২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাশ্মিরে জি-টোয়েন্টির বৈঠক, কী বার্তা দিচ্ছে ভারত

শ্রীনগরে অনুষ্ঠিতব্য জি-টোয়েন্টি বৈঠকের পোস্টার। - ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল সমালোচনা হবে, এটা জেনেও কাশ্মিরের শ্রীনগরে জি-টোয়েন্টি জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আগামী সোমবার (২২ মে) থেকে তিন দিনের ওই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা।

জাতিসঙ্ঘের সংখ্যালঘুবিষয়ক স্পেশাল র‍্যাপোর্টিওর ইতোমধ্যেই মন্তব্য করেছেন, যে কাশ্মিরে ‘সামরিক দখলদারি’ চালানো হচ্ছে বলে বলা হয়, সেখানেই জি-টোয়েন্টির বৈঠক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ভারত দেখাতে চাইছে কাশ্মিরের পরিস্থিতিতে ‘আন্তর্জাতিক অনুমোদনের সিলমোহর’ আছে।

শ্রীনগরে ওই বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্তকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছে পাকিস্তানও, যদিও তারা জি-টোয়েন্টি জোটের সদস্য নয়।

ভারত অবশ্য যাবতীয় সমালোচনাকে নস্যাৎ করে দাবি করেছে, জোটের প্রেসিডেন্ট দেশ হিসেবে দেশের যেকোনো প্রান্তে জি-টোয়েন্টির বৈঠক আয়োজনের পূর্ণ অধিকার তাদের আছে।

অর্থাৎ, শ্রীনগর তথা কাশ্মির যে ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ওই ভূখণ্ড মোটেই বিতর্কিত নয়- ভারতের এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সেই বার্তাই দিতে চাওয়া হচ্ছে।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমর্থক দক্ষিণপন্থী তাত্ত্বিকরা তো আরো এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করছেন। তারা বলেন, পরেরবার ভারত যখন আবার জি-টোয়েন্টির ‘চেয়ার’ হবে, তখন মুজফফরাবাদে (কাশ্মিরের পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকা) এ ধরনের বৈঠক হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধির বক্তব্য
জাতিসঙ্ঘের সংখ্যালঘুবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি (স্পেশাল র‍্যাপোর্টিওর) ফার্নান্দ দা ভ্যারেনেস সোমবার তার একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ভারত সরকারের সমালোচনা করে কিছু পোস্ট করেন।

কানাডার নাগরিক অধ্যাপক দা ভ্যারেনেস ওই সব পোস্টে লেখেন, ‘যেটাকে (কাশ্মির) অনেকেই সামরিক দখলদারি বলে থাকেন, ভারত সরকার সেটাকেই একটা স্বাভাবিক চেহারা হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।’

ফার্নান্দ দা ভ্যারেনেস আরো দাবি করেন, ২০১৯ সালে ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক স্বীকৃতি বাতিল করার পর থেকে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা অনেক বেড়েছে।

ভারত-শাসিত কাশ্মিরে অবাধ মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বিচারে বেআইনি গ্রেফতার, রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ চলছে বলেও জানান অধ্যাপক দা ভ্যারেনেস।

তিনি বলেন, ‘জি-টোয়েন্টি জোটও অনিচ্ছাকৃতভাবে স্বাভাবিকতার ছদ্মবেশকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন করতে যাচ্ছে।’

এর আগে পাকিস্তানও ভারতের এ সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছিল।

গত সপ্তাহে ইসলামাবাদে জারি করা এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকার দাবি করে, কাশ্মিরে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজন করে ভারত জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবই লঙ্ঘন করছে।

ভারত যে যুক্তি দিচ্ছে
ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার অবশ্য শ্রীনগরে জি-টোয়েন্টি পর্যটন ওয়ার্কিং গ্রুপের এ বৈঠককে সফল করার জন্য পূর্ণ শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শ্রীনগরকে কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ও বহু টাকা খরচ করে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে কাশ্মির ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে বৈঠকের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন।

ইতোমধ্যে জেনেভাতে জাতিসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী দূতাবাসের পক্ষ থেকে স্পেশাল র‍্যাপোর্টিওর ফার্নান্দ দা ভ্যারেনেসের বক্তব্যের খুব কড়া জবাবও দেয়া হয়েছে।

জোটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের যেকোনো প্রান্তে বৈঠক আয়োজন করার এখতিয়ার তাদের আছে, এ কথা জানিয়ে ভারতীয় দূতাবাস তাদের পাল্টা টুইটে বলেছে, অধ্যাপক দা ভ্যারেনেস বিষয়টির রাজনীতিকরণ করছেন এবং স্পেশাল র‍্যাপোর্টিওর হিসেবে তার পদেরও অমর্যাদা করেছেন।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনা হবে জেনেও কেন ভারত শ্রীনগরে এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিল?

পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞ ও দক্ষিণপন্থী চিন্তাবিদ শুভ্রকমল দত্ত এর জবাবে বলছিলেন, ‘আপনি বরং বলুন কেন নেবে না? শ্রীনগরে যেকোনো আন্তর্জাতিক বৈঠক করার পূর্ণ অধিকার ভারতের আছে, আর তারা সেটাই করেছে।’

ড. দত্ত আরো যুক্তি দিচ্ছেন, জাতিসঙ্ঘের দৃষ্টিতেও (ভারত-শাসিত) কাশ্মিরকে আর বিতর্কিত ভূখণ্ড বলে ধরা হয় না। এমন কী নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মিরে গণভোট সংক্রান্ত যে সব প্রস্তাব নিয়েছিল সেগুলোও এত বছর পরে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে গেছে।

শুভ্রকমল দত্ত বলেন, ‘কারণ ওই প্রস্তাবে পুরো কাশ্মির থেকে যে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল সেটাই মানা হয়নি। জাতিসঙ্ঘের একাধিক মহাসচিবও স্বীকার করেছেন যে কাশ্মির একটা দ্বি-পক্ষীয় বিষয়। ভারত ও পাকিস্তানকেই এই সমস্যা মেটাতে হবে।’

তিনি আরো বিশ্বাস করেন, বেশ কয়েক বছর পরে জি-টোয়েন্টির ‘রোটেটিং প্রেসিডেন্সি’ যখন ভারতের হাতে ফিরে আসবে, ততদিনে আজকের যেটা পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মির তা ভারতের কব্জায় চলে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ‘দেখবেন ওই দিন হয়তো ভারত মুজফফরাবাদেও জি-টোয়েন্টির মিটিং হোস্ট করবে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement