১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তানে আবার সেনা-শাসন, নাকি এবারই চূড়ান্ত মীমাংসা?

- ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ঢাকায় যে রাজনৈতিক বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন ওই সময়ের ১৯ বছর বয়সী তরুণ ইমরান খান। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের হয়ে তিনি সেখানে খেলতে গিয়েছিলেন।

গেল সপ্তাহে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের গ্রেফতারকে ঘিরে পাকিস্তানের রাজনীতি যখন আবার টালমাটাল, তখন জামিনে মুক্তি পেয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি প্রথম যে ভাষণ দেন, তাতে ১৯৭১ সালের মার্চের সেই দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

‘আমি আজ আপনাদের পূর্ব পাকিস্তানের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। মার্চ ১৯৭১ এ আমি পূর্ব পাকিস্তানে গিয়েছিলাম অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলতে। আমার এখনো মনে আছে তাদের কী তীব্র ঘৃণা ছিল পাকিস্তানের প্রতি। আজ আমাদের মনে রাখা দরকার, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সাথে কী অত্যাচার হয়েছে। তাদের যে দল নির্বাচনে জিতেছিল, যার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল, তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী অভিযান চালালো।’

পাকিস্তানের অগ্নিগর্ভ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইমরান খান এবং দেশটির সেনাবাহিনী এখন যে রকম মুখোমুখি অবস্থানে, তার সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির তুলনা এই প্রথম নয়। মাত্র ছয় মাস আগে গত বছরের নভেম্বরে এক লং মার্চে নেতৃত্ব দেয়ার সময়ও ইমরান খান অনেকটা একই ভাষায় এই একই তুলনা করেছিলেন।

‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ওই দিন খুবই বিক্ষুব্ধ ছিল, কারণ তাদের যে অধিকার, সেটি তাদের দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি? কারণ এক ধূর্ত রাজনীতিকের ষড়যন্ত্র। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এই রাজনীতিক পূর্ব পাকিস্তানের বিজয়ী দলকে বঞ্চিত করেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বিজয়ী দলের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এজন্য পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।’

ইমরান খান সম্প্রতি যে ভাষায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, এবং যেভাবে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার কারণ হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকদের আচরণ এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা বলছেন, সেটি পাকিস্তানের রাজনীতিকদের মুখে সচরাচর শোনা যায় না। পাকিস্তানে ইতিহাসের স্কুল পাঠ্যপুস্তকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক ভিন্ন বিবরণই তুলে ধরা হয়।

অথচ মাত্র পাঁচ বছর আগেও সেনাবাহিনীর সাথেও ইমরান খানের ছিল মধুর সম্পর্ক। যে সেনাবাহিনীর সমর্থনে নির্বাচনে জিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে শোনা যায়, তিনি কেন সেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এমন সরব হয়ে উঠলেন?

‘ইমরান খান যে সামরিক বাহিনীর ওপর এমন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন, সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে কথাবার্তা বলছেন, এর কারণ আছে। তার সরকারের যে পতন ঘটছিল, সেজন্যে তিনি সেনাবাহিনীকেই দোষী বলে বর্ণনা করে থাকেন,’

বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন পাকিস্তানি সাংবাদিক এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট উর্দুর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হারুন রশিদ।

রশিদ বলেন, যেদিন থেকে সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বজওয়ার সাথে ইমরান খানের সম্পর্ক ভেঙে গেল এবং সামরিক বাহিনী ইমরান খানের সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিল, তখনই ইমরান খানের সরকার পড়ে গেল, তিনি পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে গেলেন। অনেকের বিশ্বাস ইমরান খানের সরকারের পতনের কারণ এটাই।

‘এমনকি তিনি আশঙ্কা করছেন যে তার জনপ্রিয়তার কারণে সামরিক বাহিনী তাকে হত্যার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী দু’বার তার প্রাণ নাশের চেষ্টা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এমনকি তিনি নাম ধরে কয়েকজন পাকিস্তানি জেনারেলের বিরুদ্ধে অভিযোগও তুলেছেন,’ বলছিলেন রশিদ।

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি
দুর্নীতির মামলায় নাটকীয়ভাবে ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর কয়েকদিন ধরে পাকিস্তানজুড়ে যে মারাত্মক সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে দেখা যায়নি। হারুন রশিদ বলেন, এটি অভূতপূর্ব।

‘এবার বিক্ষোভের সময় দেশজুড়ে সেনাবাহিনীর স্থাপনাগুলোর ওপর যে রকম আক্রমণ চালানো হয়েছে সেটা আমরা আগে কখনো পাকিস্তানে দেখিনি। কিন্তু একটা ভালো জিনিস হচ্ছে, সেনাবাহিনী এর পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা করেনি। নতুবা পাকিস্তানে একটা গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেত বলে আশঙ্কা ছিল।’

পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময় কমপক্ষে তিনটি দশক দেশটি সরাসরি সেনা শাসনের মধ্যে কাটিয়েছে, বাকী সময়টাও পর্দার অন্তরালে থেকে সেনাবাহিনীই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রতিটি বেসামরিক সরকারের পতনের পর সাবেক শাসকদের দুর্নীতির মামলায় জেলে পাঠানো, এমনকি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দেশটিতে নতুন কোনো ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক অতীতেই অনেক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।

কিন্তু এবার ইমরান খানের গ্রেফতারের পর যা ঘটেছে, তার কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে, বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্টের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ।

‘অতীতে এতটা জনপ্রিয় কোনো নেতার বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী বলুন, বা এস্টাবলিশমেন্ট, তারা ব্যবস্থা নেয়নি, বা চেষ্টা করেনি। যদিও অতীতে প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, তাদের আটক করা হয়েছে, বা বিচারও করা হয়েছে। তখনও হয়তো প্রতিবাদ হয়েছে, কিন্তু যে ধরনের প্রতিবাদ আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, সেটা শুধু প্রতিবাদ নয়, এখানে একটা মৌলিক প্রশ্নও বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে। সেটা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে,’ বলছিলেন তিনি।

প্রফেসর আলী রীয়াজের মতে, পাকিস্তানের এবারে গণবিক্ষোভের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যটা হচ্ছে, ইমরান খানের সাথে সেনাবাহিনীর মত পার্থক্যের জায়গাটা এখন এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছে না। সম্ভবত সেনাবাহিনী তাকে রাজনীতিতেই দেখতে চাচ্ছে না।

সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্কের অবনতি
ইমরান খান যখন ২০১৮ সালে নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি প্রথম দিনেই সেনা সদর দফতরে গিয়ে তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বজওয়ার সাথে দীর্ঘ বৈঠক করেন।

তখনই পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে এমন গুঞ্জন ছিল যে সেনাবাহিনীই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। কাজেই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে তিনি কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন এমন প্রশ্ন তখনই উঠেছিল।

ইমরান খানের সাথে সেনাবাহিনীর সম্পর্কের নাটকীয় অবনতির দু’টি কারণের কথা উল্লেখ করছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

‘একটি কারণ অভ্যন্তরীণ। সেটা হচ্ছে সেনাবাহিনীর যেই স্বার্থ, সেই স্বার্থের সাথে এক ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব শুধু ইমরান খানের সাথে নয়, এক অর্থে রাজনৈতিক গোষ্ঠীরই দ্বন্দ্ব আপনি বলতে পারেন। সেনাবাহিনীর সাথে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্রে ঠিক কোন জায়গায় সীমারেখা টানা হবে, সেটা কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনোই নির্ধারিত হয়নি। পাকিস্তানের গত ৭৫ বছরের ইতিহাস যদি বলেন, যার কমপক্ষে ৩০ বছর সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতায় থেকেছে, এই প্রশ্নের মীমাংসা কিন্তু কখনোই হয়নি।’

নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন
ইমরান খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শ’ মামলা করা হয়েছে এবং তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল একটি দুর্নীতির মামলায়। রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা পাকিস্তানে কোনো নতুন ঘটনা নয়। কাজেই দেশটিতে এই সর্বশেষ রাজনৈতিক সঙ্কটে দুর্নীতি আসলে কোনো ইস্যু নয়, পুরো সঙ্কট আসলে পরের সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে, বলছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট উর্দুর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হারুন রশিদ।

‘পাকিস্তানে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যেটি, সবাই যার উত্তর খুঁজছে, সেটি হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন কখন হবে। চলতি বছর পাকিস্তানে নির্বাচন হওয়ার কথা।’

পাকিস্তানে দু’টি প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার এখনো পর্যন্ত ওই সব প্রাদেশিক নির্বাচন দেয়নি। তারা বলছে, সংবিধান অনুযায়ী অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচন হবে, যখন বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হবে। অনেকে সরকারকে এই বলে অভিযুক্ত করছে যে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, কারণ যে কোন প্রাদেশিক বা জাতীয় সরকার ভেঙে দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে।

হারুন রশিদ বলেন, ‘সরকার আসলে এই মূহুর্তে নির্বাচন করতে চাইছে না, কারণ সব জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ভোটারদের মধ্যে ইমরান খানের বিরাট সমর্থন আছে। ইমরান খানের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়া এবং অর্থনীতি কিছুটা চাঙা না হওয়া পর্যন্ত সরকার অপেক্ষা করতে চায়। তারপরেই হয়তো তারা নির্বাচন দেবে।’

কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন যদিও বা হয়, এবং সেই নির্বাচনে ইমরান খানের দল যদি জয়লাভও করেন, সামরিক বাহিনী কী তাকে ক্ষমতায় ফিরতে দেবেন?

হারুন রশিদ বলেন, সেনাবাহিনীর সাথে ইমরান খানের সম্পর্ক যেরকম বৈরি হয়ে উঠেছে, তেমন সম্ভাবনা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না।

‘পাকিস্তানে সবাই জানে, সামরিক বাহিনীর সমর্থন যাদের দিকে, নির্বাচনে তাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি। কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত ইমরান খান এবং সেনাবাহিনীর মতপার্থক্য কমে না আসছে, ততক্ষণ ইমরান খান ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন, এটা আমি দেখছি না।’

হারুন রশিদ বলেন, এই মূহুর্তে সরকারের পরিকল্পনা যেন মনে হচ্ছে ইমরান খান এবং তার দলকে দুর্বল করা, অন্যদিকে অর্থনীতি চাঙা হওয়ার জন্য কিছুটা সময় নেয়া। কারণ পাকিস্তানে এখন মূল্যস্ফীতি অসম্ভব বেশি। তারা আশা করছে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হবে এবং তারা কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে নির্বাচনে যেতে পারবে।

পাকিস্তানের রাজনীতিকরা কোনো জাতীয় সঙ্কটের সময় একসাথে বসে তাদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছেন, এমন নজির তেমন নেই। কাজেই নির্বাচনকে ঘিরে এই রাজনৈতিক সঙ্কটের মীমাংসা ঠিক কিভাবে হবে, তার কোনো আভাস কেউ দেখতে পাচ্ছেন না।

‘পাকিস্তান এখন আসলে একেবারে দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে ইমরান খান ও তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে বিচার বিভাগ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোট ও তাদের সাথে আছে সেনাবাহিনী। এই দু’পক্ষ মনে হচ্ছে মুখোমুখি। মনে হচ্ছে না কোন পক্ষই আসলে আপসরফায় রাজি।’

সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশ্নে চূড়ান্ত মীমাংসা
তবে প্রফেসর আলী রীয়াজ পাকিস্তানের এবারের রাজনৈতিক সঙ্কটকে কেবল নির্বাচনে জিতে কোন দল ক্ষমতায় যাবে, সেই দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখতে রাজি নন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে জন্মলগ্ন হতে সেনাবাহিনীর যে উপর্যুপরি হস্তক্ষেপ, সেক্ষেত্রে একটি চূড়ান্ত মীমাংসার আকাঙ্ক্ষা তিনি এবারের রাজপথের বিক্ষোভে দেখতে পাচ্ছেন।

‘ইমরান খানকে নিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একটা আশঙ্কা হচ্ছে যদি তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসেন তাহলে সেনাবাহিনীর কর্পোরেট স্বার্থ হুমকির মুখে পড়বে। কারণ ইমরান খান যে বিষয়টা ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে এস্টাবলিশ করতে পেরেছেন সেটা হচ্ছে সেনাবাহিনীর ক্ষমতার প্রশ্নটা মীমাংসা করা। এটা নিয়ে আসলে আমার কাছে মনে হয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অনেক বেশি উদ্বিগ্ন।’

পাকিস্তানের রাজনীতি শুধু নয়, দেশটির অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুতে সামরিক বাহিনীর যে প্রতাপ, তাতে এমন একটি কর্পোরেট স্বার্থ যে আছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

‘পাকিস্তানে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হচ্ছে সামরিক বাহিনী। এটি খুবই সুসংগঠিত, দক্ষ এবং এই বাহিনীর পেছনে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়। তাদের এক বিরাট ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য আছে। ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল থেকে সিমেন্ট কারখানা- নানা রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য তারা চালায়,’ বলছিলেন পাকিস্তানি সাংবাদিক হারুন রশিদ।

কাজেই তার মতে, এই স্বার্থ যেন বজায় থাকে, সেজন্য সামরিক বাহিনী যে তাদের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায়, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু আলী রীয়াজ মনে করেন, পাকিস্তান এবার একটি মুহূর্তে এসে হাজির হয়েছে। সামরিক বাহিনীর এই সীমাহীন ক্ষমতার প্রশ্নের মীমাংসা যদি এবার নাও হয়, এটি কিছুদিন পরে আবারো ঠিক মাথাচাড়া দেবে।

‘এই মুহূর্তে কতগুলো বিষয়ের মীমাংসা যদি পাকিস্তান করতে পারে, তাহলে তাদের জন্য ভালো। কিন্তু যদি সেটা অমীমাংসিত থেকে যায়, তাহলেও কিন্তু এই পরিস্থিতি, আরেকবার, অন্য কোনোভাবে উপস্থিত হবে। সেটা কালকে হবে নাকি পরশু হবে, নাকি পাঁচ বছর পরে হবে আমরা জানি না। কিন্তু হবে। এটা আমি প্রায় নিশ্চিত করে বলতে পারি।’

আবারো সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা?
পাকিস্তানে যখনই বড় কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তখন জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা সংহতির কথা বলে দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সামরিক বাহিনী। এবারো কি সেরকম কিছু ঘটতে পারে?

‘সেনাবাহিনী কয়েকদিন আগে জানিয়েছে, সামরিক আইন জারির কোনো সম্ভাবনা নেই’, বলছিলেন হারুন রশিদ।

‘সেনা অভ্যুত্থানের কথা যদি ধরেন, পাকিস্তানের সংবিধানে এর বিরুদ্ধে এখন নানা ধরনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কাজেই এখন সামরিক বাহিনী সামনে এসে যে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নেবে, সেটা কঠিন হবে।’

কিন্তু পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, যেখানে একটা গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা আছে, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে, তখন এ রকম সম্ভাবনা একদম নাকচ করে দিচ্ছেন না তিনি।

‘যদি এ রকম পরিস্থিতি দাঁড়ায় বা আইএমএফের সাথে সমঝোতা না হলে যদি পাকিস্তান ঋণ খেলাপি হয়, অর্থনীতি ধসে পড়ে, তখন তো সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করার কিছু ভালো অজুহাত পেয়ে যাবে। তবে অতীতে তারা দেখেছে যে এ রকম সামরিক হস্তক্ষেপে কোনো লাভ হয়নি। কাজেই তারা বরং পর্দার আড়ালে থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে। এখন আসলে তারা সেটাই করছে,’ বলছেন তিনি।

তবে প্রফেসর আলী রীয়াজ মনে করেন, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষমতা নেয়া এবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জন্য কঠিন হবে।

‘এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কতটা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আমি মনে করি না পাকিস্তানের বর্তমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, বা বিশ্ব পরিস্থিতি, এর কোনোটাই সামরিক বাহিনীর অনুকূলে আছে। কারণ আগে পাকিস্তান ছিল একটি ফ্রন্ট-লাইন স্টেট। যে কারণে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের সামরিক অভ্যুত্থান গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। সেটার একটা বৈশ্বিক কারণ ছিল। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি কিন্তু নেই।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘এর আরেকটা কারণ হচ্ছে, এই অঞ্চলে এখন যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে, সেটি। যুক্তরাষ্ট্র বলুন, চীন বলুন, এমনকি রাশিয়ারও এক ধরনের ভূমিকা আছে, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল। যে কারণে সেনাবাহিনী এই মুহূর্তে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার ঝুঁকি নেবে আমি তা মনে করি না।’

কিন্তু পাকিস্তানের অতীত ইতিহাসের কথা তুলে অধ্যাপক রীয়াজ আবার এই সম্ভাবনা একদম নাকচ করে দিচ্ছেন না।

‘পাকিস্তানে এমন সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা সবসময়ই থাকে এই কারণে যে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানি সমাজে এই বাহিনী অভাবনীয় ক্ষমতা ভোগ করে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল