১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোবাইল ফোনের বাজারে চীনকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় ভারত

মোবাইল ফোনের বাজারে চীনকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় ভারত - ছবি : সংগৃহীত

ভারতের মোবাইল ফোনের বাজারে অনেক দিন ধরেই আধিপত্য করছে চীনে তৈরি ফোন। তবে এখন চীনের এই বাজারে দাঁত বসাতে চাইছে ভারতীয় মোবাইল ফোন-নির্মাতারা।

তবে ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয় তার ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি হচ্ছে চীনা।

তাই তাদের চ্যালেঞ্জ করতে হলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে অনেক দূর যেতে হবে। তবে ভারতীয় কোম্পানিগুলো আশা করে তারা একসময় তাদের নিজ দেশেই বিশ্বমানের মোবাইল ফোন শিল্প গড়ে তুলতে পারবে।

সত্যি কি এটা করতে পারবে তারা? কিভাবেই বা তা সম্ভব হবে?

স্মার্ট ফোন, কিন্তু সস্তা
মুম্বাইয়ে মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন দীপা আসওয়ানি। একটা নতুন স্মার্টফোন কেনা তার কাছে একটা নতুন মিশনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

‘কী ফোন কিনবো তার বেলায় আমি ভীষণ খুঁতখুঁতে’– বিবিসির প্রীতি গুপ্তা ও বেন মরিসকে বলছিলেন তিনি, ‘আমি এজন্য খুব বেশি অর্থ খরচ করতে চাই না।’

‘তবে আমি চাই এমন একটা ফোন- যাতে সব ভালো ভালো ফিচারগুলো থাকবে, কিন্তু যা কিনতে আমার পকেট ফুটো হয়ে যাবে না।’

দু’মাস ধরে অনেক বাছাবাছি করে শেষ পর্যন্ত দীপা যে ফোনটি কিনলেন, তা হলো ‘ওয়ানপ্লাস টেনআর’। দাম পড়েছে ৪০০ ডলার, স্মার্টফোনের জন্য যথাযথ দামই বলতে হবে, কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের বিচারে এটা বেশ বড় অংক।

তবে দীপা বলছেন, শেষ পর্যন্ত যে ফোনটি তিনি কিনেছেন তা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।

ভারতে চীনা মোবাইল ফোন
ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ ফোনের মতো দীপার ওয়ানপ্লাস ফোনটিও একটি চীনে তৈরি মোবাইল ফোন।

এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২২ সালে ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে তার ৬০ শতাংশই চীনে তৈরি।

কিন্তু এ সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় চার শতাংশ কম। ২০২১ সালে ভারতে বিক্রি হওয়া চীনা ফোনের পরিমাণ ছিল ৬৪ শতাংশ।

এর কারণ হলো, ভারতীয় মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাজারে দাঁত বসাতে শুরু করেছে।

চীনের সাথে পাল্লা দেয়া ‘কঠিন’
ভারতের বাজারে চীনা ফোনের আধিপত্যকে যারা চ্যালেঞ্জ করছে– তাদের মধ্যে একটি কোম্পানি হচ্ছে মাইক্রোম্যাক্স ইনফরমেটিক্স।

তারা মোবাইল ফোনের বাজারে ঢুকেছে ২০০৮ সালে। কিন্তু দুই বছরের মধ্যেই তারা ভারতের অন্যতম বৃহৎ সস্তা ফোন-নির্মাতায় পরিণত হয়– যাকে বলা হচ্ছে ‘ফিচার’ ফোন।

তবে মাইক্রোম্যাক্সের এই বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও এর সহপ্রতিষ্ঠাতা রাজেশ আগরওয়াল স্বীকার করছেন, চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা খুব কঠিন।

আগরওয়াল বলছেন, তার কোম্পানি যখন একটা নতুন ফোন বাজারে ছাড়ে তখন আদের আশা থাকে যে এটা মোটামুটি ১০ লাখ ইউনিট বিক্রি হবে। কিন্তু একটি চীনা কোম্পানি বিক্রি করে তার ১০ গুণ, এক কোটি বা তারও বেশি ফোন। ফলে তারা একেকটি ফোনের দাম অনেক সস্তা রাখতে পারে।

তাছাড়াও আগরওয়াল বলছেন, চীনা কোম্পানিগুলোর উৎপাদনব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী এবং তারা তাদের ফোনের প্রায় সব যন্ত্রাংশই স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারে।

সমস্যা হলো, ভারতে মোবাইল ফোনে চার্জার, কেবল বা ব্যাটারির মতো কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি হয় বটে– কিন্তু কম্পিউটার চিপস বা স্ক্রিনের মতো জটিল যন্ত্রাংশগুলো প্রায় সবই তৈরি হয় বিদেশে।

‘ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে এটা সবে শুরু মাত্র’- আগরওয়াল বলছেন, ভারতকে মোবাইল ফোনের সব যন্ত্রাংশই নিজ দেশে তৈরি করতে হবে।

তিনি আরো বলছেন, শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোই যে লক্ষ্য হতে হবে তা নয়, বরং ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের মতো ডিভাইসগুলোর বিশ্ববাজারেও প্রবেশ করতে হবে।

সরকারি প্রকল্প পিএলআই
এরকম ভাবনা থেকে ভারতের সরকারও একটা উদ্যোগ নেয় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে।

প্রোডাকশন লিংকড ইনসেন্টিভ বা পিএলআই নামে একটি স্কিম হাতে নেয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য ভারতে সবরকম ম্যানফ্যাকচারিং বাড়ানো– আর তার অংশ হিসেবে টেলিকম ও নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি তৈরি করা।

মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হলে তাদের ভর্তুকিও দিচ্ছে এই পিএলআই।

বর্তমানে একটা ভারতীয় মোবাইল ফোনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হচ্ছে। পিএলআইয়ের লক্ষ্য এই অনুপাত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।

ভারতের সেলুলার এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স সমিতি আইসিইএ’র চেয়ারম্যান পংকজ মহিন্দ্রু বলছেন, ভারতে মোবাইল ফোন ম্যানফ্যাকচারিং এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে, এবং তারা এখনই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্যান্ডস্টে প্রস্তুতকারকে পরিণত হয়েছে।

ভারতের একটি মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি লাভা ইন্টারন্যাশনাল। এর চেয়ারম্যান হরি ওম রাই বলছেন, ভারত আগামীতে ফোন উৎপাদনের বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। কারণ তার কথায়, চীন ক্রমশ ধনী হচ্ছে, বেতন বাড়ছে, ফলে দামের ক্ষেত্রে তাদের যে সুবিধা তা তারা হারিয়ে ফেলছে।

তাছাড়া বিশ্বের কিছু বড় বড় ফার্ম চীনা পণ্যের ওপর বেশি নির্ভরশীল হবার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে, বলছেন রাই। তার কথায়, এসব ফার্ম যদি অন্য কোনো দেশে চলে যেতে চায়, তাহলে ভারতই হবে আকর্ষণীয় বিকল্প।

অবশ্য মুম্বাইয়ের দীপা আসওয়ানি এসব নিয়ে ভাবিত নন।

তার কথা- ‘আমার স্মর্টফোন কোথায় তৈরি হলো না-হলো এ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।’

‘আমি একজন ক্রেতা। আমার কাছে ফোনের ফিচার আর তার দাম– এ দুটোই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ বলেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ভারত ভ্রমণ শেষে তিন দিনে দেশে ফিরল ১৫ হাজার পর্যটক ঢাকায় ভিসা সেন্টার চালু করল চীনা দূতাবাস গলাচিপায় স্ত্রীর দাবিতে এক তরুণীর অনশন ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইসফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি

সকল