২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভালো থাকতে জার্মানি গিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে আফগানরা

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার আফগান দেশ ছেড়ে যান। - ছবি : ডয়চে ভেলে

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার আফগান দেশ ছেড়ে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। দেশ ছেড়ে জার্মানিতে আসা আফগানরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে দিন যাপন করছেন।

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করেন আব্দুল। দিনটি ছিল তার জীবনের ভয়াবহ কষ্টের। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করতে হয়েছিল তাকে। আফগানিস্তান ত্যাগের কয়েক সপ্তাহ পরেও কষ্টকর সেই স্মৃতি মনে আছে তার।

‘এখনো সেই ভয়াবহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি আমি। জানি না কিভাবে বেঁচে আসলাম,’ বলেন তিনি।

থাকার বৈধতা নিয়ে জটিলতা
বিমানে উঠার কিছুক্ষণ আগে এক জার্মান সেনা আব্দুলকে জানালেন যে, তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু দেশ ছেড়ে এসেও জটিলতা খুব একটা কমেনি তার। আব্দুলসহ আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে আসা আরো অনেক আশ্রয়প্রার্থীই দেশটিতে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এমন কয়েকজনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে। তারা আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে জার্মানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অনেকেই ছিলেন সাব-কন্ট্রাকটর আবার কেউ কেউ ছিলেন সরাসরি জার্মান সরকারের চাকরিতে নিযুক্ত।

আফগানিস্তান থেকে আসা এসব আশ্রয়প্রার্থীরা নানা কারণেই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এর মধ্যে আছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তজনিত জটিলতা, কাদেরকে জার্মান সরকারের সাবেক চাকরিজীবী বলা হবে তার জটিলতা আর সেই সাথে রয়েছে জার্মান সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা বড় সমস্যা
জার্মান সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার সমস্যাটি তালেবানদের ক্ষমতা দখলের আগেই দেখা গেছে। যেমন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কয়েকমাস ধরে আলাপ-আলোচনার পরেও কাদেরকে জার্মান সরকারের চাকরিজীবী বলা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে নিতে পারেনি।

প্রথমদিকের বলা হয় যে, যারা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য দুই বছর কাজ করেছে তাদেরকে জার্মান সরকারের চাকরিজীবী হিসাবে সুবিধা দেয়া হবে। এজন্য তাদেরকে নিজেদের উদ্যোগে জার্মানিতে আসতে হবে।

গত জুন মাসে, দেশটির প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে যারা জার্মান সরকারের জন্য কাজ করেছেন তাদেরকে জার্মান সরকারের চাকরিজীবী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

কিন্তু এতে বাধ সাধে দেশটির বাকি দুই মন্ত্রণালয়। কেননা, এমন সিদ্ধান্তের ফলে আফগানিস্তানে থাকা জার্মান কূটনীতিকদের স্থানীয় সহযোগীরা দেশত্যাগ করতে পারে। যার ফলে দেশটিতে তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।

এদিকে সরকারের পদক্ষেপ দেখে বোঝা যায় যে তালেবান যে এতো দ্রুত ক্ষমতা দখল করে নিবে তা তারা আন্দাজ করতে পারেনি। যে কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এসব জটিলতার পর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত জার্মানি ৫ হাজার ৪০০ আফগানকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। জার্মানিতে আসার পর বিমানবন্দরে তাদেরকে এন্ট্রি ভিসা দেয়া হয়। আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে আসাদেরও একই ধরনের ভিসা দিয়ে নিয়ে আসা হয়।

জটিলতার শুরু
এন্ট্রি পারমিট নিয়ে জার্মানিতে প্রবেশের পর আশ্রয়প্রার্থীদের বৈধভাবে থাকার বিষয়ে জটিলতা বাড়তে থাকে। এন্ট্রি ভিসা নামের যে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এটি বিশেষ ধরনের অনুমতি যা সাময়িকভাবে দেশটিতে থাকার বৈধতা প্রদান করে। সাময়িক এ সময়ের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থীরা দেশটিতে থাকার প্রয়োজনীয় ভিসা প্রদানের সব শর্ত পূরণ করছে কিনা তা দেখবে প্রশাসন। এরপর মানবিক বিবেচনায় তিন বছরের জন্য ভিসা প্রদানের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার কথা।

এন্ট্রি ভিসায় আশ্রয়প্রার্থীদেরকে কাজের অনুমতিও দেয়া হয়। তাছাড়া সব ধরনের সামাজিক সুবিধাও পেয়ে থাকেন তারা।

তবে, এন্ট্রি ভিসায় আশ্রয়প্রার্থীরা কী ধরনের সুবিধা পাবেন সেটি তাদেরকে স্পষ্ট করে বলা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আফগানদের অনেকেই ধরে নিচ্ছেন যে তারা ইতোমধ্যে দেশটিতে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার অনুমতি পেয়েছেন।

আশ্রয়প্রার্থী আব্দুলও ভেবে তিনে যেহেতু জার্মান প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন তাই তাকে জার্মানিতে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

দেশটিতে আসার চার সপ্তাহ পর যখন তাকে ভিসা অফিসে ডাকা হলো তখন চমকে উঠেন। তিনি ভাবলেন, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।

ভিসা অফিসে যাওয়ার সময় তিনি সাথে সব কাগজপত্র যেমন যে জার্মান প্রতিষ্ঠানের জন্য আফগানিস্তানে কাজ করতেন তাও নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আব্দুল বুঝতে পারলেন যে জার্মান প্রতিষ্ঠানে তার কাজের বিষয়টি সেখানে তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। বরং তাকে বলা হল যে, তিনি জার্মান সরকারের চাকরিজীবী ছিলেন না। আর তাই তাকে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে। ‘কেউ আমার কথা শুনল না,’ বলেন তিনি।

শুধু আব্দুলই নন, জার্মান সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতেন আফগানিস্তান থেকে আসা এমন অনেককেই আশ্রয়ের আবেদন করতে বলা হয়েছে।

‘শরণার্থী হিসেবে থাকতে চাইনি’
ডয়চে ভেলেকে আব্দুল জানান, ইমিগ্রেশন অফিসাররা শুধু তার কাগজপত্র বাতিলই করে দেননি বরং তাকে আশ্রয়ের আবেদনের জন্য বলতে লাগলেন। আশ্রয় আবেদন না করলে এখানকার শরণার্থীকেন্দ্রে থাকতে পারবেন না বলেও তাকে জানানো হয়।

এরপর তিনি আফগানিস্তানে জার্মানির যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতেন সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা তদবিরের পর ভিসা অফিস থেকে আব্দুলকে বলা হলো যে, তাকে মানবিক বিবেচনায় থাকার অনুমতি দেয়া হলো।

‘আমি আসলে এমনটা চাইনি,’ জানালেন আবদুল।

বল প্রয়োগ?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে আফগানিস্তান থেকে আসা অনেককে আশ্রয়ের আবেদনের জন্য বল প্রয়োগ করা হচ্ছে। ডয়চে ভেলের হাতে আসা এমন এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জার্মান সরকারের চাকরিজীবী হিসেবে তোমাদেরকে গ্রহণ করা হবে না। তোমরা যদি বল যে, আমি আশ্রয়ের জন্য আবেদন করব না তাহলে... আমরা তোমাদের রাস্তায় নামিয়ে দেব।’

তবে আফগানদের আশ্রয়ের আবেদন করতে জোর কারার এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সঠিক তথ্যের অভাবেও দুর্ভোগে পড়ছেন অনেক আফগান। ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আফগানিস্তান থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রথমে আশ্রয়ের আবেদন করার জন্য বলা হচ্ছে। আর তারপর বলা হচ্ছে যে তারা মানবিক ভিসার জন্য উপযুক্ত নন।

যদিও আফগানিস্তার থেকে আসা অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে তাদের মানবিক কারণ বিবেচনায় ভিসা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের যে সংজ্ঞা রয়েছে তার সীমাবদ্ধতাও আছে। ডয়চে ভেলের সন্ধানে এমন অনেককেই পাওয়া গেছে যারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের জন্য কাজ করতেন কিন্তু ভিসা পাওয়ার সব শর্ত পূরণ করতে পারছেন না। এমনই একজন মোহাম্মদ। জার্মান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড’র জন্য আফগানিস্তানে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু জার্মানিতে তার থাকার অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেল।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল