২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিপ্লবের বিদায়েও থামছে না ত্রিপুরা বিজেপির তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব!

বিপ্লবের বিদায়েও থামছে না ত্রিপুরা বিজেপির তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব! - ছবি : সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় হাওয়া বদলাতে প্রায়ই ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলে পথে হেঁটেছে। গত কয়েক বছরে, কর্ণাটক, গুজরাট, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদলেছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতার মুখ্যমন্ত্রিত্বের গদিও টলে গিয়েছিল একটা সময়ে। এহেন বিজেপি এবার ত্রিপুরায় নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে ‘সংশোধনমূলক’ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বদল করল।

শনিবার আচমকাই বিকেলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে পদ ছাড়েন বিপ্লব দেব। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মানিক সাহার নাম ঘোষিত হয় পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। আর তারপরই বিজেপির দফতরেই বিধায়কের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছিল। আর এদিন মানিক সাহার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেন বহু তাবড় নেতা। এই আবহে প্রশ্ন উঠেছে, মানুষের মনে জায়গা বানাতে গিয়ে দলের ফাটল আরও চওড়া করল না তো বিজেপি?

এর আগে শনিবার বিজেপি পরিষদীয় দলের প্রধান হিসেবে মানিক সাহার নাম ঘোষণা হতেই বিধায়ক তথা মন্ত্রী রামপ্রসাদ পালকে দেখা গিয়েছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের দিয়ে চেয়ার ছুড়তে। যদিও আজকে তার সুর নরম। দীর্ঘদিন আরএসএস-এর সাথে যুক্ত থাকা রামপ্রসাদ হিন্দুস্তান টাইমসকে রোববার বলেন, ‘বিজেপি একটি গণতান্ত্রিক দল। দলের সবকিছুই শৃঙ্খলা মেনে হয়। আমি এখানে দলের হয়ে কাজ করতে এসেছি।’

এদিকে সুর নরম করলেও রামপ্রসাদকে এদিন মানিক সাহার শপথ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। তিনি এবং উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মাকে যখন রাজভবনে দেখা যায়, ততক্ষণে শপথগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, বিপ্লবের পদত্যাগের পর জিষ্ণু, রামপ্রসাদের নাম উঠে এসেছিল সম্ভাব্যদের তালিকায়। তবে তাদের দু’জনের কাউকেই বাছা হয়নি। বাছা হয়েছে রাজ্যসভার এক সদস্যকে। যাকে উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হতে হবে নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে।

এদিকে বিপ্লব দেব সরে যাওয়ার বিষয়টি যে হজম করা কঠিন, তা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায় বলেন, ‘আমরা বিপ্লব দেবজির সাথে খুবই বেশি যুক্ত ছিলাম। তবে আমাদের দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। আমরা বিধায়ক হিসাবে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব এবং আমরা অবশ্যই ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতব।’

এদিকে ২০১৫ সালে বিজেপি যোগ দেয়া মানিক সাহা পান্না প্রধান পদ থেকে ধাপে ধাপে উঠে রাজ্য সভাপতি হয়েছিলেন। সেই তিনি এখন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের সংবাদ সম্মেলনে তার গলায় শোনা গেল ‘উন্নয়নের বার্তা।’ এদিকে সদ্য প্রাক্তন হওয়া বিপ্লববাবুর গলায় শোনা গেল ‘শুভেচ্ছা বার্তা’। উত্তরসূরির উদ্দেশে বিপ্লব দেব বলেন, ‘আমি আশা করি আমাদের নতুন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন আমি তা পালন করব।’

বিপ্লব দেবকে সরানোর জন্য এর আগে বিজেপি অন্দরে ঝড় বয়ে গিয়েছিল ত্রিপুরায়। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের সামনেই উঠেছিল ‘বিপ্লব হটাও’ স্লোগান। এক সময় সুদীপ রায় বর্মণও বিপ্লবের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন। পরে তো তিনি দল ছেড়ে ফের কংগ্রেসে ফিরেও যান। সেই বিপ্লব তো সরলেন। তবে তার বদলে যে এলেন, তাকে নিয়ে প্রথম দিন থেকে অসন্তোষ বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে।

এদিকে ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক বিষয়ে বিজেপি এবং তার জোটের অংশীদার-ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে৷ এই আবহে উচ্চশিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বৈতরণী পার করাতে পারেন কি না, এখন সেদিকেই নজর সবার৷
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস


আরো সংবাদ



premium cement