নাগরিকত্বের জন্য মুসলমানদের উপর কঠিন শর্ত চাপালেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ মার্চ ২০২৪, ২০:৫৭, আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৩
একদিকে ভারতজুড়ে সিএএ কার্যকর করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্ক তুঙ্গে তুলেছে। এই সিএএ বেশি প্রভাব ফেলবে পশ্চিম বাংলায় বলে মনে করা হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এই আবহে বাংলাভাষী মুসলিমদের বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ প্রথা বন্ধ করতে হবে বলে শর্ত চাপিয়ে দিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর এমন হুঙ্কারে এখন তুমুল আলোড়ন পড়ে গেছে উত্তর-পূর্ব রাজ্যে। এটা না মানলে বাংলাভাষী মুসলিমদের আসামের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা হিসেবে মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাভাষী মুসলিমরা আসামে ‘মিঞা’ হিসাবেই পরিচিত। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তাদের আসামের মূল ভূখণ্ডে থাকার জন্য বিশেষ শর্ত দিয়ে বলেন, ‘নিজেদের আসামের অধিবাসী হিসেবে দেখতে হলে আসামীয়া সমাজের কিছু সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং ঐতিহ্য পালন করতে হবে।’
এমন হুঙ্কারে এখন তটস্থ হয়ে রয়েছেন বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। দাবি করা হয়, তারা কোনো এক সময় বাংলাদেশ থেকে গেছে। কারণ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একাধিক শর্ত চাপিয়ে দিয়েছেন তাদের উপর। যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে।
শর্তের মধ্যে রয়েছে, পরিবারে দুটির বেশি সন্তান থাকলে আসামের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন বাংলাভাষী মুসলিমরা। বহুবিবাহ প্রথা, কমবয়সী মেয়েদের বিবাহ এসব করা যাবে না বলা হয়েছে।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা এই বিষয়ে বলেন, ‘আসামের বাসিন্দা হতে গেলে কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে দেয়া যাবে না। সন্তানকে মাদরাসায় পড়ানো যাবে না। তাদের শিক্ষিত করে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করুন। মেয়েদের স্কুলে পাঠান। পৈতৃক সম্পত্তির উপর অধিকার আছে মেয়েদেরও। যদি আসামীয়া সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য গ্রহণ করেন তবেই মূলনিবাসী হওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হবে।’
এদিকে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণা, শর্ত এবং হুঙ্কার সিএএ, এনআরসি’র নতুন খারাপ দিক হিসেবে দেখছেন বাংলাভাষী মুসলিমরা। তবে বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহকে কেউ সমর্থন করছেন না। দুটির বেশি সন্তান হলে মূলনিবাসীর তকমা হারানো নিয়ে অনেকে শঙ্কিত। আসামীয়া সংস্কৃতিকে সম্মান দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
মাদরাসার পরিবর্তে শিশুদের স্কুলে পাঠানো উচিত বলে তার মত। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘মুসলিম সম্প্রদায়কে মাদরাসার পরিবর্তে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দেয়া উচিত। কন্যাদের শিক্ষিত করা এবং পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার দেয়া উচিত।’
অন্যদিকে জম্মু ও কাশ্মিরের পর আসাম মুসলিমদের জনসংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, আসামের মোট জনসংখ্যার নিরিখে ৩৪ শতাংশ মুসলিম। তবে এখানে দুটি ভাগ আছে। এক, দাবি করা বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম ও বাংলাভাষী। দুই, আসামীয়া ভাষায় কথা বলা আসামের মুসলিম। এই দ্বিতীয়টি আসলে আসামের মুসলিম বলে মনে করা হয়।
২০২২ সালে আসাম মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে ৪০ লাখ আসামীয়া ভাষী মুসলিমকে স্বদেশী আসামীয়া মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আসামীয়া ভাষী আদিবাসী মুসলিমরা মোট মুসলিম জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ। বাকি ৬৩ শতাংশ বাংলাভাষী মুসলিম। মন্ত্রিসভা পাঁচটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তালিকায় রয়েছে- গোরিয়া, মোরিয়া, জোলাহ, দেশী এবং সৈয়দ আসামীয়া ভাষাভাষীর মানুষ।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা