২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কান নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা, ১৩ প্রধান সন্দেহভাজন গ্রেফতার

ঘটনাস্থল ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ - ছবি : এএফপি

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সিয়ালকোট শহরে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে উন্মত্ত জনতা। শুক্রবারের এই ঘটনায় ১৩ প্রধান সন্দেহভাজনসহ মোট ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

নিহত ব্যক্তি ৪০ বছর বয়সী প্রিয়ান্থা কুমারা সিয়ালকোটে এক পোশাক কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী এই শ্রীলঙ্কান নাগরিক খেলাধুলার জন্য পোশাক তৈরি করা ওই কারখানাতে ১০ বছর যাবত কর্মরত ছিলেন।

পাঞ্জাবের প্রাদেশিক গভর্নরের প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুক্রবার ওই কারখানার দেয়ালে কিছু পোস্টার প্রিয়ান্থা কুমারা তুলে ফেলার পর প্রাথমিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই পোস্টারে রাসূল (সা.) এর নাম লেখা ছিলো।

অল্প কিছু সময় পরেই কারখানার মালিক ঘটনাস্থলে হাজির হন এবং বিরোধের মীমাংসা করেন। ঘটনার জন্য প্রিয়ান্থা কুমারা উপস্থিতদের কাছে ক্ষমা চান।

কিন্তু কুমারা ক্ষমা চাইলেও কারখানার কিছু কর্মী ম্যানেজারকে আক্রমণের জন্য তাদের সহকর্মীদের উত্তেজিত করে তোলে।

কিছুক্ষণ পরেই উন্মত্ত একদল জনতা এসে প্রিয়ান্থা কুমারাকে কারখানার ভেতরে পেটাতে শুরু করে। পরে তাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং তার লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শ্রীলঙ্কান এই নাগরিককে পেটানোর এবং তার লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে শনিবার পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী হাসান খাওয়ার লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১৩ প্রধান সন্দেহভাজনসহ মোট ১১৮ ব্যক্তি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

খাওয়ার জানান, ১৬০টি ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর সাহায্যে এই সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি জানান, পুলিশ যখন এই ঘটনা জানতে পারে, ততক্ষণে উন্মত্ত জনতা প্রিয়ান্থা কুমারাকে হত্যা করে।

এদিকে সিয়ালকোটের এই ঘটনাকে পাকিস্তানের জন্য 'লজ্জাজনক দিন' বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

শুক্রবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, 'সিয়ালকোটের ফ্যাক্টরিতে শ্রীলঙ্কান ম্যানেজারের ওপর আইন হাতে তুলে নেয়া ভয়াবহ এই আক্রমণ ও তাকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়ার দিনটি পাকিস্তানের জন্য লজ্জার। আমি নিজে এই তদ্ন্ত তদারক করছি এবং আইনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে যাতে দায়ীরা শাস্তি পায়, তাতে যেন কোনো ভুল না হয়।'

পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়েই ইসলাম অবমাননার জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। অপরদিকে দেশটিতে ইসলাম অবমাননা প্রতিরোধে 'ব্ল্যাসফেমি আইন' চালু রয়েছে। অভিযোগ করা হয়, ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে অনেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে এই আইন ব্যবহার করছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল ও ডন


আরো সংবাদ



premium cement