২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীতে কি হিন্দুত্ববাদ প্রবেশ করছে!

রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীতে কি হিন্দুত্ববাদ প্রবেশ করছে! -

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেছেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীর গৈরিকীকরণ হচ্ছে। গৈরিকীকরণ শব্দটা ভারতে হিন্দুত্ববাদের প্রভাব বিস্তার বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।

মমতা ব্যানার্জির ওই অভিযোগের যে লিখিত জবাব বিশ্বভারতী দিয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবেই রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে করছেন সবাই। বিশ্বভারতী একটি কেন্দ্রীয় সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। রীতি অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হয়ে থাকেন দেশের প্রধানমন্ত্রীরা।

ওই হিসেবে বর্তমানে বিশ্বভারতীর চ্যান্সেলর নরেন্দ্র মোদি। আর বর্তমানের ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ঘনিষ্ঠ হিসেবেই শিক্ষা মহলে সুপরিচিত।

কয়েক বছর আগে তিনি ভিসির পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিকভাবে অশান্ত হয়ে উঠছে শান্তিনিকেতন।

শান্তিনিকেতনে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি ভিসিকে সরাসরি নিশানা করে বলেন, ‘ঠাকুরবাড়ির বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর এসেছিলেন আমার কাছে, দুঃখ করছিলেন তার বাড়ির সামনেও নাকি পাঁচিল তুলে দিয়েছে। আশ্রমিকরা কষ্টে আছেন খুব। সবাই জেলখানায় থাকবে আর উনি (ভিসি) মুক্তখানায় থাকবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বভারতীর, আমার লাল মাটির জায়গাটাকে গৈরিকীকরণ করবেন। এই একটা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের অধীনে, তাদের এই হাল। প্রধানমন্ত্রী তো এটার চ্যান্সেলর, তার তো দেখা উচিত।’

বিশ্বভারতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

রবীন্দ্রনাথের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমুখে চলছে বিশ্বভারতী
শুধু যে মমতা ব্যানার্জি বিশ্বভারতী নিয়ে ক্ষুব্ধ তা নয়। প্রবীণ আশ্রমিকদের একটা বড় অংশই বিশ্বভারতীর কাজকর্মে বিরক্ত। তারা বলছেন যে রবীন্দ্রনাথের আদর্শের পুরো বিপরীতে হাঁটছে বিশ্বভারতী।

ঠাকুর পরিবারের বংশধর, শিক্ষাবিদ ও আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমুখে চলছে বিশ্বভারতী। একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের এই প্রতিষ্ঠানটাকে। চারদিকে পাঁচিল তুলে দিচ্ছেন ভিসি, স্বাধীনভাবে পড়াতে পারছেন না শিক্ষকরা, যাকে যখন ইচ্ছা সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

মমতা ব্যানার্জির অভিযোগের লিখিত জবাব দিয়েছে বিশ্বভারতী।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘বিশ্বভারতী একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা, কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর পথপ্রদর্শনে চলতে অভ্যস্ত।’

এই বিবৃতিটির প্রতিটি লাইনেই রাজনীতি প্রকট হয়ে উঠেছে।

অমর্ত্য সেনের বাড়ি নিয়ে বিশ্বভারতীর অভিযোগ
রাজ্য সরকারের সাথে বিশ্বভারতীর সর্বশেষ বিতর্কের শুরু হয় শান্তিনিকেতন আশ্রম এলাকায় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাসভবনকে ঘিরে।

বিশ্বভারতী তার বাবাকে বাড়ি করার জন্য যে জমি দিয়েছিল, তার থেকে কিছুটা জমি নাকি বেশি দখল করে রেখেছেন অমর্ত সেন, এমনটাই অভিযোগ করে কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ভিসি হয়ে আসার পরে একাধিকবার অমর্ত্য সেনের পৈতৃক বাসভবন নিয়ে একই অভিযোগ তুলেছে বিশ্বভারতী। অধ্যাপক সেন প্রতিবারই ওই অভিযোগ নাকচ করেছেন।

এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের ভূমি দফতরের রেকর্ডে থাকা পর্চা প্রকাশ করে জানিয়েছে যে যতটা জমি সেন পরিবারকে দিয়েছিল বিশ্বভারতী, ঠিক ততটাই তিনি রেখেছেন। বাড়তি জমি নেই।

এই তথ্য মুখ্যমন্ত্রী তার শান্তিনিকেতন সফরের সময়েই অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন। তার ফলে বিশ্বভারতী যে দাবি করে আসছিল এতদিন, তা যে অসত্য, সেটাও প্রমাণিত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেন পরিবারের জমি নিয়ে মমতা ব্যানার্জি তথ্য প্রকাশ করে দেয়ার ফলে মুখ পুড়েছে বিশ্বভারতীর। তাই একটা রাজনৈতিক বিবৃতি দিয়েছে তারা।

জমি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ভিসি মন্তব্য করেন যে অমর্ত্য সেন নোবেল বিজেতা নন, তিনি নিজেই নাকি প্রচার করে থাকেন যে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

ভিসি আরএসএস ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত
বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদের স্বপক্ষে রাজনীতি করার অভিযোগ আগেও উঠেছে। অর্মত্য সেনের বিরুদ্ধেও জমি দখল করে রাখার বিষয়টিও রাজনৈতিক বলেই মনে করা হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে অধ্যাপক সেনের মতামত হিন্দুত্ববাদীদের বিপক্ষেই যায়, তাই তাকে যে বিশ্বভারতী পছন্দ করবে না, এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

প্রাবন্ধিক রন্তিদেব সেনগুপ্তর কথায়, ‘রবীন্দ্রনাথের মুক্তচিন্তার যে আদর্শ, তা তো আরএসএস বিজেপির আদর্শের একেবারে বিপরীত। রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িকতার ঊর্দ্ধে ছিলেন। এরা তো সেই চিন্তাভাবনাগুলো মেনে নিতে পারে না। বিশ্বভারতী বা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মত মুক্তচিন্তার চর্চা হওয়া সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই একটা অশান্ত পরিবেশ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেয়া যায়। কেউ যাতে আর মুক্তচিন্তা করতে না পারে।’

তিনি আরো বলছিলেন, ‘ভিসিরকাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে তিনি বিশ্বভারতী যেন ধ্বংস করার অ্যাজেন্ডা নিয়েই এসেছেন এখানে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল