২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘পাকিস্তানের সাথে সু-সম্পর্ক নির্ভর করছে ভারতের ওপর’

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি। - ছবি : বিবিসি

পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, সমাধানের বদলে ভারত সন্ত্রাসকে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ ছড়ানো এবং ‘হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদকে’ উস্কে দেয়ার কাজে ব্যবহার করছে।

আন্ত-সীমান্ত সন্ত্রাস সমাধানে ভারতের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস সমাধানের চেয়ে ভারত সরকার সন্ত্রাসকে তাদের রাজনৈতিক সুবিধায় কাজে লাগাচ্ছে ।

ভারতের গোয়ায় এসসিও (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকের এক ফাঁকে বিবিসির ভিনিত খারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, সন্ত্রাসকে কাজে লাগিয়ে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ ছড়ানো এবং ‘হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদকে’ উস্কে দিয়ে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার কৌশল ‘পুরনো’ এবং ‘অকেজো’ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিই সন্ত্রাস বন্ধ করতে চাই তাহলে ‘অনর্থক বাগাড়ম্বর’ বাদ দিয়ে সত্যিকারের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে হবে।’

বিলওয়াল ভুট্টো বলেন,‘ভারতের উদ্বেগকে আমরা গুরুত্ব দেই। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের নিজেদেরও অনেক উদ্বেগ রয়েছে।’

ভারত সবসময়ই অভিযোগ করে তাদের দেশের ভেতর বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের সরাসরি মদত রয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলাওয়ামায় ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে টার্গেট করে এক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায়। ওই সময় দু‘দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল।

এর আগে ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে এক সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ১৮০ জনের মৃত্যুর পরও যুদ্ধের আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।

দিল্লিতে বিবিসির সাংবাদিক ভিনিত খারে পাকিস্তানী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, যখনই দু‘দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রশ্নে মীমাংসা আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখনই কেন এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে?

সেই প্রশ্নের উত্তরেই ভুট্টো এসব মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসের মস্ত বড় শিকার। ‘এসসিও জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসী ঘটনায় পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই সন্ত্রাসের শিকার।’

বিলওয়াল ভুট্টোর মা এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন।

প্রায় ১২ বছর পর এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত গেলেন। তবে এই সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বা ভারত সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রী বা কর্মকর্তার সাথে ভুট্টোর দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক হয়নি।

এমনকি এসসিও বৈঠকের পর জয়শঙ্কর পাকিস্তানি মন্ত্রীর সাথে হাতও মেলাননি। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুট্টোকে এমনকি ‘সন্ত্রাসের মুখপাত্র’ বলে বর্ণনা করেন।

বিলওয়াল ভুট্টো অবশ্য বলেন, তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কোনো প্রস্তাবও করেননি।

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি’

তারপরও ১২ বছর পর পাকিস্তানি কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন তাকে দু‘দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক কোনো অগ্রগতি হিসেবে কি দেখা যেতে পারে?

বিবিসির এই প্রশ্নে পাকিস্তানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ভারতের ওপর। ‘বর্তমান বাস্তবতায় আপস মীমাংসার জন্য ভারতকেই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার প্রসঙ্গ তুলে ভুট্টো বলেন, ভারত তাদের এ পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা না করলে দু‘দেশের মধ্যে ‘অর্থপূর্ণ কোনো আলোচনা’ সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর তার সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন, ‘আর্টিকেল ৩৭০ এখন ইতিহাস।’

‘সাহায্য চাইছি না, সাহায্যের প্রস্তাবও পাইনি’
পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে কঠিন সঙ্কটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বন্যা এবং ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর শুরু হওয়া রাজনৈতিক সংঘাত অর্থনীতিতে সেই সঙ্কটকে আরো সঙ্গিন করে তুলেছে।

এই অবস্থায় প্রতিবেশী হিসেবে ভারত কি পাকিস্তানকে সাহায্য করতে পারে, যেমন তুরস্কে ভূমিকম্পের পর ভারত সেদেশে সাহায্য পাঠিয়েছে? এই প্রশ্নে বিলওয়াল ভুট্টো মুখে হাসি নিয়ে বলেন, ‘আমরা তেমন কোনো সাহায্য চাই ছি না বা তেমন প্রস্তাবও পাইনি।’

‘কেউ কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়’
১২ বছর পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারতে আসার তেমন কোনো তাৎপর্য দেখছেন না সিংহভাগ পর্যবেক্ষক। তেমনি কেউই মনে করছেন না এতে সম্পর্কের বরফ গলবে।

২০১১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার যখন দিল্লিতে এসেছিলেন তখনো দু‘দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল তার ছিটেফোঁটাও এখন নেই।

দিল্লিতে জওয়াহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যাপিমন জেকব বলেন, ‘অনেকদিন পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্র ভারতে আসলেন, এটি ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফরের তেমন কোনই তাৎপর্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘কোনো পক্ষই এখন নৌকা আরো দোলাতে চাইছে না, কিন্তু বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য দু‘পক্ষের কেউই তেমন কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি। ‘সম্পর্কে বরফ গলানোর সাথে এই সফরের কোনো ভূমিকা নেই।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ দিয়েও বিন্দুমাত্র কোনো ইতিবাচক শব্দ শোনা যায়নি। জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তিনি (বিলওয়াল ভুট্টো) এখানে এসেছেন এসসিও জোটের সদস্য হিসেবে। এ সফরের ভেতর আপনারা এর চেয়ে বেশি কিছু খুঁজতে যাবেন না।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ তীব্র তাপদাহে খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করল একতা বন্ধু উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গলাচিপায় পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে : ইসি শিশু সন্তান অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, সৎ বাবাসহ গ্রেফতার ২ উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা রা‌তে বৃ‌ষ্টি, দিনে সূর্যের চোখ রাঙানি শিশুদের হাইড্রেটেড-নিরাপদ রাখতে বাড়তি সতর্ক হওয়ার আহ্বান ইউনিসেফের অর্থ আত্মসাৎ: সাইমেক্স লেদারের এমডি ও তার স্ত্রী কারাগারে ফেসবুকে সখ্যতা গড়ে অপহরণ, কলেজছাত্রীসহ গ্রেফতার ৫ ৫ ঘণ্টা হবে এসএসসি পরীক্ষা, ৫০ শতাংশ লিখিত

সকল