২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে বাজেট ঘোষণার আগে কর্মকর্তাদের হালুয়া খাইয়ে আটকে রাখা হয়

ভারতে বাজেট ঘোষণার আগে কর্মকর্তাদের হালুয়া খাইয়ে আটকে রাখা হয়। - ছবি : সংগৃহীত

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন বুধবার পরের আর্থিক বছরের জন্য বাজেট পেশ করেছেন। কিন্তু এই বাজেট পেশের আগে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে লকইন বা তালাবন্দী অবস্থায় আটকে থাকতে হয় দফতরেই। আর ওই বন্দীদশায় যাওয়ার আগে তাদের মন্ত্রী নিজ হাতে হালুয়া খাওয়ান।

বাজেটের তথ্য যাতে বাইরে প্রকাশ না পায়, তাই যেসব কর্মীরা বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেন ও যারা তা ছাপার কাজ করেন, তাদেরই বন্দীদশায় পাঠানোর আগে মিষ্টিমুখ করানো হয় হালুয়া খাইয়ে। বহু দশক ধরেই এই রীতি চলে আসছে ভারতে।

কেন আটকে রাখা হয় কর্মকর্তাদের?
ইতিহাস বলছে, ১৯৫০ সালে পার্লামেন্টে পেশ করার আগেই একবার বাজেটের তথ্য বাইরে প্রকাশ হয়েছিল। ওই সময় রাষ্ট্রপতি ভবনের ছাপাখানায় বাজেট ছাপা হতো। কিন্তু ওই ঘটনার পরে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দিল্লির মিন্টো রোডে সরকারি ছাপাখানায় বাজেট ছাপা হতো, আর ৮০ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেসমেন্টে নিজস্ব ছাপাখানা তৈরি করা হয়।

সম্প্রতি বাজেটের বিশালাকার বই আর ছাপা হয় না, বেশিরভাগটাই হয়ে গেছে ডিজিটাল। তবুও রীতি মেনে ছাপার কাজে যুক্ত সব কর্মকর্তা আর কর্মীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় নর্থ ব্লকেই। আর এই বন্দীদশায় যাওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী নিজে হাতে ওই কর্মী-অফিসারদের হালুয়া খাইয়ে দেন।

এটাকে বলা হয় ‘হালুয়া উৎসব’। ভারতীয় সংস্কৃতিতে যেহেতু যে কোনো ভালো কাজে মিষ্টি খাওয়ানো হয়, ওই রীতি মেনেই হালুয়া খাওয়ানো হয়। তবে গত বছর হালুয়া উৎসব পালন করা হয়নি কোভিডের কারণে, কর্মীদের দেয়া হয়েছিল মিষ্টির বাক্স।

এ বছর ওই উৎসব পালিত হয়েছে ২৬ জানুয়ারি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের টুইটারে যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামনের সাথেই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদেরও দেখা যাচ্ছে। তাদের সামনে রাখা আছে হালুয়া ভর্তি একটা বিশাল কড়াই। নিজ হাতে মন্ত্রীকে হালুয়া তুলে দিতেও দেখা গেছে। আর তারপরেই শুরু হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের বন্দীদশা।

বন্দীদশা কেমন কাটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের?
একটা সময়ে বাজেট পেশ হওয়ার প্রায় দু’সপ্তাহ আগে থেকেই ’লকইন’ শুরু হতো। কিন্তু এখন বাজেটের বড় অংশ ডিজিটাল হওয়ার কারণে সপ্তাহখানেক সময় কর্মীদের আটকে থাকতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রীর বাজেট ভাষণ শেষ হওয়ার পরেই তারা বের হতে পারেন।

এই প্রক্রিয়াটি এতটাই গোপনীয়, যে বর্তমান কর্মকর্তারা তো নয়ই, এমনকি প্রাক্তন কর্মকর্তারাও কথা বলতে রাজি হন না।

তবে এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, যিনি নিজে সরাসরি ওই বাজেট ছাপার কাজের সাথে যুক্ত থাকেননি, কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, তিনি বলছেন, ’লক ইন শুরু হওয়ার আগে নর্থ ব্লকের বেসমেন্টে ভালো করে তল্লাশি চালানো হয়। কর্মীরা ওই সময়ে থাকা, খাওয়া সবই করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেসমেন্টেই। তারা নিজেদের কাছে কোনো মোবাইল ফোন রাখতে পারেন না। পরিবারের সাথেও যোগাযোগ রাখা যায় না। আর কোনো জরুরি প্রয়োজনে ফোন করতে হলে তা করতে হয় অন্যদের সামনেই। চারদিকে লাগানো থাকে সিসি টিভি-র ক্যামেরা। ২৪ ঘণ্টাই নজরদারী চলতে থাকে।’

বাজেট যাতে কোনো ভাবে প্রকাশ না হয়ে যায়, তার জন্য পুরো ভাষণটা অনেক ভাগে ভাগ করে একেকজনকে একেকটা অংশের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুরোটা কোনো একজন জানতেই পারেন না।

বন্দীদশা কমে এসেছে সম্প্রতি
১৯৮০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এটাই ছিল রীতি। তবে তারপরে বাজেটের বেশিরভাগই ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় ছাপার কাজ এখন অনেক কম। তবুও কিছু নথিপত্র ছাপতেই হয়। তাই আগে যে বন্দীদশা কাটত অন্তত দু’সপ্তাহের, এ বছর তা নেমে এসেছে মাত্র পাঁচ দিনে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন এখন তার ট্যাবলেট থেকেই বাজেট ভাষণ পড়েন।

আর আগে যে বিপুল সংখ্যক বাজেট বক্তৃতা ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট মোট ১৪টি নথির বহু সংখ্যক কপি ছাপা হতো, কমিয়ে দেয়া হয়েছে তাও।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement