১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকছে নেপালিরা!

রাজা মহেন্দ্র - ছবি : সংগৃহীত

সেদিন নির্বাচনী প্রচারণা তুঙ্গে। কাঠমান্ডুর বসন্তপুর এলাকায় আচমকাই প্রচারে নেমে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি বললেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। না, তিনি এবারে ভোটে দাঁড়াননি। কিন্তু রাজতন্ত্র আবার নেপালে ফিরিয়ে আনা কতটা দরকার, তা ঘুরে ঘুরে ব্যাখ্যা করছেন। অথচ এই মনীষার দাদা বি পি কৈরালা একসময় রাজতন্ত্রের অবসানের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তিনি নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ১৮ মাস ক্ষমতায় থাকার পর তৎকালীন রাজা মহেন্দ্র তাকে বরখাস্ত করে জেলে পাঠিয়েছিলেন।

সেই বি পি কৈরালার নাতনি কেন প্রচার করছে রাজতন্ত্র ফেরানোর? কেন রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির হয়ে এত কথা বলছেন? নেপালের রাজনীতিতে আরো বিস্ময়, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্ক্সবাদী- লেলিনবাদী) নেমে পড়েছে সেই রাজতন্ত্র ফেরাতে। পাহাড়ি দেশের কমিউনিস্টদের সবচেয়ে বড় পার্টির এই অবস্থান অনেককেই বিস্মিত করছে।

গত কয়েক দিন নেপালের তরাই আর পাহাড়, দুই অংশেই ঘুরে মনে হয়েছে, এই ছোট্ট দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। দুর্নীতি, আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, কর্মহীনতা আর অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে বড় অংশের মানুষকে। বিমানবন্দরে বিদেশে যাওয়ার চারটি লাইন। দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক ছুটছেন আরব মুলুকে। বাকিরা ভারতে চলে যাচ্ছে ছোট কাজের আশায়। রাজতন্ত্রের অবসান, মাওবাদীদের ক্ষমতায় আসা, কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিশ্রুতি, কিছুই ‘ভালো দিন’ দেখায়নি। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে নির্দলদের প্রতি ঝোঁক, অন্যদিকে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা। রাজা ফিরে এলেই যেন সব ঠিক হয়ে যাবে। বিশেষ করে পাহাড়ি উচ্চ বর্ণের মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।

নেপাল কার্যত তিন অংশে বিভক্ত। এক, মাধেশি বা সমতলের মানুষ। জনসংখ্যায় তারা ৫১ শতাংশ প্রায়। এদের মধ্যে আছে ভোজপুরী, মৈথিলি, আওধী, রাজবংশী আর মুষ্টিমেয় বাংলাভাষী। দ্বিতীয় অংশে আছেন জনজাতী। যাদের আমরা দার্জিলিং, কালিম্পিঙ, কাশিয়াংয়ে বেশি দেখি। মগর, গুরুং, থাপাসহ অন্যরা। আর তৃতীয় তথা প্রধান শক্তি হচ্ছেন নেপালের পাহাড়ি উচ্চ বর্ণের মানুষ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় আর বৈশ্যরা। ‘বাউন- ছেত্রী’ রাজ চলে কাঠমান্ডু উপত্যকা থেকে। নেপালের রাজনীতির মূল শক্তি এই অংশ। নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাতটি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে দেশকে। সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো পছন্দ নয় রক্ষণশীলদের। এই পরিস্থিতিতেই কিন্তু রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ঝোঁক।

প্রশ্ন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির দল কেন এই পক্ষে। তার জন্য ফিরে যেতে হবে পেছনে। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালে কলকাতায়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পুষ্পলাল শ্রেষ্ঠ বা পি এল। তিনি নেপালি কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে রাজতন্ত্রের অবসানের ডাক দেন। তাকে সরিয়ে পার্টির ক্ষমতায় আসেন কেশর জং রায়মাঝি। তিনি ভূস্বামী পরিবারের সন্তান ছিলেন। পেশায় চিকিৎসক। তার লাইন ছিল রাজার সাথে হাত মিলিয়ে ভারত বিরোধিতা। সিপিআই নেতা দার্জিলিংয়ের রতনলাল ব্রাহ্মণের হাত ধরে তার রাজনীতি শিক্ষালাভ। ওই লাইনেই ভারতবিরোধী, রাজতন্ত্রের সমর্থক ওলি এবং তার দল।

নেপালে গত কয়েক বছরে চীনের আধিপত্য বেড়েছে। টিভি খুললেই বা রাস্তার হোর্ডিং, সর্বত্রই শিবম সিমেন্ট বা বিভিন্ন নির্মাণ শিল্পের বিজ্ঞাপন। সবই চীনের বিনিয়োগ। নেপালে রাজা মহেন্দ্রের আমল থেকেই চীনের প্রতি ঝুঁকে ছিল রাজতন্ত্র। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এখন রাজতন্ত্র ফিরিয়ে এনে চীনপন্থী কমিউনিস্টদের ক্ষমতায় ফেরানো লক্ষ্য বেইজিংয়ের। আর সেই লক্ষ্যেই রাজা- বাম-ব্যবসায়ী- উচ্চ বর্ণের একাংশের এই অবস্থান। এদিকে, সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

 


আরো সংবাদ



premium cement