবদুল রশিদ শেখ।
উল্লেখ্য, বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে বিজেপি সরকারের তরফে বার্তা দেয়া হয়েছিল, এর জেরে কমবে 'সন্ত্রাসবাদ'। তবে হিসাব বলছে, 'সন্ত্রাসবাদে' লাগাম টানা দূরের কথা এই নীতি বুমেরাং হয়েছে কাশ্মিরে।
জম্মু ও কাশ্মিরের ভোটের ফলাফল বলছে, জম্মু ও উধমপুর এই দুই কেন্দ্রে এবার বড় জয় পেয়েছে বিজেপি। উধমপুরে জয়ী হয়েছেন ডাক্তার জিতেন্দ্র সিং। এবং জম্মুতে জয়ী হয়েছেন যুগল কিশোর। ১ লাখেরও বেশি ব্যবধানে কংগ্রেসের প্রার্থীদের হারিয়েছেন তারা। অন্যদিকে, কাশ্মিরের তিন কেন্দ্র অনন্তনাগ-রাজৌরি, বারামুল্লা এবং শ্রীনগর। এর মধ্যে শ্রীনগরে জয়ী হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের প্রার্থী সাইদ রুহুল্লাহ মেহেদি। অনন্তনাগ-রাজৌরিতে মেহবুবা মুফতিকে হারিয়ে জয়ী ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রার্থী আলতাফ আহমেদ। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে বারামুলায় ২ লাখের বেশি ভোটে ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন আবদুল রশিদ শেখ। এককালে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' হুরিয়াত নেতা তথা জেকেপিসি-র প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গনি লোনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এই ব্যক্তি। 'সন্ত্রাসবাদে' অর্থ জোগানের অভিযোগে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের বর্তমানে জেলবন্দি এই নেতা। তার নির্বাচন জয় কাশ্মিরের রাজনীতিতে নতুন মোড় বলেই মনে করছে অনেকে।
কাশ্মিরের মাটিতে এমন ব্যতিক্রমী ঘটনার পিছনে মূলত বিজেপির নীতিকেই দায়ী করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের দাবি, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মিরের মাটিতে ডিলিমিটেশন বা আসন পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্য নিয়েছিল বিজেপি। এর পিছনে সুপ্ত উদ্দেশ্য ছিল, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোকে নিয়ে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে উপত্যকার রাজনৈতিক পট বদলে দেয়া। যাতে কাশ্মিরের মাটিতেও হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে সরকার গঠন সম্ভব হয় বিজেপির। শুরু থেকেই বিজেপির এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল কাশ্মিরের রাজনৈতিক দলগুলো। দাবি জানানো হয়েছিল, ৩৭০ ধারা পুনরায় জারি করা হোক জম্মু ও কাশ্মিরে। তবে যে 'সন্ত্রাসবাদের' বিরোধিতাকে মূল হাতিয়ার করেছিল বিজেপি হিসেব বলছে তা আদৌ সফল হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসবাদ ভালোই বেড়েছে উপত্যকায়। এরই মাঝে বারামুল্লা থেকে 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদের জয় যথেষ্ট চাপে রাখবে ভারত সরকারকে।
জানা যাচ্ছে, এককালে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন আবদুল রশিদ শেখ। পরে উপত্যকার 'বিচ্ছিন্নতাবাদের' সাথে পুরো মাত্রায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমনকী 'সন্ত্রাসবাদকে' অর্থ জোগানের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলবন্দী এই নেতা। জেল থেকেই এবার নির্বাচনে লড়েন রশিদ। পুরো লোকসভা নির্বাচনে এবার তার হয়ে প্রচার করেছিলেন রশিদের দুই ছেলে।
অবশ্য কাশ্মিরের রাজনীতিতে রশিদের আগমন এই প্রথমবার নয়, এর আগে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন রশিদ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি। এবার স্বতন্ত্র হিসেবে বারামুল্লা থেকে জয়ী হয়ে কাশ্মিরের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ফেলে দিলেন হুরিয়াত নেতার সাবেক এই সঙ্গী।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা