২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

১০ দিনে আদানি গ্রুপের ক্ষতি ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার

- ছবি : সংগৃহীত

আমেরিকার শেয়ার-সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকে শেয়ার বাজারে টানা দরপতনের শিকার হয়েছে আদানি গ্রুপ। গত ১০ দিনে মোট ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার খোয়া গেছে সংস্থাটির। ভারতীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪০১ কোটি টাকা (ভারতীয় রুপি)।

রিপোর্টটি প্রকাশের আগে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার মোট সম্পত্তি ছিল ২১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু গত ১০ দিনে তা ঠেকেছে ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ মোট সম্পদের ৫০ ভাগই খোয়া গেছে।

বাণিজ্য ও অর্থনীতিবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ফরচুন’-এর প্রতিবেদনে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর কার্যরত ধস নেমেছে আদানি গ্রুপের ১০টি সংস্থার শেয়ারে। কোনো সংস্থার শেয়ারে ১৭ ভাগ পতন হয়েছে। কোনোটিতে ৫১ ভাগ পর্যন্ত পড়েছে।

গত বুধবার চলতি অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিনই নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া (এফপিও) বাতিল করে দেয় আদানি গ্রুপ। ২০ হাজার কোটি টাকার ওই এফপিও বাতিলের পর আদানি গ্রুপের শেয়ার দর আরো নেমে গেছে।

হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের প্রথম নয় দিনের হিসাব অনুযায়ী শেয়ার বাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ‘আদানি টোটাল গ্যাস’-এর। সংস্থাটির শেয়ার দর কমেছে ৫১ ভাগ।

১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘আদানি এন্টারপ্রাইজেস’-এর শেয়ারের দাম ৩৮ ভাগ কমেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার লাখ কোটি টাকা। ক্ষতি বিবেচনায় ‘আদানি ট্রান্সমিশন’ আছে তৃতীয় স্থানে। গত নয় দিনে তাদের শেয়ার দর কমেছে ৩৭ ভাগ- প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা।

তালিকায় এর পরেই রয়েছে ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’। সংস্থাটির শেয়ারের দাম কমেছে ৪০ ভাগ। শেষ নয় দিনে ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড সেজ’-এর শেয়ার পড়েছে ৩৫ ভাগ।

‘আদানি পাওয়ার’-এর ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ সংস্থার শেয়ারের দাম গত নয় দিনে ২৩ ভাগ কমেছে। তালিকায় রয়েছে ‘অম্বুজা সিমেন্টস’ এবং ‘আদানি উইলমার’-ও। ২৪ জানুয়ারির পর থেকে ‘অম্বুজা সিমেন্টস’-এর শেয়ারের দাম প্রায় ৩৩ ভাগ কমেছে। ‘আদানি উইলমার’-এর শেয়ারে পতন হয়েছে ২৩ ভাগ।

শেয়ারে ক্ষতির মুখে রয়েছে আদানিদের সদ্য মালিকানা পাওয়া সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও। শেষ নয় দিনে তাদের শেয়ারের দাম ১৭ ভাগ কমেছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরো জানাচ্ছে, আদানি গ্রুপ যে এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে চলেছে, সেই ‘অশনি সঙ্কেত’ অনেক আগেই দিয়েছিল অন্য এক সংস্থার রিপোর্ট।

গত বছরের আগস্ট মাস নাগাদ ব্যবসায় পাল্লা দিয়ে মুকেশ অম্বানীকে টপকে দেশের শীর্ষতম ধনীর তকমা পেয়েছিলেন গৌতম। তখনই ‘ক্রেডিট সাইট’-এর এক সমীক্ষায় উঠে আসে চমকে দেয়া তথ্য।

‘ক্রেডিট সাইট’-এর ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়, আদানি গ্রুপের সাফল্যের পেছনে রয়েছে আদানির পাহাড় সমান ঋণ। তখনই আদানির ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২.২২ লাখ কোটি টাকা।

ওই সমীক্ষায় আরো জানানো হয়, গত বছর বিশ্ব বাজারে আদানির ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৫২ লাখ কোটি টাকা। এক বছরে এই ঋণের পরিমাণ তো কমেইনি। উল্টা ৪২ ভাগ বেড়ে ২.২২ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। এই ঋণের ভার মারাত্মক হতে পারে বলেও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়ে ছিল।

বিদেশী আর্থিক লগ্নি-সংক্রান্ত পরামর্শদাতা সংস্থা ‘ক্রেডিট সাইট’-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, আদানি গ্রুপের ব্যবসার বাড়বাড়ন্তের পেছনে রয়েছে ব্যাপক আর্থিক ঋণ। এই ঋণের কারণে আদানি গ্রুপ বিপদে পড়তে পারে বলেও সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল।

ব্যবসায়িক পরিসর বৃদ্ধি করে আদানি গ্রুপ পৌঁছে গেছে তাপবিদ্যুৎ এবং গ্রিন এনার্জিতেও। আদানির এই রমরমা অবস্থা দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ব্যবসায়ী সংস্থারগুলোরও নজর কেড়েছে। কিন্তু ‘ক্রেডিট সাইট’-এর ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ব্যবসা বৃদ্ধি করতে আদানি গ্রুপ যে ঋণ নিয়েছে, তাতে বড় বিপদে পড়তে পারে তারা।

সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছিল, আদানির বিদেশী মুদ্রায় নেয়া ঋণের পরিমাণও অনেক। তখন এ খবরও ছড়িয়ে পড়ে যে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) থেকে নতুন করে প্রায় ১৪ হাজার কোটি ঋণ নেয়ার আবেদন করেছেন আদানি। এই নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গ্রিন এনার্জি-সংক্রান্ত ব্যবসাও। এর ফলে ঋণের বোঝা আরো বাড়তে পারে বলেও দাবি করা হয়েছিল।

তবে এলআইসি এবং এসবিআই- উভয় সংস্থা সম্প্রতি বিবৃতি দিয়েছে যে শেয়ার বাজারে আদানিদের পতনের আঁচ তাদের গায়ে লাগেনি। সংস্থাগুলোর লাভেও প্রভাব পড়েনি বলেই জানানো হয়েছিল।


হিন্ডেনবার্গের আনা অভিযোগে কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আদানিরা?

আদানিদের পাল্টা অভিযোগ, হিন্ডেনবার্গ স্বল্পমেয়াদি মুনাফার জন্য রিপোর্ট তৈরি করেছে। এই রিপোর্ট ভারতের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়ার চক্রান্ত বলেও তারা দাবি করে। কিন্তু এ আক্রমণাত্মক বিবৃতি তাদের কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু হিন্ডেনবার্গ জবাব পেয়েছে- জাতীয়তাবাদের আড়ালে প্রতারণা ঢাকা দেয়া যায় না।

হিন্ডেনবার্গ আদানিদের ব্যাপারেই প্রথম রিপোর্ট করেনি। ২০১৭ সাল থেকে কমপক্ষে ১৬টি আলাদা আলাদা গ্রুপ ও সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবসায় নিয়মবিরুদ্ধ কাজের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে সংস্থাটি।

২০২০ সালের বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা নিকোলার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ আনে হিন্ডেনবার্গ। নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ওই সংস্থা দেউলিয়া হয়ে যায়।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement
‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি

সকল