২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মরছে শিশুরা, আতঙ্ক পশ্চিমবঙ্গে

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্তদের নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। - ছবি : হিন্দুস্থান টাইমস

শিশু ও বাচ্চাদের সাধারণ জ্বর বা খিঁচুনি দিয়ে জ্বর হচ্ছে। প্যারাসিটামলেও জ্বর নামছে না। পেট ব্যথা বা পেট খারাপও হচ্ছে। করোনার কিছু উপসর্গের সাথে এই জ্বরের উপসর্গ মিলে গেলেও, বাচ্চাদের করোনা হয়নি। ডেঙ্গুও নয়। তাদের করোনা ও ডেঙ্গুর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাদের অন্য বেশ কিছু পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চারটি শিশু মারা গেছে। একজন কোচবিহারের এবং তিনজন জলপাইগুড়ির। বুধবারও জলপাইগুড়িতে একটি তিন মাসের শিশু মারা গেছে। উত্তরবঙ্গের চার জেলা জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ারে ৫৩৩টি বাচ্চা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি। এছাড়া হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয়ে শয়ে বাচ্চা আসছে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও বেশ কিছু বাচ্চা জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে। মঙ্গলবারও সাতজন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া নীলরতন সরকার ও আরজিকর হাসপাতালেও কিছু বাচ্চা জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে। কলকাতার আশপাশের জেলাগুলোতেও এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বাচ্চারা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দল
রাজ্যে এই জ্বর ছড়াতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। সেখানে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও মেডিসিন, জনস্বাস্থ্য, ভাইরোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অজয় বিশ্বাস বলেছেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে জ্বরের খবর আসছে। তাই এই জ্বর কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা বিশেষজ্ঞ কমিটি দেখবেন। তারপর তাদের সাথে আলোচনা করা হবে।’ তিনি বলেছেন, ‘জ্বরের কারণ জানতে আক্রান্তদের নানা ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, বিশেষজ্ঞ কমিটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরই এই জ্বরের কারণ বোঝা যাবে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, রেসপিরেটরি সেনসিটায়াল ভাইরাসে (আরএসভি) আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুরা এই ভাইরাসের মোকাবিলা করতে পারে না। তছাড়া বেশ কিছু শিশু ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছে।

চিকিৎসকদের মত
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘ভাইরাস থেকেই এই জ্বর হচ্ছে। তবে কোন ভাইরাস তা এখনো জানা যায়নি। প্রচুর বাচ্চা এতে আক্রান্ত হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে শুরু হয়ে তা কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে এসেছে। তবে দুই জায়গাতে ভাইরাস একই কি না, তা বলতে পারছি না।’

দিলীপ সেনগুপ্তের মতে, ‘এই জ্বর থেকে মাল্টি অর্গান ফেলিওর হচ্ছে। সেজন্যই এটা মারাত্মক।’

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের শিশুচিকিৎসা বিভাগের সাবেক প্রধান মৃদুলা চট্টোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সংবাদকে বলছেন, ‘এটা নতুন ভাইরাস কি না, তা বুঝতে একটু সময় লাগবে।’

ওই হাসপাতালের ভাইরাস রিয়ার্চ অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসা-বিজ্ঞানী শান্তনু হাজরা জানিয়েছেন, তারা জলপাইগুড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন। কিছু বাচ্চার খিঁচুনি দিয়ে জ্বর আসছিল। তাই অ্যাকিউট এনসেফেলাইটিস সিনড্রোমের পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। রক্ত পরীক্ষা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের জ্বর ছোঁয়াচে হয়। তাই সাবধানে থাকতে হবে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরুণ সিং আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘করোনাকালে অন্য রোগগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়নি। তাই জ্বরের অন্য কারণগুলোকে উপেক্ষা করা যাবে না। তাছাড়া লকডাউনে ঘরবন্দি থাকায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গেছে।’

স্বস্থ্য মন্ত্রণালয় চিন্তিত
রাজ্যে শিশু ও বাচ্চাদের মধ্যে এই জ্বর ছড়িয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিন্তিত। তারা বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে। এই কমিটির সাথে কথা বলে তারা জ্বরের মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চায়।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement

সকল