২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতে বিয়ের দাবিতে একদল যুবকের পদযাত্রা

পদযাত্রার দৃশ্য - ছবি : বিবিসি

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকে একদল পুরুষ প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পদযাত্রা করে একটি মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেছে যাতে করে তাদের ভাগ্যে বউ জোটে।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও হাস্যরসের জন্ম দিলেও অধিকারকর্মীরা বলছেন, ওই অঞ্চলের আর্থসামাজিক সংকটের একটি চিত্রও ফুটে উঠেছে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে।

পদযাত্রাটি শুরু করেছিলেন ৩০ জনের একটি দল এবং শেষ পর্যন্ত এতে অংশ নিয়েছে ৬০ জনের মতো। এরা সবাই ওই রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার কৃষক।

কয়েক দশক দরেই এখানে নারী-পুরুষের অনুপাতের পার্থক্য বেড়েই চলেছিল এবং যে কারণে অনেক পুরুষই বিয়ের করার জন্য পাত্রী খুঁজে পায় না।

এছাড়া অনেকে আয় কম থাকা কিংবা নারীদের মধ্যে ভিন্ন গোত্রে পছন্দ করার ঘটনার কারণেও পাত্রী সংকট তৈরি হয়েছে।

অবিবাহিতদের পদযাত্রা বা ব্রক্ষ্মচারিগালু পদযাত্রা হিসেবে পরিচিত এই পদযাত্রায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন মাল্লেশা ডিপি।

তারা গিয়েছিলেন মহাদ্বেশাওয়ারা মন্দিরে, যার ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

‘যখন প্রেম করার বয়স ছিল তখন আমি কাজ করেছি। অর্থ আয় করেছি। এখন আমার সব আছে কিন্তু বিয়ে করার জন্য পাত্রী পাচ্ছি না,’ বলেন মাল্লেশা।

অথচ তার বয়স মাত্র ৩৩। তবে তিনি মনে করে নিজ এলাকায় বিয়ে করার জন্য সঠিক বয়স তিনি অতিক্রম করে ফেলেছেন।

এই পদযাত্রা আয়োজক শিবপ্রসাদ কে এম বলেন, এই কর্মসূচির কথা ঘোষণার পর ২০০ জনের মতো নিবন্ধন করেছিল অংশ নেয়ার জন্য।

‘কিন্তু পরে অনেকে অংশ নেননি কারণ স্থানীয় মিডিয়া এটিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছিল,’ বলছিলেন তিনি।

মান্ডিয়া একটি উর্বর কৃষি অঞ্চল। এখানে সবচেয়ে বেশি হয় আখ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি থেকে আয় কমে আসায় পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।

পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আরেকজন ৩১ বছর বয়সী কৃষ্ণ বলেন, এখন অনেকে মনে করে কৃষি পেশায় থাকা পরিবারগুলোর তরুণদের আয়-রোজগার অনিশ্চিত।

মাল্লেশা বলছিলেন, গত কয়েক বছরে অন্তত ৩০ জন নারী তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার পেশা আর একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করা।

‘আমাদের বসবাসের জায়গা ছোট এবং আয় কম,’ বলেন শিবপ্রসাদ। তার মতে এ পেশার পাশাপাশি যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আছে তাদের জন্য বরং বিয়ে করা সহজ।

ওদিকে অবিবাহিত এই যুবকরা যখন বিয়ের আশায় পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছিল তখন একদল কৃষক আখের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে বিক্ষোভ করছিল।

তবে এখনকার পাত্র-পাত্রী বৈষম্যের জন্য অনেকে পুরুষতন্ত্রকেও দোষারোপ করেন। এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা যখন জন্মেছিলেন তখনি ওই অঞ্চলের নারী-পুরুষ অনুপাতের বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছিল।

১৯৯৪ সালে শিশু জন্মের আগে লিঙ্গ পরিচয় জানা নিষিদ্ধ করলেও গর্ভপাত অব্যাহত ছিল বলে জানিয়েছেন একজন অধিকারকর্মী।

‘এখনো স্কুলে তাকালে দেখবেন সেখানে খেলার মাঠে ২০টি মেয়ের সাথে ৮০টি ছেলে,’ বলছিলেন তিনি।

আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী সেখানকার নারী-পুরুষ অনুপাত ২০১১ সালে ছিল ৯৬০ নারী : ১০০০ পুরুষ, যা ২০০১ সালে ছিল ৯৭১ নারী : ১০০০ পুরুষ।

অন্যদিকে নারীদের পছন্দেও পরিবর্তন এসেছে।

জয়শীলা প্রকাশ মান্ডিয়ার হলেও তিনি এখন বাস করেন ব্যাঙ্গালুরুতে পরিবারের সাথে। যদিও তিনি বলেন, তিনি গ্রামে প্রকৃতির কাছে থাকতেই পছন্দ করেন।

তবে অনেক নারীই শহরমুখী হচ্ছেন আরো স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য।

কৃষক পরিবারের নারীকে বাইরে যেতে পরিবারের অনুমতি লাগে। কিন্তু এই প্রজন্ম এভাবে কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না।

যদিও মাল্লেশা বলেন, নারীদের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গিতেও এখন পরিবর্তন আসছে।

শিবপ্রসাদ জানিয়েছেন, তিন দিনের পদযাত্রা শেষে অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেরালার কৃষক পরিবারগুলো থেকেও একই অবস্থার কথা জানিয়ে অনেকে তাকে চিঠি লিখেছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement