২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যৌন নিপীড়ন মামলায় ১৪ বছরের জেল ভারতের জিলিপি বাবার

যৌন নিপীড়ন মামলায় ১৪ বছরের জেল ভারতের জিলিপি বাবার - ছবি : সংগৃহীত

দিল্লির পাশের রাজ্য হরিয়ানার টোহানা শহরের আলোচিত জিলিপি বাবাকে যৌন নিপীড়নের মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। হরিয়ানা রাজ্যের ফতেহাবাদ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ৫ জানুয়ারি জিলিপি বাবা নামে পরিচিত ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ডের রায় দেয়।

জিলিপি বাবা অমরপুরী বা বিল্লু রাম নামেও পরিচিত।

তার নামে অভিযোগ, তিনি নারীদের যৌন নিপীড়ন করে সেগুলো ভিডিও করতেন। আবার ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীদের তিনি ব্ল্যাকমেইল করতেন। নির্যাতিত নারীরা লজ্জায় বিষয়টি কাউকে জানাতেন না।

২০১৭ সালে পুলিশের কাছে এক নারী প্রথম অভিযোগ জানান। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় ওই জিলিপি বাবাকে।

পাঞ্জাবের মনসায় জন্মানো বিল্লু রাম আট বছর বয়সে বাড়ি ছাড়ে। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছান দিল্লী। যেখানে দিগম্বর রামেশ্বর নামে এক বাবার সাথে তার দেখা হয়।

পুলিশের কাছে দেয়া তথ্যে বিল্লু রাম জানায়, ওই দিগম্বর রামেশ্বরকে নিজের গুরু মেনে তার সাথে মধ্য প্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনীতে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় দশ বছর ছিলেন তিনি।

তারপরে নিজের গ্রাম মনসায় ফিরে আসেন বিল্লু রাম। তার বিয়েও হয় সেখানে। রোজগারের আশায় পাঞ্জাব থেকে হরিয়ানার টোহানা শহরে পৌঁছান তিনি। এরপর একটা ঠেলাগাড়িতে জিলিপি বিক্রি শুরু করেন।

টোহানার বাসিন্দা, সিনিয়র সাংবাদিক গুরদীপ ভাটি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে বিল্লুর জিলিপি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হরিয়ানার টোহানা বেশ পরিচিতি পায় বিল্লুর জিলিপি।

গুরদীপ ভাটি জানান, ২০ বছর আগে নিজের বাড়িতে একটা মন্দির বানায় বিল্লু রাম। ওই মন্দিরে বসেই তিনি নারীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে তার সমাধান বলে দিতেন। এই সময়ে তিনি বিল্লু রাম থেকে হয়ে ওঠেন জিলিপি বাবা হয়ে ওঠেন।

পুলিশের অভিযোগপত্রে জানা যায়, জিলিপি বাবার মন্দিরে শারীরিক ও মানসিক দু’ধরনের নারী রোগী আসত।

মন্ত্র পড়ে নারীদের সুস্থ করার দাবি করতেন জিলিপি বাবা। আর সেই সময়েই চা বা অন্য কিছুর সাথে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে দিতেন রোগীদের। নেশা হয়ে যাওয়ার পরে ওই নারীদের ওপরে যৌন নির্যাতন চালাতেন। যা রেকর্ড হয়ে থাকত মন্দিরে লাগানো গোপন ক্যামেরায়। আর ওই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়েই নারীদের ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি।

নারীরা ছাড়া নাবালিকাদেরও নিজের শিকার বানাতেন জিলিপি বাবা। আর প্রত্যেকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন তিনি।

লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতিত নারীরা পুলিশের কাছে বা নিজের পরিবারের কাছেও কিছু জানাত না। ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর পুলিশের কাছে এক নারী প্রথম অভিযোগ করে।

তিনি অভিযোগে আরো জানান, তার সাথে যা করা হয়েছে, ওই অশ্লীল ভিডিও জিলিপি বাবা ভাইরাল করে দিয়েছেন।

ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারার সাথেই জিলিপি বাবার ওপরে মাদক ও অস্ত্র আইনেও মামলা করে পুলিশ। মন্দির থেকে উদ্ধার হয় মাদক।

ভারতে জিলিপি বাবার আগে প্রায় এক ডজন ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এদের মধ্যে বেশি আলোচিত দু’টি নাম আসারাম বাপু ও গুরমিত রাম রহিম।

সারা দেশে চার শ’র বেশি আশ্রমের প্রধান ও লাখ লাখ ভক্ত যাকে গুরু বলে মনে করতেন, সেই আসারাম বাপুকে রাজস্থানের আদালত আজীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, তিনি এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছিলেন। ওই একই মামলায় আসারাম বাপুর দুই সহযোগীর ২০ বছরের সাজা হয়।

গুরমিত রাম রহিম নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম দিয়েছিলেন ডেরা সাচ্চা সৌদা। দু’জন নারীভক্তকে ধর্ষণের দায়ে তার ২০ বছরের জেল হয়। বিলাসবহুল জীবনযাপন আর প্রচার সর্বস্ব ওই কথিত ধর্মগুরুকে গ্রেফতার করার সময়ে তার ভক্তরা দাঙ্গা বাধিয়েছিল পাঞ্জাবের বিভিন্ন শহরে। সেই সহিংসতায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়।

শুধু হিন্দু ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ আছে, তা না। কেরালার এক খ্রিষ্টান বিশপ ফ্রাঙ্কো মুলাক্কালের বিরুদ্ধে এক খ্রিষ্টান সন্ন্যাসিনী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলে। তিনিই ভারতের প্রথম বিশপ, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই বিশপকে পরে অবশ্য কেরালার এক আদালত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement