২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দুই বছরের শিশুকে ফিরিয়ে দিতে জার্মানিকে ভারতের চাপ

সাত মাস বয়সে আরিহা শাহ নামের ভারতীয় এক শিশুকন্যাকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেয় বার্লিনের কর্তৃপক্ষ৷ - ছবি : সংগৃহীত

প্রায় দুই বছর জার্মানির সামাজিক সুরক্ষা সেবার অধীনে থাকা শিশুটিকে ভারতে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে শুক্রবার আহ্বান জানিয়েছে ভারত।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আরিহা তার দাদী বা নানীর মাধ্যমে আহত হওয়ার পর বার্লিন কর্তৃপক্ষ তাকে মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে। সাত মাস বয়সের সেই আরিহার বয়স এখন দুই বছরের বেশি। ২০ মাস ধরে জার্মান সামাজিক সুরক্ষার অধীনে পালক মা-বাবার কাছে আছে সে। আর তার জন্মদাতা মা-বাবা এখন আছেন মুম্বইয়ে।

বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ভারতের সরকার। ঘটনাটি দিল্লি ও বার্লিনের মধ্যে কূটনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ডিসেম্বরে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের ভারত সফরের সময় প্রসঙ্গটি উঠে আসে।

এই প্রসঙ্গে অনেকের মনে পড়ছে বাঙালি মেয়ে সাগরিকা চট্টোপাধ্যায়ের কথা। দুই বছর আইনি লড়াইয়ের পর নরওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সন্তানদের ফিরে পান তিনি। সাগরিকার জীবনের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে।’ ১৭ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত সিনেমাটি। ছবিতে দুই সন্তানের মা দেবিকা চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রানি।

চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছিল স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে ভিন্দেশে সংসার দেবিকার। চাকরিসূত্রে নরওয়েবাসী দেবিকার স্বামী। দুই সন্তানকে নিয়ে হাসিখুশি সংসারে এক দিন নেমে আসে বিপদ। দেবিকার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তার দুই সন্তানকে। নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে লড়াই শুরু করেন দেবিকা চট্টোপাধ্যায় তথা ‘মিসেস চ্যাটার্জি।’

আরিহার প্রসঙ্গে আবারো এই চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন অনেকে। সামাজিক মাধ্যমে ‘রিটার্ন আরিহা’ নামে একটি হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডও চলছে।

কী বলছে ভারত সরকার?
শুক্রবার হিন্দুস্তান টাইমস ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বার্লিনে ভারতীয় দূতাবাস ‘আরিহা শাহকে ভারতে ফেরাতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

অরিন্দম বাবু বলেন, ‘আরিহা শাহ একজন ভারতীয় নাগরিক। শিশুটির জাতীয়তা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক পটভূমি ঠিক করবে তাকে লালন-পালনের জন্য কোথায়, কোন কেয়ারে রাখা যেতে পারে। আমরা জার্মান কর্তৃপক্ষকে আরিহাকে ভারতে পাঠানোর জন্য যা যা করা দরকার সেই ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এটা তার অধিকারের মধ্যে পড়ে।

অরিন্দম বাবুর মতে শিশু মেয়েটির সর্বোত্তম স্বার্থ ‘শুধুমাত্র তখনই বোঝা সম্ভব যখন সে নিজের দেশে থাকবে, যেখানে তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষা করা যেতে পারে।’

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি বারবার জার্মান কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে বলেছে, ‘তার সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত পটভূমির সাথে যেন আরিহার সংযোগে কোনো আপোস না করা হয়।’

অরিন্দম বাবু হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শিশু মেয়েটিকে জার্মানির একটি সেবা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তার মতে, শিশুটির মানসিক বিকাশের জন্য এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ভারতীয় গণমাধ্যম শুক্রবার জানিয়েছে, ১৯টি রাজনৈতিক দলের ৫৯ জন ভারতীয় সাংসদ মেয়েটির হেফাজত নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ আকেরমানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।

রাজনীতিবিদরা তাদের চিঠিতে লিখেছেন, ‘পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে, নাগরিকদের কল্যাণের জন্য আমাদের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। ভারতে জার্মানির প্রতিনিধি হিসেবে জার্মান কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানাতে অনুরোধ করছি। আরিহাকে বাড়িতে আনতে সাহায্য করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।’

আরিহা শাহের কী হয়েছে?
বার্লিনে কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরিহা শাহকে তার মা-বাবার থেকে আলাদা করে। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিল তার দাদী বা নানী। তার মাধ্যমে শিশুটি আচমকা চোট পায়।

মা-বাবা আরিহাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সতর্কতা জারি করা হয়। পরে তাকে জার্মানির যুব কল্যাণ দফতরের অফিসের হেফাজতে রাখা হয়।

প্রথমে শিশু মেয়েটির মা-বাবার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হলেও পরে তা তুলে নেয়া হয়।

এর মধ্যে আরিহাকে আর তার বাবা-মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে মেয়েটির মা-বাবা জানায়, ১৫-২০ দিন পরপর সন্তানের সাথে তাদের দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

জার্মানিতে কর্মরত মেয়েটির মা ও তার বাবা পরে মুম্বইয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসেন।

ডিসেম্বরে ভারত সফরের সময়, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, শিশুটি ভাল আছে এবং তার ‘সুস্থতা প্রথম অগ্রাধিকার।’

তিনি আরো বলেন, জার্মানি ‘প্রত্যেক শিশুর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের কথা মাথায় রাখে। জার্মানির যুব অফিস তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন নেয়।’

বার্লিন চাইল্ড সার্ভিসেস সন্তানের উপর মা-বাবার অধিকার তুলে নিতে একটি সিভিল কাস্টডি মামলা দায়ের করেছে।

জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব মেলেনি।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement