১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালনের সময়ে কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালনের সময়ে কয়েক জায়গায় সংঘর্ষ - ছবি : সংগৃহীত

পৌরাণিক চরিত্র রামচন্দ্র- যাকে ভারতের হিন্দুদের একটা বড় অংশ তাদের ভগবান বলে মনে করেন- তার জন্ম উৎসব রামনবমী পালিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা আর লাগোয়া হাওড়া শহরে কয়েকটি সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, হাওড়া শহরের কাজীপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামনবমীর মিছিল ঘিরে বড় সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

বেশ কিছু দোকান ও গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ এবং আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকাটিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ পৌঁছিয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ওই ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, 'তাদের মিছিল কেউ আটকায়নি। কিন্তু হাওড়ায় তাদের অস্ত্র আর বুলডোজার নিয়ে মিছিল করার অধিকার কে দিলো?'

তিনি আরো বলেছেন, 'সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর জন্য তারা বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসেছিল।'

মিছিলটি নির্ধারিত পথ বদলিয়ে একটি সম্প্রদায়কে নিশানা বানিয়েছিল বলেও মমতা মন্তব্য করেন।

এ ছাড়া কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় একটি মসজিদের সামনে দিয়ে রামনবমীর মিছিল যাওয়ার সময়ে সংঘর্ষ হয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। এ সময় বেশ কিছু স্কুটার, মোটরসাইকেল আর গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

ডিজের মাইকে জয় শ্রীরাম
এরকম সহিংসতা হতে পারে, এই আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের শিল্প শহর আসানসোলের এক স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রীই বৃহস্পতিবার স্কুলে আসেনি।

'ওদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে আজ রামনবমী, বাইকে করে অস্ত্র হাতে মিছিল বেরবে, যদি কোনও অশান্তি হয়, সেই ভয়ে বাবা-মায়েরা স্কুলে পাঠায়নি। আর সকাল থেকেই যেভাবে স্কুলের পাশে ডিজে বাজছে জয় শ্রীরাম করে, তাতে মনের মধ্যে একটা ভয় তো কাজ করছেই,' বলছিলেন ওই স্কুলের এক শিক্ষিকা।

তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে দিতে চাইলেন না, কারণ তিনি সরকারি স্কুলে পড়ান।

শিল্পাঞ্চলের শহর রাণীগঞ্জ আর আসানসোলে ২০১৮ সালে রামনবমীর দিনেই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বেঁধেছিল। ওই বছর গোটা রাজ্যে রামনবমীকে কেন্দ্র করে দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক ইমাম-পুত্রসহ অন্তত পাঁচজন।

রামনবমীর মিছিলে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে অস্ত্রও
রামনবমীর দিন, বৃহস্পতিবার, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এবার পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পাঁচ শ'রও বেশি মিছিল করছে।

এর মধ্যে বেশ কিছু মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শনও করা হয়। হিন্দুত্ববাদী নেতারা অবশ্য বলেন যে ওই অস্ত্র কাউকে ঘায়েল করার জন্য নয়, অসুর বধের প্রতীক তাদের ওই অস্ত্র।

তবে কয়েক বছর আগেও এত সমারোহ করে রামনবমী পশ্চিমবঙ্গে পালিত হত না।

রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র কেয়া ঘোষ বলছিলেন, 'ঠিকই, আগে সেভাবে পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালন করা হত না। কিন্তু এখন মানুষ বুঝতে পারছেন যে ভগবান রামচন্দ্র কোনও বিশেষ ধর্মের নয়, তিনি তো ভারতীয়ত্বের প্রতীক।'

'আমরা যে রামরাজ্যের কথা বলি, সেটা হল একটা আদর্শ দেশ। আমরা তো রামরাজ্য স্থাপন করতে চাই। তেমনই পশ্চিমবঙ্গেও আমরা চাইব, রামরাজ্য স্থাপন করতে। আর যারাই ভগবান রামচন্দ্রকে পূজা করেন, তারাই রাস্তায় বেরচ্ছেন, এটা তো সুখের কথা,' মন্তব্য কেয়া ঘোষের।

তার দাবি করেন, রামনবমী পালনের মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই।

কিন্তু ঘটনাচক্রে, ২০১৮ সালে যখন আসানসোল রাণীগঞ্জে দাঙ্গা হয়েছিল রামনবমীর দিন, সেটা ছিল রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে। তারপরের বছর আবার ছিল লোকসভা ভোট। সেই ভোটে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল।

এ বছরও মাস কয়েকের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতের ভোট আসছে। আবারো মহাসমারোহে রামনবমী পালন করছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। যে উদযাপনের সামনের সারিতে বিজেপি নেতা-নেত্রীরাই থাকছেন। যদিও বিজেপি সরাসরি রামনবমীর দিন কোনো মিছিল করেনি।

আবার রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও রামনবমী পালন করছে বৃহস্পতিবার থেকেই। নানা জেলায় তাদের উদ্যোগে রামনবমীর মিছিল, পূজাও হচ্ছে।

প্রতিবছরই সেই আশঙ্কা তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বৃহস্পতিবার বলেছেন যে রামনবমীর মিছিল করতেই পারে কেউ, কিন্তু মুসলমান-প্রধান এলাকায় অশান্তি বাঁধালে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে।

ওই স্কুল শিক্ষিকার কথায়, তাদের শহরে বড় সংখ্যায় অবাঙালি থাকেন, তাই রামনবমী সেখানে ছোট থেকেই পালিত হতে দেখেছেন।

'কিন্তু গত বছর দশেক ধরে রামনবমীর দিন যেভাবে অস্ত্র হাতে কপালে গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে বাইক বাহিনী রাস্তায় নামে, জয় শ্রীরাম রীতিমতো হুঙ্কারের স্বরে দেয়া হয়, তাতে ভয় তো লাগেই। এভাবে রামনবমী কিন্তু আগে হত না,' তিনি বলেন।

'বাঙালিরা, বিশেষ করে নারীরা ত্রস্ত'
বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন বাংলা পক্ষর প্রধান গর্গ চ্যাটার্জি বলছেন, অনেক এলাকাতেই বাঙালিরা বিপদে রয়েছেন।

'শুধু আসানসোল রাণীগঞ্জে নয়, কলকাতা, হাওড়া, লিলুয়া, খড়্গপুর, ভাটপাড়া, শিলিগুড়ির মতো অনেক শহরেই বাঙালীরা, বিশেষ করে নারীরা ত্রস্ত,' বলছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন বাংলা পক্ষর প্রধান গর্গ চ্যাটার্জী।

তিনি বলছিলেন যে বাঙালি হিন্দুরা তো রামচন্দ্রের পুজো সেভাবে করতই না কখনো। এটা একটা নতুন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।

'যেসব এলাকায় রামনবমী মহা ধূমধাম করে করা হচ্ছে, সেখানে বহিরাগত তোষণ এবং তার ফলে অবারিত জনবিন্যাস বদলই প্রত্যক্ষভাবে দায়ী এর জন্য,' বলছিলেন গর্গ চ্যাটার্জি।

'ধর্মকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা প্রদর্শন'
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুন্ধতী মুখার্জি বলছিলেন, শুধু যে রামনবমী পালনের হিড়িক বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে- তা নয়।

এখানে হনুমান মন্দির আর পূজার চল যেমন বেড়েছে, তেমনই মূলত মহারাষ্ট্রে যে গণেশ চতুর্থী পালন করা হত, সেটাও পশ্চিমবঙ্গের পাড়ায় পাড়ায় করা হচ্ছে।

তিনি বলছিলেন, 'অযোধ্যার রামমন্দির আন্দোলন বা ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়েও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালনের এরকম ধুম পড়েনি। এই যে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী এসব বেড়েছে গত কয়েক বছরে, তার পেছনে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির একটা অবদান তো আছেই।'

'কিন্তু একই সঙ্গে বলব গত দশ বছরে এধরণের আরও অনেক পুজো বেড়ে গেছে। আসলে ধর্মটাকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় স্তরে ক্ষমতা প্রদর্শন করার একটা উপায় হয়ে গেছে এগুলো।'

'ধর্মকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষকে জড়ো করছে ওইসব ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিরা। তারা নিশ্চিতভাবেই রাজনীতির মানুষ,' বলছিলেন বিশ্লেষক অরুন্ধতী মুখার্জি।
সূত্র : বিবিসি

 


আরো সংবাদ



premium cement
মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

সকল