২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের রায় কী বার্তা দিচ্ছে

- ছবি - বিবিসি

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তাকে যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। এতদিন প্রধানমন্ত্রীর দফতর ঠিক করত, কারা নির্বাচন কমিশনার আর কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন। এখন থেকে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দলনেতার কমিটি ওই সিদ্ধান্ত নেবে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছিল, তেমনই অভিযোগ আসছিল যে কমিশনের নানা সিদ্ধান্তে ক্ষমতাসীন দল বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ তাদের রায়ে ওই নিয়োগ প্রথাটাই বদলে দিয়েছে।

নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় এ বদল অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই মামলা

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিল। ওই রিট পিটিশনে সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতিটিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।

সংগঠনটি বলেছিল ‘সংবিধানের ১৪ নম্বর ও ৩২৪(২) ধারা দু’টির সাথে ওই নিয়োগ পদ্ধতি সাংঘর্ষিক। এতদিন যেভাবে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ হয়ে এসেছে তা প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতাকেই দুর্বল করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক এবং আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছিল ওই নিয়োগ পদ্ধতিতে।’

এডিআর বলছে, ‘বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কিছু সিদ্ধান্তে এবং যেভাবে সরকার তাদের নিযুক্ত করছে, এর ফলেই এ নিয়োগ পদ্ধতি বদলানোর দরকার পড়েছিল।’

যদিও সংবিধানের ৩২৪(২) নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে লেখা আছে যে দেশের সংসদকে নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন করতে হবে।

এত বছর কোনো সরকারই ওই আইন তৈরি করেনি, ফলে সরকারই নিয়োগ করে এসেছে নির্বাচন কমিশনারদের। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এডিআর বেসরকারিভাবে দেশের সব নির্বাচনই পর্যবেক্ষণ করে।

পশ্চিমবঙ্গের কোঅর্ডিনেটর উজ্জ্বয়িনী হালিম বলেছিলেন, ‘গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নির্বাচন কমিশন একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি নিরপেক্ষ থাকাটাই যথেষ্ট নয়। এ নিয়ে যেন মানুষের মনে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সেটা খেয়াল রাখাও জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা কমিশনের অতি সক্রিয়তা আবার কোনো ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা দেখেছি, ফলে এ প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল সাধারণ জনগণ।’

কেন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন?

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মদন বি লোকুরের নেতৃত্বে ’সিটিজেনস কমিটি অন ইলেকশন্স’ ২০২১ সালের মার্চ মাসে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে তারা দেখিয়েছিল ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জিতে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছিলেন। ওই ভোট পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের কিছু সিদ্ধান্তে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা তৈরি হয়েছিল।

তাদের পর্যবেক্ষণ ছিল, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করে ভোটের ঘোষণা পিছিয়ে দিয়েছিল। এতে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চের মধ্যে অনেকগুলো সরকারি প্রকল্প উদ্বোধন করা যায়। ওই সময় ১৫৭টি প্রকল্পের উদ্বোধনের বেশিরভাগই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই কমিটির আরেকটি পর্যবেক্ষণ ছিল যে ভোটের সময় আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখিয়েছে।

এ ব্যাপারে যে নির্বাচন কমিশনার ভিন্ন মত পোষণ করেছিলেন তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

তৃতীয় পর্যবেক্ষণটি ছিল, ২০২১ সালের ভোটে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে অপব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিরোধী দলগুলো বারবারই প্রশ্ন তুলেছে যে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

বিজেপি কি সত্যিই বাড়তি সুবিধা পেয়েছে?

কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসসহ অন্য অনেক বিরোধী দলই অভিযোগ করে যে বর্তমান সময়ে বিজেপিকে ভোটের সময় বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ ধরনের অভিযোগগুলো অনেক সময়ই পাশ কাটিয়ে যায় নির্বাচন কমিশন।

তবে বিজেপি অভিযোগ করলে তখন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ অভিযোগও উঠেছে একাধিক ভোটের সময়ে। বিজেপি বলছে, এ রকম প্রশ্ন তো আগেও উঠেছে।

দলটির একজন নেতা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলছেন, ‘এটা সঠিক নয় যে ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর আগেও তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তখন বিজেপি ক্ষমতায় ছিল না। ওই সময় বিরোধী দলগুলোও নির্বাচন কমিশনের নানা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।’

‘সুপ্রিম কোর্ট যখন রায় দিয়েছে, সেটা তো মানতেই হবে, কিভাবে কী করা হবে, সেটা সরকার দেখবে। তবে প্রশ্ন হলো, সব ধরনের নিয়োগের ব্যাপারে আদালতের ঢুকে পড়াটা গণতন্ত্রের পক্ষে কতটা কাম্য? যারা সরকার চালায়, তারা নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু আদালত তো তা নয়। তাই গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগগুলো কিভাবে হবে, তা আদালত ঠিক করে দিতে পারে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক হওয়া জরুরি বলে মনে হয়,’ বলছিলেন অধ্যাপক নন্দ।

তিনি যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন, ‘ওইসব দেশগুলোতে কি আদালত এ ধরনের ভূমিকা পালন করে? উত্তর হচ্ছে, না।’

বিচারব্যবস্থায় নিয়োগ নিয়ে বিজেপি সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের মতবিরোধ চলছেই। সরকার যেভাবে বিচারপতি নিয়োগ করতে চায়, সুপ্রিম কোর্ট সেভাবে সায় দিচ্ছে না। এ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা বারবার তাদের মতামত প্রকাশ করছেন।

অধ্যাপক নন্দ আরো একটা প্রশ্ন তুলেছেন, সংবিধানে যখন বলা হয়েছিল যে নির্দিষ্ট আইন করে নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে হবে, ওই আইন এত বছরেও হয়নি কেন, তার দায় কি বিজেপির?

এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘আমাদের দেশে যে গণতান্ত্রিক কাঠামো আছে, তার কোথাও যে কোনো বিচ্যুতি ছিল না, তা তো নয়। ওইগুলো নিয়ে নানা সময়ই প্রশ্ন উঠেছে। বিচ্যুতি ছিল বলেই এত বছর পর আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হলো। নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ নিয়ে গণতন্ত্রের একটা স্তম্ভ হিসেবে বিচার ব্যবস্থাকে এগিয়ে আসতেই হয়েছে। যাতে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ভোটারদের মনে কোনো প্রশ্ন না জাগে।’

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস অবশ্য বলছে, আবারো হয়তো নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলবে। কিন্তু তখন তাদের প্রশ্ন তোলার নৈতিক অধিকার হয়তো থাকবে না।

কারণ এরপর থেকে তো তারাও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
চকরিয়ায় নিখোঁজের ছয় ঘণ্টা পর ২ যুবকের লাশ উদ্ধার সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত ১৫ দিনে সড়কে নিহত ৩৬৭, আহত দেড় হাজারের বেশি তীব্র গরমে পথচারীদের স্যালাইন-পানি বিতরণ আইনজীবী ফোরামের চেলসিকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিল আর্সেনাল শেরপুরে হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে জিম্বাবুয়ের শক্তিশালী দল নওগাঁয় ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় শিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড মিয়ানমারের কারাগারে সাজা শেষে ফিরল ১৭৩ বাংলাদেশী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত : হাইকমিশনার রাজবাড়ীতে হিট স্ট্রোকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যু

সকল