২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেরালায় বন্যায় ২৬ জনের মৃত্যু, পানিবন্দী বহু মানুষ

কেরালায় বন্যায় ২৬ জনের মৃত্যু, পানিবন্দী বহু মানুষ - ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ ভারতের কেরালায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পর নদীগুলোর কূল ছাপিয়ে ওঠা ব্যাপক প্লাবনে অন্তত ২৪জনের মৃত্যু হয়েছে, শহর ও গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন শিশু। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছে, ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

বহু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে এবং কেরালা রাজ্যের কোত্তাইয়াম জেলায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকায় তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বন্যার পানিতে বাস প্লাবিত হওয়ায় আটকে পড়া যাত্রীদের সেখান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে।

রাজ্যের সবচেয়ে উপদ্রুত দুটি জেলা হল কোত্তাইয়াম এবং ইডুক্কি। কয়েকদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক জায়গায় প্রাণঘাতী ধস নেমেছে। বহু ছোট ছোট গ্রাম সংযোগকারী সেতু স্ফীত হয়ে ওঠা নদীর পানির তোড়ে ভেসে গেছে।

উদ্ধারকারী দলগুলো নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে। ইডুক্কিতে একজন আর কোত্তাইয়ামে একজনের খোঁজ এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।

কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে মানুষ আটকা পড়ে আছে, সেখানে তাদের সাহায্যে ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মী পাঠানোর জন্য সেনা বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং কেরালা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ১৮৪টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে আট হাজারের ওপর মানুষকে খাদ্য, বিছানা ও কাপড়চোপড় দেয়া হচ্ছে।

ঘরবাড়ি ও ফসল হারানো মানুষদের জন্য সরকার আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন কেরালার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন।

রাজ্যের বাঁধগুলো খুলে দেয়া হবে কিনা সরকার সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দিয়েছে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির হাতে।

কেরালা রাজ্যে ২০১৮ সালে অতিবৃষ্টির কারণে একশো বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় মারা গিয়েছিল ৪০০ মানুষ। তখন নিচু এলাকায় থাকা মানুষজনকে আগে থেকে সতর্ক না করে বাঁধগুলো খুলে দেয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই ভিজায়ান মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের বলেছেন এই কমিটি ঠিক করবে কোন বাঁধগুলো খোলা প্রয়োজন।

‘জেলা কর্মকর্তাদের আগে থেকে জানানো হবে কোন বাঁধগুলো খোলা হচ্ছে যাতে স্থানীয় মানুষরা সরে যাবার জন্য যথেষ্ট সময় পান,’ মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে কেরালা রাজ্যে আগামী আরো তিন থেকে চারদিন ভারী বৃষ্টিপাত হবে।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি
আল্লেপ্পেই শহরের কর্মকর্তারা বলেছেন শহরের পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। আল্লেপ্পেই শহরে খাল ও খাঁড়ির বিস্তীর্ণ নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং এলাকাটি বন্যাপ্রবণ। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে।

কোত্তাইয়ামে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা নানী ও তিন শিশুসহ ছয় সদস্যের একটি পরিবারের বাড়ি বন্যার তোড়ে ভেসে যাওয়ায় পরিবারের সবাই মারা গেছেন বলে জানাচ্ছে পিটিআই বার্তা সংস্থা। ইডুক্কি জেলায় বাড়ির ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে আট, সাত ও চার বছরের তিনটি শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কোল্লাম এবং উপকূলীয় শহরগুলোর রাস্তাঘাট বন্যায় ভেসে যাওয়ায় এবং গাছপালা উপড়ে পড়ায় মাছ ধরার জেলে নৌকা ব্যবহার করে জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

রোববার কোত্তাইয়ামে দোতলা একটি পাকা বাড়ি নদীর প্রবল স্রোতে উপড়ে কীভাবে তলিয়ে গেছে তার নাটকীয় ছবি এই টুইটারে শেয়ার হয়েছে।

কেরালা বন্যাপ্রবণ কেন?
কেরালায় ভারী বৃষ্টিপাতে বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এই রাজ্যে আগে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রচুর জলাভূমি এবং হ্রদ ছিল, যেগুলো বন্যার বিরুদ্ধে একটা রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করত। কিন্তু ক্রমশ নগরায়ন ও ভবন নির্মাণের কাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব জলাভূমি বিলীন হয়ে গেছে।

এই রাজ্যে ২০১৮ সালের বন্যায় প্রাণ হারিয়েছিল ৪০০ মানুষ। রাজ্যটিতে শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ওই বন্যায় দশ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

ওই একই বছর কেন্দ্রীয় সরকারের এক মূল্যায়নে দেখা যায় কেরালা রাজ্যের মধ্যে দিয়ে ৪৪টি নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং এই রাজ্য সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ দশটির মধ্যে একটি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল